ইবাদতআখলাক ও আত্মশুদ্ধিঅন্যান্য ইবাদত​

মুক্তির রজনী, অর্ধ-শাবানের রাত্রে কী করবেন? 

আমাদের অন্যান্য প্রবন্ধে অর্ধ-শাবানের রাত্রটি সম্পর্কিত হাদীস, করণীয় ও বর্জনীয় আলোচিত হয়েছে। সেগুলো দেখে পড়ে নেওয়ার অনুরোধ রইল।

চন্দ্র রাত তো শুরু হয়ে গেছে সূর্যাস্তের পর থেকেই; সুবহে সাদিক পর্যন্ত অর্থাৎ যখন ফজরের ওয়াক্ত হয়, তার আগ পর্যন্ত চন্দ্র রাত। রাতকে তিন ভাগ করলে শেষাংশ অধিক মর্যাদাপূর্ণ। তাহাজ্জুদের উত্তম সময়। কিন্তু আমরা দুর্বল। অধিকাংশ সময়, ঘুমিয়ে পড়লে আমরা একবারে ফজর পড়তেই উঠি!

অতএব ফযীলতপূর্ণ রাতে আমাদের জন্য উত্তম এটাই যে, রাতের প্রথমাংশে আমরা কিছু ইবাদত করে তারপর শেষ রাতে ওঠার নিয়্যতে ঘুমিয়ে পড়ব। এতে যদি কোনো কারণে শেষ রাতে উঠতে না পারি রাতটি যেন ইবাদতশূণ্য না অতিবাহিত হয়! আর ফজরের নামায আদায়, তা তো ফরয, সবচেয়ে জরুরি।

অর্ধ-শাবানের রাত্রে এশার পর কিছু নফল নামায আদায় করুন। নামাযের পর  দীর্ঘ সময় দোআ করুন। কিছু সময় তেলাওয়াত, তাসবীহ করে আবার নফল  নামায পড়তে পারেন। আবারও দোআ করুন। বেশি করে ইস্তেগফারও পড়ুন। দোআর আগে পরে প্রিয় নবীজি ﷺ-এর আল্লাহ তাআলার কাছে খাঁটি তওবা করুন। দোআর জন্য মুনাজাতে মাকবূল একটি অপূর্ব বই! তারপর শেষ রাতে আবার উঠুন, ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার আগে — সুবহে সাদিকের আগে। যতটুকু সম্ভব আবার কিছু নফল নামায আদায় করুন। তাসবীহ-যিকির করুন। তেলাওয়াত করুন। যার পক্ষে যেটি যতটুকু সম্ভব। তবে দোআ-তওবা-ইস্তেগফার অবশ্যই করুন! ফজরের নামাযের ওয়াক্ত পর্যন্ত এভাবে নফল ইবাদতে মশগুল থাকুন। তারপর ফজরের ওয়াক্ত অনুযায়ী নামায আদায় করে আরাম করুন ইনশাআল্লাহ।

রমযানও সামনে। তাই এখন তো তওবার উত্তম সময়! মুমিন তো এমনিতেই তওবাকারী হয়ে থাকে। এ সময় তওবা-ইস্তেগফার বৃদ্ধি করুন। বিশেষ করে অর্ধ-শাবানের রাত্রে নিজেকে গুনাহ থেকে পাক-সাফ করে নেওয়ার আন্তরিক চেষ্টা করুন। খাঁটি তওবা করার জন্য গুনাহের উপর লজ্জিত হতে হবে, গুনাহ ত্যাগ করতে হবে ও ভবিষ্যতে সেই গুনাহ না করার দৃঢ় সংকল্প করতে হবে। আল্লাহ তাআলার কাছে গুনাহ ছাড়ারও তাওফীক চাইতে হবে। তবে আমাদের যেটা বেশি হয়, গুনাহর মাধ্যমগুলো ত্যাগ করি না! যেমন খারাপ সঙ্গী, আর এমন সব মাধ্যম, হোক জায়গা বা জিনিস যা গুনাহর প্রতি আমাদের আহ্বান করে — সব ছাড়তে হবে। না হলে তওবা খাঁটি হবে না। আমার খাঁটি চেষ্টাই বলে দেবে আমার তওবা কতটুকু খাঁটি।

অর্ধ-শাবানের রাত্রে যদি তওবা করে পাক-সাফ হওবা যায়, এটি অনেক বড় এক নেয়ামত! রমযানের আগেই নিজেকে পাক-সাফ করে নেওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে মানুষের হক নষ্ট করে থাকলে তার হক ফিরিয়ে দিতে হবে! কারো প্রতি জুলুম করে থাকলে তার থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। যদি এই মুহূর্তে সেটা সম্ভব না হয়, নিয়ত করে ফেলতে হবে যে আমি অমুকের হক অতি অবশ্যই আদায় করব ইনশাআল্লাহ। অমুকে কাছে অমুক ব্যাপারে অবশ্যই ক্ষমা চাব ইনশাআল্লাহ। মনে রাখতে হবে যে, ফাঁকি মানুষকে দেওয়া যাবে, আল্লাহ তাআলাকে নয়!

একটি রাত জেগে ইবাদত করে তারপর যদি আমরা যেই কি সেই হয়ে যাই তা হলে বুঝতে হবে যে আমার ঈমান-আমলের অবস্থা অধঃপতিত হয়েছে। নিজেদের প্রতি সবাই রহম করি! নফল ইবাদত কম হোক, কিন্তু সারা বছর ফরয নামায আদায় থেকে বিমুখ হওয়া মুসলমানের কাজ নয়! যদি পার্ট টাইম নামাযী হই, তাহলে আমরা আল্লাহ তাআলার সামনে দাঁড়িয়ে কী জবাব দেব?! আল্লাহ তাআলা তো আমাদের পার্ট টাইম পালেন না! তিনি তো এত অসংখ্য-অজস্র নেয়ামতরাজি দিয়ে রেখেছেন আমাদেরকে — একটু ভাবি যে, আমাদের করণীয় কী(?)

আমরা আল্লাহ তাআলার বান্দা। আমরা তাঁর মুখাপেক্ষী। ইবাদত তাঁর হক। তিনি যে আমাদেরকে ইবাদতের বিনিময়ে জান্নাত দেবেন, দুনিয়াতে শান্তি ও বরকতের রিযিক দেবেন, জাহান্নমের শাস্তি থেকে বাঁচাবেন — এগুলো তো সব তাঁর বাড়তি দান! আমাদের উচিত মৃত্যুর পূর্বেই সজাগ হয়ে তাঁর পথে চলার চেষ্টা করতে থাকা। যে যেই গুনাহে বেশি অগ্রসর হয়েছি এখনই সময়, খাঁটি তওব করে আল্লাহ তাআলার দিকে ফিরে যাই ইনশাআল্লাহ!

আল্লাহ তাআলা বান্দার মনে কথা জানেন, সব দেখেন! খাঁটি তওবা করে অর্ধ-শাবানের রাত্রটিকে আমাদের ক্ষমার মাধ্যম হিসেবে কবুল করে নিতে পারি! আল্লাহ তুমি সহায় হলে কিছুই কঠিন নয়। (আমীন)

Last Updated on September 26, 2023 @ 10:17 am by IslamInLife

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: you are not allowed to select/copy content. If you want you can share it