তারাবীহ কত রাকাত: সতর্ক হোন

আমাদের বর্তমান সময়ে ফেতনার কথা কার অজানা? কোনো একজন মুমিনের জন্য অনুচিত হবে যে সে এমন ক্রমবর্ধমান ফেতনার সময়ে সতর্কতা অবলম্বন করবে না, কিভাবে সে ঈমান বাঁচাবে তার কোনো ফিকির করবে না। যদি একজন মুমিন সঠিক ও সত্যকে জানার ব্যাপারে  অবহেলা করে ও এমন সব বিষয় আঁকড়ে ধরে যা দ্বীনের মধ্যে মনগড়া নতুন কথা, তাহলে এর দায়-দায়িত্ব তার নিজের উপরও বর্তাবে, শুধু পথভ্রষ্টকারী আহ্বানকারীদের উপরই বর্তাবে না। এমন ব্যক্তি ক্ষতির সম্মুখীন হবে। দ্বীনের মৌলিক বিশ্বাস ও বিষয়াদিতে মনগড়া চলার ক্ষতি সমূহের মধ্যে ‘ঈমান হুমকিতে পড়ে যাওয়া’ হল সবচেয়ে বড়ক্ষতি! এ কথা আমরা কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারি না।

বিগত কয়েক বছরে যেসব বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক করে অনেকে ঈমানহারা হয়েছে-হচ্ছে তারা এমন বিষয়ে প্রশ্ন উঠিয়েছে যার নজির হাজার বছরের ইসলামের ইতিহাসে নেই! তারই একটি হল, তারাবীর সালাত আট রাকআত। কুরআন-সুন্নাহ সাহাবায়েকেরাম থেকেও যারা বেশি বোঝার দাবী করেছে, হোক সে দাবী তারা মুখে না করুক, তারা ব্যতীত কেউই তারাবীর রাকআত সংখ্যা আট রাকআত বলেননি। ঐ ব্যক্তি কারা যারা মুখে দাবী না করলেও নিজেদেরকে সাহাবায়েকেরাম থেকে অধিক বুঝনেওয়ালা মনে করেন? সুস্পষ্টভাবে বলতে গেলে, তারা হল ইজমায়ে সাহাবা অস্বীকারকারীগণ। ঠিক যেভাবে সাইয়্যেদুনা আবু বকর সিদ্দীক রাদিআল্লাহু আনহুর খেলাফত অর্জনটি ইজমায়ে সাহাবার মাধ্যমে ছিল, কোনো মুমিন তা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে না, যারা এমন বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে ও ইজমায়ে সাহাবাকে অস্বীকার করে, তারা তাদের ঈমান নষ্ট করেছে (যেমন: শিয়াগণ। তারা সাইয়্যেদুনা আবু বকর সিদ্দীক রাদিআল্লাহু আনহুর খেলাফত অস্বীকার করে)। তারাবীর বিশ রাকআত অস্বীকারকারীদের একই অবস্থা।

হে মুসলমান ভাই ও বোন!

আপনি বিশের কম যত রাকআত তারাবীহই পড়বেন, বিশ রাকআত তারাবীকে অস্বীকার করতে যেয়েন না। তাহলে আপনি ইজমায়ে সাহাবাকে অস্বীকার করে বসবেন। যা কিনা খতরনাক! আমল কম করা অর্থাৎ আমল ছেড়ে দেওয়া এক জিনিস। আর কুরআন অথবা সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত আমল অস্বীকার করা আরেক জিনিস। ইজমায়ে সাহাবার দলীল হাদীস-সুন্নাহ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত। এটিকে অস্বীকার করলে হাদীস-সুন্নাহকেই অস্বীকার করা হবে। দ্বীনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদির সমাধান সাহাবা যুগ থেকে এসেছে। শুধু কুরআন দিয়ে যেমন পুরো দ্বীন বোঝা যায় না, শুধু হাদীস দিয়ে পুরো দ্বীন বোঝা যায় না। সাহাবায়েকেরামের জীবনী, তাদের কথা ও কাজ দেখার প্রয়োজন হয়। শরীয়তের হুকুমে আহকামের অনেক কিছু এভাবে প্রমাণিত হয়ে আজ পর্যন্ত চলে এসেছে। যারা বলছে যে, “হাদীসে এমন আছে”, তারা বিচ্ছিন্ন মতাবলম্বী। নবী যুগ থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত যেভাবে দ্বীন পৌঁছেছে সেই পথ ও মতের থেকে তারা বিচ্ছিন্ন পথ ধরেছে।

ঐ আলেমগণের সঙ্গে থাকুন যারা ইসলামের সোনালী যুগ থেকে নিয়ে চলে আসা মূলনীতি ও আমলের ওপর অটল। গবেষণা করলেও তারা বিশ্বস্ত বর্ণনাধারা, সাহাবা, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন, এভাবে মুজতাহিদ ইমামগণ ও তাদের শাগরেদগণের নীতিতে গবেষণা করেন। এই নীতি এক ও অভিন্ন। এ নীতি হঠাৎ করে দুই চারশ বছরের মধ্যে আসা বা উদ্ভাবিত কোনো নীতি নয়! অতএব সতর্ক অবস্থান হল, দ্বীনের সিদ্ধান্ত কাদেরটি অগ্রগণ্য, যুগের পরিবর্তনে বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে কারা সুযোগ্য, সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাপকাঠি কী এসবই নবী যুগ থেকে চলে আসাটি অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। এ থেকে বিচ্যূত ও বিচ্ছিন্ন মত ও পথ যত মুখরোচক ও যৌক্তিক লাগুক, তা থেকে পরিপূর্ণভাবে নিজেকে সতর্ক রাখুন। যারা বলে যে কুরআন, হাদীস, সুন্নাহর থেকে সাহাবা ও পরবর্তী মুজতাহিদ ইমামের নীতির মধ্যে পার্থক্য আছে, তাদের কথা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তারা মাযহাবকে দল বলে, নিজেদের মত ও সিদ্ধান্তকে বলে প্রশস্ততা ও সঠিক! তাদের কথার ভিত্তি তাদের গুটি কয়েক শায়খ, নিজস্ব গবেষণাধারা। তারা দ্বীনের শত্রু। তারাই দ্বীনের মধ্যে অনেক নতুন বিষয়ের উদ্ভাবক। নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তারাই উম্মতের মধ্যে ফ্যাসাদসৃষ্টিকারী ও উম্মতকে দলে বিভেদকারী। সর্বোপরি, তারা সাধারণ মানুষকে উলামায়েকেরাম থেকে বিমুখকারী। তারা নিজেদের দিকে, নিজেদের গবেষণা ও চিন্তাধারা (বলাই হয়েছে উপরে যে, তারা বিচ্ছিন্নতাবাদী), বিশ্বাস ও আমলে দিকে আহ্বানকারী পথভ্রষ্ট — হোক দেখতে আরবী জানা অনেক বড় পন্ডিত, নামে শায়খ অথবা ইসলামিক স্কলার, আরবের বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করা অথবা সেখানে অবস্থানরত। তাকওয়া ও ইলমের মূল মাপকাঠি এগুলোর একটিও নয়।

শেষ কথা..

ইজমায়ে সাহাবাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার কোনো অবকাশ নেই। ইজমায়ে সাহাবা অস্বীকার ঈমান বিধ্বংসী কাজ।

আর তারাবী একটি সুন্নাহ সালাত। কেউ না পড়লে সে সুন্নতে মুয়াক্কাদা ছেড়ে দেওয়ার জন্য গুনাহগার হবে। যদি তারাবী সালাত মসজিদে একটি জামআত আদায় করে, অন্যান্যরা মসজিদে জামআতে আদায় করুক অথবা বাসায়, শরীয়তে অবকাশ আছে। আবার এই সালাতে কুরআন খতমের বিষয়টি এতটা গুরুত্বপূর্ণ নয় যে, তারাবীর নামাযে কুরআন খতম শর্ত, না করলে সালাত আদায় হবে না!

তাহলে শুধু আট রাকআত তারাবী পড়া অধিক আরাম ও সহজ বা নফসের অনুকূল বলে ‘ইজমায়ে সাহাবা দ্বারা সুপ্রমাণিত ও যুগ যুগ ধরে চলে আসা বিশ রাকআত তারাবী’কে অস্বীকারের মতন এত দুঃসাহস কোনোভাবেই কোরেন না! এত বড় ফাঁদে পা দিয়েন না!! বলাই তো হল, আপনি ‘কম’ আমল করবেন সেটা ভিন্ন ব্যাপার। ইজমায়ে সাহাবার বিপরীতে অবস্থান গ্রহণ করে তর্ক-বিতর্ক, মিথ্যা ও ভুল দলীর পেশ, আট রাকআত প্রতিষ্ঠার অপপ্রচেষ্টা, রাকাত সংখ্যা বিকৃত করা — এ জাতীয় কাজ কখনো করতে যেয়েন না! তাতে ক্ষতি কেবল নিজেরই হবে। আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মৃত্যু এই বিশ্বাসে হলে তা হবে অপুরণীয় ক্ষতি!

error: you are not allowed to select/copy content. If you want you can share it