আখলাক ও আত্মশুদ্ধিচিন্তার খোরাক​

মনের অনুকূলে নয়, মালিকের পথে চলার মধ্যেই সফলতা

أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ وَأَضَلَّهُ اللَّهُ عَلَى عِلْمٍ وَخَتَمَ عَلَى سَمْعِهِ وَقَلْبِهِ وَجَعَلَ عَلَى بَصَرِهِ غِشَاوَةً فَمَن يَهْدِيهِ مِن بَعْدِ اللَّهِ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ

অর্থ: আপনি কি তার প্রতি লক্ষ্য করেছেন, যে তার খেয়াল-খুশী কে স্বীয় উপাস্য স্থির করেছে? আল্লাহ জেনে শুনে তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, তার কান ও অন্তরে মহর এঁটে দিয়েছেন এবং তার চোখের উপর রেখেছেন পর্দা। অতএব, আল্লাহর পর কে তাকে পথ প্রদর্শন করবে? তোমরা কি চিন্তাভাবনা কর না? সূরা জাসিয়া: ২৩

ভাই ও বোনেরা!

খেয়াল-খুশি মতন মুমিন চলে না। এজন্যই হাদীসে মুমিনের দুনিয়াকে ‘জেলখানা’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। জেলখানা-কয়েদখানায় মানুষ যা ইচ্ছা করতে পারে না। মুমিন পার্থিব জীবনকে আল্লাহ তাআলার পথে অতিবাহিত করে সফল হওয়ার প্রচেষ্টা করে থাকে।

আমাদের চেষ্টা অবশ্য অতি ক্ষুদ্র। অনেক ত্রুটিপূর্ণ। আর আল্লাহ তাআলার রহমত অশেষ-অসীম। তাঁর কোনোকিছুর প্রয়োজন নেই। আমরা তাঁর ইবাদত করি বা না করি — তাঁর কোনো লাভ বা ক্ষতি কিছুই হয় না। তিনি আমাদেরকে যা করার আদেশ করেছেন তা মানার মধ্যে আমাদেরই সফলতা, সার্থকতা। তা লঙ্ঘনে ক্ষতি আমাদেরই।

একটি হাদীসে এসেছে, যদি কোনো ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য সারাটি জীবন সেজদায় পড়ে থাকে, কেয়ামতের দিন তার কাছেও নিজের আমলকে তুচ্ছ ও নগণ্য মনে হবে। বাস্তবিকই, আল্লাহ তাআলার নেয়ামতরাজির কাছে আমাদের ইবাদত-বন্দেগীর কোনো মূল্য নেই! এটি তাঁরই রহমত যে তিনি আমাদের আমলগুলোকে দয়া করে কবুল করেন।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আদেশ-নিষেধ করে দুনিয়ার পরীক্ষা ক্ষেত্রে ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি বান্দার অন্তর দেখেন। চেষ্টা-সাধনা দেখেন। বান্দা যদি তার সাধ্য অনুযায়ী আন্তরিকভাবে আল্লাহ তাআলার আদেশ-নিষেধ মানতে চেষ্টা করে, আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হন।

বড় থেকে বড় গুনাহগার খাঁটি তওবা করে আল্লাহওয়ালা হয়ে যায়। এটি আল্লাহ তাআলার রহমতেই সম্ভব। গুনাহগার যে খাঁটি তওবা-অভিমুখী হয়েছে এটিই আল্লাহ তাআলার রহমত প্রাপ্তির  অন্যতম কারণ। নেক কাজ আল্লাহ তাআলার রহমতকে আকর্ষণ করে। মানুষকে আল্লাহ তাআলা ভালো ও মন্দ — উভয় পথে চলার শক্তি দিয়েছেন। আর আদেশ করেছেন ভালো পথ গ্রহণ করতে। নিষেধ করেছেন মন্দ পথ গ্রহণের। আমাদের উচিত ভালো পথটি গ্রহণ করা, মন্দটা ত্যাগ করা।

আল্লাহ তাআলা তওবাকারীকে ভালোবাসেন (দেখুন: সূরা বাকারা ২২২)। আমরা প্রত্যেকে খাঁটি তওবা করে তাঁর ভালোবাসার পাত্র হতে পারি! গুনাহর পরিবেশ ছেড়ে দিতে হবে। যেসব সঙ্গ আমাকে গুনাহর দিকে টানে সেগুলি ত্যাগ করতে হবে। যেসব জিনিস আমাকে গুনাহর দিকে টানে সেগুলিও ছাড়তে হবে। ভালো মানুষদের সঙ্গে নিয়মিত ওঠাবসা করতে হবে। ভালো পরিবেশে বার বার যেতে হবে। এ জাতীয় সাধনায় অন্তর পরিশুদ্ধ হতে থাকে। সত্যবাদিতার গুণ অর্জিত হয়। চরিত্র ঠিক হয়। কুচিন্তা দূর হয়। অহেতুক ভাবনা আর খেয়াল দূর হতে থাকে। ভালো কথা, কাজ ও জিনিসের দিকে মনোযোগ, চিন্তা, চেতনা ধাবিত হয়। নেক কাজে মন বসে। নেক কাজে শান্তি-স্বস্তি মিলে। সঠিক পথে সাধনা করা সহজ হয়ে যায়। গুনাহর কাজের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হয়। আল্লাহ তাআলার পথে চলার সৌভাগ্য অর্জিত হয়!

সিদ্ধান্ত নিন। কী করবেন, কেন করবেন। মৃত্যু পরবর্তী জীবন চিরস্থায়ী ও পরিপূর্ণভাবে বিনিময় পাওয়ার স্থান। সেটিই আখেরাতের জীবন। দুনিয়ার কাজের কর্মফল বা পরিণতি ভোগের চিরস্থায়ী জায়গা! কেউ চাইলে পার্থিব জীবনে অল্প সময় মন মতন চলে কিছু আনন্দ উপভোগ করতে পারে, কিন্তু পার্থিব জীবনের অবস্থা তথা মৃত্যু সুনিশ্চিত।

মনমতন চলা মানে হল অস্থিরতা আর অনিশ্চয়তার পথ গ্রহণ করা। সেচ্ছাচারী জীবনে আজ এটা ভালো লাগে তো কাল ওটা। আজ এদিকে মন বসে তো কাল ওদিকে। এভাবে প্রকৃতপক্ষে মন আর ভরে না! শান্তির সন্ধান আর শেষ হয় না। এক পর্যায়ে মানুষ অস্থির হয়ে উঠে। কিন্তু কোনো সমাধান খুঁজে পায় না। এভাবে যত বেশি দিন মানুষ চলবে তত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সে। আল্লাহ না করুন, যদি হঠাৎ এ অবস্থায় মৃত্যু চলে আসে, সে অনেক বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে যায়!!

ইসলাম শেখায় মানা। মৌলিকভাবে আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল ﷺ-কে মানা। এজন্যই আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল ﷺ কে মান্যকারীগণকে মানতে হয়। আমরা মনমতন চললে মনকে মানা হল। অসৎ সঙ্গীকে মানলে, অসৎ পথে চলা হল। এসব বিপজ্জনক নয় তো আর কী?!

নিজেকে এভাবে প্রশ্ন করতে হবে, কেন আল্লাহ তাআলা ও তাঁর ﷺ-কে মানছি না? আর কেন আল্লাহ তাআলা ও তাঁর ﷺ-কে মান্যকারী নিঃস্বার্থ আলেমগণকে মানছি না? আসুন মনের কামনা-বাসনাকে ত্যাগ করে সফলতার রাজপথ ধরি!

ওপরে, সূরা জাসিয়ার ২৩ নম্বর আয়াতে দেখেছেন তো কী বলা হয়েছে?! খেয়াল-খুশি কে যে কিনা স্বীয় উপাস্য স্থির করেছে, তার জন্য পথ বন্ধ হয়ে যাবে!

এমন জীবন গড়তে আমি চাই না

মনের পথে চলে ধ্বংস হব

চাই গো তোমার সে পথ যাতে চলে

ধন্য চির ধন্য আমি রব!

Last Updated on September 26, 2023 @ 10:17 am by IslamInLife

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: you are not allowed to select/copy content. If you want you can share it