পারিবারিক জীবন

আপনার সন্তানকে যা শিখাচ্ছেন, সেটাই আপনার পুঁজি হচ্ছে

কখনো চিন্তা করেছেন যে, আপনি পৃথিবীতে কি রেখে যাচ্ছেন? যারা বুদ্ধিমান তারা বিশেষভাবে এই চিন্তা করবে। আজ আমাদের বিবেক লোপ পাওয়ার কারণে বাড়ি-গাড়ি, টাকা-পয়সা – এগুলো জীবনের মূল লক্ষ্য বানিয়েছি। এগুলোর বিনিময়ে পৃথিবীতে যে শান্তি চেয়েছে তাকে জিজ্ঞেস করুন, সে শান্তির কত ভাগ পেয়েছে? আমরা বলি না – এগুলোর কোনো প্রয়োজন নেই। বরং এগুলোর প্রয়োজন তো মানুষের সাথে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, যে জিনিসের মূল্য যতটুকু সে জিনিসকে ততটুকু মূল্য দেওয়া উচিত। এগুলির সেবা-যত্ন ও আয়ের পেছনে পুরো জীবন ও শ্রম দিয়ে দিব, নাকি আরো কিছু করণীয় ছিল?

মুমিন সব চিন্তা ও প্রচেষ্টার প্রারম্ভে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিকে দেখে। যদি কোনো কাজে আল্লাহ তাআলাই অসন্তুষ্ট হন, তাহলে আর কী লাভ? তাহলে কেবল লোকসানই লোকসান। এটাই একজন মুমিনের দৃঢ় বিশ্বাস। ঈমান একজন মুমিনকে অনেক কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে, তেমনি এই ঈমানই তাকে অনেক কাজ থেকে রাখে বিরত।

আল্লাহ তাআলা মানুষকে সন্তান-সন্ততি দান করেন। সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের অন্যতম এক পরীক্ষা। আল্লাহ তাআলা স্বয়ং কুরআনেই বলছেন:

وَاعْلَمُواْ أَنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلاَدُكُمْ فِتْنَةٌ وَأَنَّ اللّهَ عِندَهُ أَجْرٌ عَظِيمٌ

অর্থ: জেনে রেখ, তোমাদের সম্পদ ও তোমাদের সন্তান-সন্ততি তোমাদের জন্য এক পরীক্ষা। আর মহা পুরুষ্কার রয়েছে আল্লাহ তাআলারই কাছে। সূরা আনফাল: ২৮

যে মুসলমান, সন্তানকে দ্বীনি শিক্ষা দেবে, আখেরাতের জন্য তৈরি করবে, রাসূলে কারীম  ﷺ এর সুন্নত-কে মুহব্বত করতে ও তদনুযায়ী আমল করার অনুপ্রেরণা গড়ে তুলবে, তার জন্য সন্তান মুবারক। এই পার্থিব জীবনে হোক বা পরকালীন – উভয় জগতে ঐ ব্যক্তির জন্য তার সুসন্তান হবে বিরাট নেয়ামত ইনশাআল্লাহ। এমন মাতাপিতা বড় সৌভাগ্যবান। মাতাপিতার মৃত্যুর পরও এই নেক সন্তান তাদের জন্য উপকার পৌঁছাবে। এই সন্তানের নেক আমল হবে মাতাপিতার জন্য মস্ত বড় পুঁজি। কেয়ামতের দিন নেক সন্তানের মাতা-পিতারা দেখবে যে ঐ পুঁজি কত বিশাল ও ব্যাপক উপকারের বিনিময়রূপে তাদের কাছে প্রত্যাবর্তন করেছে।

আমরা যেন সন্তান-সন্ততিকে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম বানাই। জীবনে নিজে যে নেক করতে পারিনি সেটা সন্তানের মাধ্যমে করিয়ে নিই। নিজে আল্লাহ তাআলার কালাম হিফয করতে পারিনি, সন্তানকে হাফিযে কুরআন বানাই; নিজে আলেম হতে পারিনি, সন্তানকে ইলমে দ্বীন শিক্ষা দিই; নিজে ছোটো বেলা থেকে নেককারদের সঙ্গ-সংস্পর্শ পাইনি, সন্তানকে সেই পথ করে দিই; নিজে ছোটো বেলা থেকে গুনাহ থেকে যত্ন করে বাঁচার বিষয়টি বুঝিনি, সন্তানকে গুনাহর পরিবেশ থেকে বাঁচাই। নিজে যতটুকু পারব সাধ্যমত তো করবই, সাথে সন্তানকে বাড়তি নেকের জন্য সাহায্য সহযোগিতা করতে থাকি। আল্লাহ তাআলা বান্দার নেক নিয়ত ও প্রচেষ্টা বিফল করবে না। ইনশাআল্লাহ আমরা তাঁর সাহায্য পাব। উলামা ও আল্লাহ ওয়ালাদের পরামর্শ নিন; বাঁধা আসবেই, এটাই পরীক্ষা। আপনি বাঁধা অতিক্রমের জন্য দৃঢ় ভাবে সচেষ্ট হন, দোআ শুরু করুন – আল্লাহ তাআলা আপনাকে সাহায্য করবেন এই বিশ্বাস রাখুন।

নিজ সন্তানকে সুষ্ঠু শিক্ষা দেওয়াটা মাতাপিতার অত্যাবশকীয় কাজ। এ বিষয়ে অবহেলা করলে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার কাছে জবাবদিহিতা রয়েছে। মুমিন মাতাপিতার কাছে সন্তানের অন্যতম হক ও প্রাপ্য দ্বীনি শিক্ষা। আজ এ দ্বীনি শিক্ষা থেকে আমাদের সন্তানদের বঞ্চিত করে আমরা দুনিয়াতেই নানান বঞ্চনার কারণ হচ্ছি, আখেরাতে এর ফল হিসেবে বঞ্চনা ও দুর্ভোগ যে সীমাহীন হবে – একটু চিন্তা করেছি কি? আল্লাহ তাআলার কাছে পানাহ চাই ও তওবা করে সন্তানকে দ্বীন শিক্ষা দিই।

Last Updated on May 21, 2024 @ 5:54 pm by IslamInLife বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *