Dark Mode Light Mode
রূহের উন্নতির প্রয়াস - ৪ রূহের উন্নতির প্রয়াস - ৪

রূহের উন্নতির প্রয়াস – ৪

যার রূহানী উন্নতি অর্জিত হয়েছে সে উভয় জগতে সফলতার চাবি পেয়ে গেছে। যে কেবল বস্তুকেই জীবনের উদ্দেশ্য বানিয়েছে, সে কেবল পার্থিব উন্নতি পেতে পারে। তার নিজস্ব কোনো স্থায়ী সম্পত্তি নেই। সে বেচারা চলছে কোনো আসন (পোস্ট, ডেযিংনেশন) বা অন্য কোনো পরিচয়ে। যে পরিচয়টা একেতো নিশ্চিত কোনো কিছু নয়, আবার তা ক্ষণস্থায়ী। এমন পরিচয় এই হায়াতে যে কোনো মুহূর্তে খতম হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর তা না হলে মৃত্যুর হাতছানি সেটাকে তো তার থেকে পৃথক করবেই।

বস্তু জগতে মানুষের নিজস্ব বলে কিছু নেই। শুধুমাত্র যেটা মানুষ মৃত্যুর পরও বহন করবে, যেটা তার সাথে মৃত্যুর পরও থাকবে সেটাই তার কামাই ও অর্জন। সেই ভিত্তিতেই সে হবে পুরস্কৃত বা শাস্তির যোগ্য। যেটা মানুষ মৃত্যুকালে এ জগতে ছেড়ে যাবে সেটা তার পরিত্যাজ্য সম্পত্তি। ধোঁকা সে খাবে যে কিনা জীবিত থাকতে এই পরিত্যাজ্য সম্পত্তিকেই তার যশ, খ্যাতি আর সাফল্যের অবলম্বন মনে করবে। কেবল এর পিছুই নিবে। আত্মিক উন্নতিকে উপেক্ষা করে সে গ্রহণ করবে ঠুনকো সব অবলম্বন। কারণ এগুলো তো এই আছে, এই নাই। এগুলোর উপর যে দুনিয়াতে জীবিত থাকতেই ভরসা করা যায় না।

পার্থিব বস্তুগুলো আত্মিক উন্নতিতে সহায়ক বটে, কিন্তু সেগুলো স্বয়ং কোনো লক্ষ্য নয়। সেগুলোকে লক্ষ্য বানালেই মানুষ তার নিজের মূল্য ভুলে সেগুলো অর্জন, সংরক্ষণ ও লালনে ব্যতিব্যস্ত হয়ে জীবনকে ধ্বংস করে দেয়।

শুধু চর্ম চোখে দেখার ভিত্তিতে আজ অনেক কিছুই আমরা প্রাধান্য দিতে পারি। কিন্তু পার্থিব বিষয়াদি পর্যন্ত অনেক অদেখা বিষয়াবলির ভিত্তিতেই বিশ্বাস করা হয়। আমরা অন্য মানুষের চারিত্রিক গুণাবলীর ভিত্তিতেই (যার মূল অস্তিত্ব দৃষ্টির বাইরে) তাকে বন্ধু বানাই। তাকে ব্যবসায়ের অংশীদার বানাই, চাকুরিতে নিয়োগ দেই, মানুষকে বিশ্বাস করি, ভালোবাসি। স্বয়ং বিশ্বাস আর ভালোবাসা দেখা যায় না। মূলত তা অনুভূতির বিষয়।

একজন মুসলমান, যে কিনা মুসলমান ঈমানের ভিত্তিতেই, যা দেখা যায় না, আর এ বিশ্বাসও অদৃশ্য-জগৎ তথা অদৃশ্যের উপরই। এই ঈমানের উপরই ভিত্তি করে তার আত্মিক অবস্থা ভালো বা মন্দ হয়। এটা আমরা জানি ও মানি। তাহলে আত্মিক উন্নতি ও তার প্রচেষ্টাকে আমরা কীভাবে অস্বীকার করব?!

আমরা যদি আত্মিক বিষয়সমূহ উপেক্ষা করি এই বলে বা মনে করে যে, এগুলো ধর্মের বিষয় আর আখেরাতের সাথেই শুধু সংশ্লিষ্ট। সুতরাং এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনো প্রয়োজন নেই। তাহলে আমরা আত্মিক বিষয়সমূহকে জাগতিক কাজের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করি না। ফল কী হবে? ফল এটাই হবে যে, বিশ্বাস, ভালোবাসা, সততা, নম্রতা, আন্তরিকতা ও সত্যবাদিতার মত অনিবার্য গুণগুলো প্রকাশ না করে সব কাজ আঞ্জাম দিতে হবে। যেটা আসলে একেবারেই অসম্ভব। মানবজীবন থেকে এগুলো বাদ দেয়াই সম্ভব নয়। তারপরও যদি আত্মিক বিষয়সমূহের কোনো একটির অস্তিত্ব ও গুরুত্বকে অস্বীকার করা হয় তাহলে সেটা হঠকারিতা ছাড়া আর কিছু নয়।

রূহানী উন্নতির কোনো চেষ্টা না করার ফল মূলত এটাই যে, সততা ও নম্রতার মতন গুণও যথেচ্ছা ব্যবহার করা হবে। সেক্ষেত্রে মন যেখানে চাবে সেখানেই কেবল নম্রতা অবলম্বন করা হবে। মন যখন চাবে শুধু তখন সত্য বলা হবে। স্বার্থ রক্ষায় মিথ্যা, প্রতারণা আর জুলুমকে সঠিক ও যথার্থ বলে প্রয়োগ করা হবে। এরূপ আচরণ আত্মিক অবস্থার চরম অবনতিরই বহি:প্রকাশ। এ এমন এক স্তর যেখানে মনুষ্যত্ব বিকিয়ে ফেলা হয়।

আমাদের সকল আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন!

By pressing the Subscribe button, you confirm that you have read and are agreeing to our Privacy Policy and Terms of Use
Add a comment Add a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous Post

রূহের উন্নতির প্রয়াস - ৩

Next Post

সময়ানুবর্তিতা - ২