Dark Mode Light Mode

আল্লাহ পাক-এর প্রতি সুধারণার প্রকৃত অর্থ

আল্লাহ তাআলার প্রতি সুধারণা থাকা অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয়। যেমন: আল্লাহ তাআলা আমাকে ভালোবাসেন; তিনি আমাকে ক্ষমা করবেন; তিনিই আমার জন্য যথেষ্ট হবেন…..ইত্যাদি — যত রকম ভালো ধারণা তাঁর প্রতি করা যায় – তা নিঃসন্দেহে খুবই কল্যাণকর। কিন্তু আমি যে আল্লাহ তাআলার প্রতি সুধারণা পোষণ করছি, সেটা যথার্থ বা সঠিক কিনা? এটা জানা ও বুঝা অত্যন্ত জরুরি। তা না হলে, নফস ও শয়তান-এর চক্রান্ত আমাকে ধোঁকায় ফেলে দিয়ে শেষ পর্যন্ত বিপরীত ফল বয়ে আনবে। আল্লাহ তাআলা সঠিক ভাবে বোঝার ও আমলের তাওফীক দিন! শায়খ ইবনুল কায়্যিম জাওযী رحمة الله عليه এ বিষয়টি তার “মিফতাহুস্-সা’আদাহ্” কিতাবে সংক্ষিপ্তভাবে, সহজে ও চিত্তাকর্ষক ভাবে উপস্থাপন করেছেন। এই বইটির বাংলা অনুবাদ “পথের সম্বল” নামে এমদাদিয়া লাইব্রেরি ছেপেছে। গুনাহ-র ফল, প্রতিকার, দোআ – আরও মৌলিক দ্বীনি বিষয়ে অত্যন্ত সহজ-সরল-প্রাঞ্জল ভাষায় বইটিতে বর্ণিত রয়েছে, যা সহজেই একজন মুমিনকে দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ তাআলার সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করার প্রতি ও আখেরাতের অসীম কল্যাণের প্রতি আকৃষ্ট করে। নিচের অংশটুকু সেই বইটি থেকে আমাদের চয়নকৃত আলোচ্য বিষয়:

আল্লাহ তাআলার প্রতি সুধারণার অর্থ,

একটি হাদীসে কুদসীতে আছে (অর্থ): আমি আমার বান্দার প্রতি তার সুধারণা অনুযায়ী ব্যবহার করি।

এটা সুনিশ্চিত যে, সুধারণা তখনই হয় যখন বান্দা খাঁটি অন্তরে নেক কাজের প্রতি দায়িত্ববান হয়। কেবল নেক আমলদার ব্যক্তির হৃদয়েই এধরণের সুধারণা উৎকলিত হতে পারে যে, তার পরওয়ারদেগার তার নেকী ও ভালো আমলের জন্য তার প্রতি দয়া করবেন। স্বীয় অঙ্গীকার পূর্ণ করবেন এবং বান্দাকে দেয়া প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করবেন না।

একজন পলাতক গোলাম যে তার মনিবের কাছে অপরাধী, সে কখনই তার মনিবের প্রতি সুধারণা রাখতে পারে না। মনিবের প্রতি সুধারণা থাকলে সে পালিয়ে যেত না, আর পালিয়ে গেলেও আবার ফিরে আসত।

সাইয়্যেদুনা হাসান বসরী رحمة الله عليه বলেন, মুমিন তার পরওয়ারদেগারের প্রতি সুধারণা রাখে এজন্যই যে, সে ভালো আমল করে। আর ফাসেক ফাজের ব্যক্তি তার রবের প্রতি খারাপ ধারণা রাখে যে, সে অসৎ কাজে লিপ্ত হয়।

সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলা থেকে পালিয়ে বেড়ায়, তাঁর ভয়কে এড়িয়ে চলে, তাঁর গজবের সময় আমোদ-প্রমোদে থাকে, যিল্লতী ও অপমানের ময়দানে নির্লজ্জভাবে বিচরণ করে, আল্লাহ তাআলার হুকুম সমূহের প্রতি অবজ্ঞা ও অসম্মান প্রদর্শন করে, আল্লাহ তাআলার নির্দেশ অমান্য করে, তাঁর পক্ষ থেকে যেসকল জিনিস/বিষয় হারাম ও নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেসকল বিষয়সমূহকে স্বাভাবিক ও তুচ্ছ জ্ঞান করে তাতে লিপ্ত হয় এবং বার বার তা করতে থাকে, সে ব্যক্তি কিভাবে পরওয়ারদেগারের প্রতি সুধারণা পোষণ করবে?

ঐসব লোক যারা মনে করে, আল্লাহ তাআলা তাদের গোপন বিষয় জানেন না এবং শুনেন না, তাদের সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে:

وذ لكم ظنكم ا لذي ظننتم بر بكم اردكم فا صبحتم من ا لخسرين

অর্থ: আর সেই বদ-ধারণা যা তোমরা তোমাদের রবের প্রতি পোষণ করেছ, তাই তোমাদেরকে ধ্বংস করেছে। তাই তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছ। হামীম সিজদাহ – ৪১:২৩

সুতরাং এ বিষয়টি বুঝবে এবং চিন্তা-ভাবনা করবে, তার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে যাবে যে, “হুসনে-যন-বিল্লাহ”, অর্থাৎ, “আল্লাহ তাআলার প্রতি সুধারণা” প্রকৃতপক্ষে “হুসনে আমাল” অর্থাৎ, “নেক আমল”-এরই অপর নাম। কেননা, বান্দাকে আল্লাহ তাআলার প্রতি সুধারণা রাখতে এই আকীদাই উদ্বুদ্ধ করে যে, আল্লাহ তার কৃতকর্ম ও আমাদের প্রতিদান দেবেন। নবীজী ﷺ বলেন (অর্থ): বুদ্ধিমান সে-ই যে নিজেকে ছোটো মনে করে এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য আমল করে। আর ঐ ব্যক্তি হল অক্ষম নির্বোধ যে, তার নফসের কামনা-বাসনার পেছনে নির্বিঘ্নে ছুটে চলে এবং আল্লাহ তাআলার কাছে স্বীয় কল্যাণের জন্য বড় বড় আশা রাখে।

আল্লাহ তাআলার প্রতি প্রকৃত সুধারণা ও প্রতারণামূলক সুধারণার মধ্যে সহজেই পার্থক্য করা যায়। যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন:

অর্থ: নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে ও যারা হিজরত করেছে এবং আল্লাহ তাআলার পথে জিহাদ করেছে, তারাই আল্লাহ তাআলার রহমতের আশা রাখে। আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত দয়ালু ও মেহেরবান। সূরা বাকারা – ২:২১৮

আল্লাহ পাক এ ধরণের লোকদেরকেই তাঁর প্রতি আশা-ভরসা রাখার অধিকার দিয়েছেন। যাদের গুণাবলী আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। জালেম-ফাসেক ও অসৎ লোকদেরকে তিনি সে অধিকার দেন নি।

আমাদের সকল আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন!

By pressing the Subscribe button, you confirm that you have read and are agreeing to our Privacy Policy and Terms of Use
Add a comment Add a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous Post

আসল অভাবের অনুভূতির হয়েছে অভাব

Next Post

মনগড়া পদ্ধতিতে ঈমান ও আমল গ্রহণযোগ্য নয়