Dark Mode Light Mode

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি হল হজ্ব। সামর্থ্যবানদের জন্য জীবনে একবার ফরয। ফজিলত ও বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে হজ্ব একটি বিস্ময়কর ইবাদত।

যারা হজ্বে গিয়েছেন, আল্লাহ‌ তাআলার ঘর যিয়ারত করেছেন, কুরআন-হাদীসে বর্ণিত হজ্বের আহকামগুলো মেনে হজ্ব পালন করেছেন, তাদের উপলব্ধি ভাষায় প্রকাশ করা দুঃসাধ্য। আল্লাহ তাআলার ভালোবাসার বিষয়টি সব ইবাদতের মধ্যেই রয়েছে। কিন্তু হজ্ব যেন আদ্যোপান্তই আল্লাহ ও বান্দার ভালোবাসায় পূর্ণ! দু‌‌’ টুকরো সেলাইবিহীন কাপড় পরে আল্লাহ তাআলার বান্দা যখন “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক….লাব্বাইক লা শারীকালাকা লাব্বাইক….” বলে বায়তুল্লাহ — কাবা ঘরের দিকে রওয়ানা দেয় – তখনই ভালোবাসার গভীর একটি অনুভূতি জেগে ওঠে! আল্লাহ তাআলার ঘরের দিকে ছুটে যাওয়ার জন্য তাঁর বান্দা কত ব্যাকুল সেটি ফুটে ওঠে। একদিন বান্দা এ পার্থিব জগত ছেড়ে তার মাওলার কাছে ফিরে যাবে। হজ্বের মাধ্যমে যেন তারই মহড়া, তারই প্রস্তুতি আর ব্যাকুলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে — ও মালিক, কবে তোমার কাছে ফিরে যাব আমি?!

আমাদের উলামাগণ-আকাবিরীন যেভাবে হজ্ব সফরনামা লিখেছেন তা সত্যিই হয়রান করে। যারা এবার হজ্বে যাচ্ছেন, সামনে যাবেন বা ভবিষ্যতে যাবেন ইনশাআল্লাহ‌, সবার কাছেই অনুরোধ, সেই সব সফরনামার কিছুটা হলেও পড়ুন। ইনশাআল্লাহ‌ তাতে অন্তরে বায়তুল্লাহ যিয়ারতের আকাঙ্ক্ষা বহু গুণ বৃ্দ্ধি পাবে। সেখানে গিয়ে আমলের আগ্রহ-উদ্দীপনা অনেক বাড়বে। সেই সফরনামার দু‌‌‌’ একটি পড়লেও আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল ﷺ ভালোবাসা লাভে তা বিশেষ সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহওয়ালাদের যেকোনো অভিজ্ঞতার কাহিনীই আমাদেরকে অনেক জ্ঞানের ও পথচলার সঠিক নির্দেশনা দেয়। আর হজ্বের সফর তো সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের একটি সফর। জীবনে বার বার হজ্ব করা খুব কম মানুষের জুটে, অথচ কত গুরুত্বপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না!

আমাদের সাইটে হজ্ব সংক্রান্ত কিছু মৌলিক বিষয় আলোচনা করাই উদ্দেশ্য। তার মধ্যে হজ্বের ফজিলত, গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য, মাসআলা-মাসায়েল মুখ্য। কয়েকটি কিস্তিতে ইনশাআল্লাহ তা আলোচনা করার নিয়ত আছে। সম্মানিত পাঠকদের দোআ কামনা করছি – আল্লাহ তাআলা যেন তাওফীক দেন।

খাঁটি নিয়ত (কেবল আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির জন্য) আমল কবুলের পূর্বশর্ত। হজ্ব পালনে এই বিষয়টি একটু বেশি খেয়াল রাখতে হয়। কারণ মানুষ আমাকে হাজী বলবে বা আমার নামের আগে আল-হাজ্ব লাগাব ইত্যাদি বিষয় আমার আমলকে নষ্ট করে দেবে। খাঁটি নিয়ত উপেক্ষিত হওয়া বড় আফসোসের কথা! নামায দিনে পাঁচবার। এভাবে দান-সাদকা, রোযা ইত্যাদি ইবাদত সবসময় করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু হজ্ব? সুনির্দিষ্ট সময়ে, সুনির্দিষ্ট স্থানে, সুনির্দিষ্ট নিয়মে কষ্ট-ক্লেশ করে জীবনে একটি বার করা ফরয। যে ইবাদতটির দরুন আল্লাহ তাআলা সারা জীবনের গুনাহ ক্ষমা করেন, বান্দাকে আজীবনের জন্য দরিদ্রতা থেকে মুক্তি দেন, বান্দার অন্তরে আখেরাতের বিশেষ আকর্ষণ সৃষ্টি করে দেন, আর সর্বোপরি আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাকে নিজ ভালোবাসা দানে ধন্য করেন! জীবনের প্রথম হজ্বটি ফরয পর্যায়ের, তাই পরে যতবারই করা হোক, তা প্রথমটির সমকক্ষ নয়। অতএব, নিয়ত থেকে শুরু করে হজ্বের আনুষঙ্গিক সববিষয় ভালো করে জেনে হজ্বের উদ্দেশ্যে যাওয়া উচিত।

নিয়ত ঠিক করার প্রসঙ্গে আরেকটি কথা! তা এই যে, আমার আশেপাশের মানুষ হয়ত এমন কিছু বলবে যা আমার নিয়ত খারাপ করতে পারে। আমাকে হাজী সাহেব বলবে অথবা আল-হাজ্ব বলবে। এ থেকে বাঁচার জন্য সর্বপ্রথম আল্লাহ তাআলার আশ্রয় চাব। এ চিন্তা করব যে, আমি এসব টাইটেল-প্রশংসা পাওয়ার জন্য হজ্ব করতে যাচ্ছি না (বা হজ্ব করিনি)। সবরকম সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ পাকের তাওফীক ছাড়া হজ্ব নসীব হয় না। আবার হজ্বের হুকুম-আহকাম পালন করলেই হজ্ব কবুল হবে এর কোনো গ্যারান্টি নাই; আমাদের কাজে হাজার ত্রুটি! আল্লাহ তাআলার রহমতেই সবকিছু সম্ভব। অর্থাৎ, মানুষ যা-ই বলুক; আমার  উদ্দেশ্য শুধুমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টি। বিপরীত চিন্তা ও নিয়ত এলে ইস্তেগফার হল প্রতিষেধক। মানুষের কথায় কান না দেওয়া, ক্ষতিকর কোনো প্রসঙ্গ আসলে আলোচনা অন্যদিকে ঘুরিয়া দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। প্রয়োজনে আলোচক বা অতি প্রশংসাকারীদেরকে সতর্ক করতে হবে। যেমন কেউ আমাকে হাজী বলল। আমি সঙ্গে সঙ্গে বলব, ভাই দোআ করুন আল্লাহ তাআলা আমার হজ্ব তাঁর রহমতে কবুল করে নিন ও আমাকে রিয়াসহ অন্যান্য সব ক্ষতিকর বিষয় থেকে সুরক্ষা করুন। হজ্বে যাওয়ার আগে অন্তত, এই প্রচেষ্টার সঙ্গে আল্লাহ তাআলার কাছে বিনয়াবনত হয়ে দোআ করতে থাকব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা আমাদের হজ্ব কবুল করুন, সহজ করুন; যা করণীয় তা করার তাওফীক দান করুন; যা নিষিদ্ধ তা থেকে বিরত থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন।

ইনশাআল্লাহ চলবে….

আমাদের সকল আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন!

By pressing the Subscribe button, you confirm that you have read and are agreeing to our Privacy Policy and Terms of Use
Add a comment Add a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Next Post

তাকওয়াই মানুষের মর্যাদার মাপকাঠি