মৃত্যু সুনিশ্চিত, হবেই
আল্লাহ তাআলা বলেন:
كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَما الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلاَّ مَتَاعُ الْغُرُورِ
অর্থ: প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এবং তোমাদের সবাইকে (তোমাদের কাজের) পুরোপুরি প্রতিদান কেয়ামতের দিনই দেয়া হবে। তারপর যাকেই জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হবে ও জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, প্রকৃত অর্থে সে-ই সফলকাম হবে। আর পার্থিব জীবন তো প্রতারণার উপকরণ ছাড়া কিছুই নয়। সূরা আলে ইমরান – ৩:১৮৫
মৃত্যুক্ষণ সুনির্দিষ্ট
وَلَن يُؤَخِّرَ اللَّهُ نَفْسًا إِذَا جَاء أَجَلُهَا وَاللَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ
অর্থ: প্রত্যেক ব্যক্তির নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন। সূরা মুনাফিকুন – ৬৩:১১
وَلِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌ فَإِذَا جَاء أَجَلُهُمْ لاَ يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً وَلاَ يَسْتَقْدِمُونَ
অর্থ: প্রত্যেক উম্মতের একটি মেয়াদ রয়েছে। যখন তাদের মেয়াদ এসে যাবে, তখন তারা না এক মুহূর্ত পিছে যেতে পারবে, আর না এগিয়ে আসতে পারবে। সূরা আরাফ – ৭:৩৪
মৃত্যু কেমন ঘটনা
সাইয়্যেদুনা আনাস ইবনে মালিক رضي الله عنه থেকে বর্ণিত রাসূলে কারীম ﷺ বলেন (অর্থ): আদম সন্তান কখনো মৃত্যুর মতন এত মারাত্মক কোনোকিছুর সম্মুখীন হয়নি, আর আগমনকৃত বিষয়গুলোর মধ্যে মৃত্যুই সবচেয়ে সহজ। মুসনাদে আহমাদ
কেবল মৃত্যুর স্মরণও অনেক উপকারি
সাইয়্যেদুনা আবদুল্লাহ ইবনে উমর رضي الله عنهما থেকে বর্ণিত রাসূলে কারীম ﷺ বলেন (অর্থ): নিশ্চয়ই (মানুষের) অন্তরে মরিচা পড়ে যেভাবে লোহায় মরিচা পড়ে থাকে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, “তা পরিষ্কারের উপায় কী?” রাসূলে কারীম ﷺ বললেন (অর্থ): মৃত্যুকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করা ও তেলাওয়াতে কুরআন। শোআবুল ঈমান, মুসনাদে শিহাব
মৃত্যুকে স্মরণ করার তাগিদ
সাইয়্যেদুনা আবু হুরায়রা رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
أَكْثِرُوا ذِكْرَ هَاذِمِ اللَّذَّاتِ يَعْنِي الْمَوْتَ
অর্থ: তোমরা বেশি করে স্বাদ হরণকারী বিষয় অর্থাৎ মৃত্যুর আলোচনা করবে। তিরমিযী
মৃত্যুকে কেউ কখনো রোধ করতে পারবে না
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
أَيۡنَمَا تَكُونُواْ يُدۡرِككُّمُ ٱلۡمَوۡتُ وَلَوۡ كُنتُمۡ فِي بُرُوجٖ مُّشَيَّدَةٖۗ وَإِن تُصِبۡهُمۡ حَسَنَةٞ يَقُولُواْ هَٰذِهِۦ مِنۡ عِندِ ٱللَّهِۖ وَإِن تُصِبۡهُمۡ سَيِّئَةٞ يَقُولُواْ هَٰذِهِۦ مِنۡ عِندِكَۚ قُلۡ كُلّٞ مِّنۡ عِندِ ٱللَّهِۖ فَمَالِ هَٰٓؤُلَآءِ ٱلۡقَوۡمِ لَا يَكَادُونَ يَفۡقَهُونَ حَدِيثٗا
অর্থ: “তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবে, যদিও তোমরা সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান কর। আর যদি তাদের কাছে কোনো কল্যাণ পৌঁছে তবে বলে, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে’। আর যদি কোনো অকল্যাণ পৌঁছে, তখন বলে, ‘এটি তোমার পক্ষ থেকে’। বল, ‘সব কিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে’। সুতরাং এই কওমের কী হল, তারা কোনো কথা বুঝতে চায় না!” সূরা আন-নিসা – ৪:৭৮
মৃত্যুক্ষণ কেমন হয়ে থাকে
كَلَّآ إِذَا بَلَغَتِ ٱلتَّرَاقِيَ ٢٦ وَقِيلَ مَنۡۜ رَاقٖ ٢٧ وَظَنَّ أَنَّهُ ٱلۡفِرَاقُ ٢٨ وَٱلۡتَفَّتِ ٱلسَّاقُ بِٱلسَّاقِ ٢٩ إِلَىٰ رَبِّكَ يَوۡمَئِذٍ ٱلۡمَسَاقُ
অর্থ: “কখনই না, যখন প্রাণ কণ্ঠাগত হবে। আর বলা হবে, ‘কে তাকে বাঁচাবে’? আর সে মনে করবে, এটিই বিদায়ক্ষণ। আর পায়ের গোছার সংগে পায়ের গোছা জড়িয়ে যাবে। সেদিন তোমার রবের কাছেই সকলকে হাঁকিয়ে নেওয়া হবে”। সূরা কিয়ামাহ – ৭৫:২৬-৩০
কেউ মৃত্যুকে পুরোপুরি ভুলে থাকতে চাই। কেউ যেকোনো উপায়ে বেঁচে থাকতে চাই। কেউ মৃত্যু থেকে বিভিন্নভাবে পালাতে চাই। আসলে এর কোনোটিই কখনো সম্ভব নয়। মৃত্যুর হাতছানি আসবে এবং তা যথাসময়ে এসে উপস্থিত হবে।
প্রকৃত বুদ্ধিমান
সাইয়্যেদুনা শাদ্দাদ ইবনে আউস رضي الله عنه থেকে বর্ণিত রাসূলে কারীম ﷺ বলেন (অর্থ): বুদ্ধিমান হল ঐ ব্যক্তি যে তার নিজেকে সংযত করে (বা নিজের হিসাব নিজে করে) এবং মৃত্যু-পরবর্তী অবস্থার জন্য কাজ করে। আর অক্ষম বা নির্বোধ হল সে, যে কিনা প্রবৃত্তিকে (অর্থাৎ নিজ খেয়াল-খুশির) অনুসরণ করে ও আল্লাহ তাআলার রহমতের আশা রাখে। তিরমিযী, ইবনে মাজাহ
অতএব, বুদ্ধিমানের কাজ হবে মৃত্যুকে বরণ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাওয়া।
কবে আমরা মৃত্যু থেকে পালাব
সাইয়্যেদুনা আলী رضي الله عنه -এর কথাটি স্মরণ রাখার মতন। জঙ্গে সিফফীন। চারপাশে ভয়াবহ রক্তপাত। লাশের পর লাশ পড়ে যাচ্ছে। এরই মাঝে খলিফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যেদুনা আলী رضي الله عنه নিজ সওয়ারির ওপর ঝিমাচ্ছেন। এ দৃশ্য দেখে কেউ বলে উঠল, “আমীরুল মুমিনীন! এত ভীতিকর অবস্থা, আর আপনি তন্দ্রাচ্ছন্ন?!”
কী বলেছিলেন আমীরুল মু’মিনীন সেদিন জানেন? মুখস্থ করে নিন! স্মরণ রাখুন:
“কোন দিন আমি মৃত্যু থেকে পালাব? যেদিন আমার মৃত্যু হবে, নাকি যেদিন আমার মৃত্যু হবে না?!” মাওয়ায়েযে হাকীমুল উম্মত
মৃত্যুক্ষণের জন্য এখন থেকেই কোন দোআ পড়বেন
رَبَّنَا لاَ تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ
অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্যলংঘনে প্রবৃত্ত কর না এবং তোমার নিকট থেকে আমাদিগকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই সব কিছুর দাতা। সূরা আলে ইমরান – ৩:৮
اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى غَمَرَاتِ الْمَوْتِ و سَكَرَاتِ الْمَوْتِ
অর্থ: হে আল্লাহ!তুমি আমাকে মৃত্যুর কষ্ট ও যন্ত্রণার সময় সাহায্য কর! তিরমিযী
اللَّهُمَّ اجْعَلْ خَيْرَ عُمْرِي آخِرَهُ ، وَخَيْرَ عَمَلِي خَوَاتِمَهُ ، وَخَيْرَ أَيَّامِي يَوْمَ أَلْقَاكَ
অর্থ: হে আল্লাহ! আমার জীবনের শেষাংশকে জীবনের সবোর্ত্তম অংশ বানিয়ে দিন, আমার সর্বোত্তম আমলকে আমার সর্বশেষ আমল বানিয়ে দিন, আমার সর্বোত্তম দিন বানিয়ে দিন যেদিন আমি আপনার সঙ্গে সাক্ষাত করব। মোজামুল আসওয়াত: তাবারানি