Dark Mode Light Mode

ধোঁকা থেকে বাঁচতে হবে

আল্লাহ‌ তাআলার রহমত, ক্ষমা এবং দয়া এত ব্যাপক যা আমরা কল্পনা করতে পারি না। যখন কোনো বান্দা আল্লাহ‌ তাআলার কাছে নিজের দুর্বলতা, গুনাহ, ভুল ত্রুটি নিয়ে হাজির হয়; আন্তরিকভাবে দয়া আর ক্ষমা ভিক্ষা করে। আল্লাহ‌ তাআলা তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করেন আর ঐ বান্দাকে নেক কাজের তাওফীক দেন।

আল্লাহ‌ তাআলার সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায় গুনাহর দ্বারা। আর তওবার দ্বারা ঐ সম্পর্ক ভালো হয়। বান্দা যদি গুনাহ পরিত্যাগ না করে আল্লাহ‌ তাআলার রহমতের আশা করতে থাকে, সেটা চরম বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়। গুনাহ ছাড়তে হবে, নেক আমল শুরু করতে হবে। তাহলেই প্রতিশ্রুত রহমত, আল্লাহ‌ তাআলার নৈকট্য পাওয়া যাবে। কেউ যদি খাঁটি তওবা করে, আন্তরিকভাবে লজ্জিত হয়ে গুনাহ পরিত্যাগ করে; আপনা আপনি তার মন-দিল নেক কাজে ধাবিত হবে। এই অবস্থায় তার যদি হায়াত শেষ হয়ে আসে, সে যদি উল্লেখযোগ্য কোনো নেক আমলই করতে না পারে, তারপরও সে সৌভাগ্যবান; আশা আছে আল্লাহ‌ তাআলা তাকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ‌ তাআলা আমাদের তওবার বিষয়, তাঁর ক্ষমা ও দয়ার বিষয় সঠিকভাবে বোঝার তাওফীক দিন। আমীন।

অনেকেই তওবা, আল্লাহ‌ তাআলার দয়া ও ক্ষমা, তাঁর প্রতি সুধারণা – ইত্যাদি বিষয়গুলো নিজে থেকে মনগড়া একটা ধারণা বানিয়ে নিয়ে চলতে থাকে। যার ফলে অতি হতাশা অথবা মিথ্যা আশা তাকে ধোঁকায় ফেলে দেয়। যেমন, কেউ নিজের গুনাহকে বড় মনে করতে গিয়ে নিজেকে আল্লাহ‌ তাআলার ক্ষমার অযোগ্য মনে করে ফেলে। যা কখনই ঠিক নয়। আবার কেউ বা অনবরত আল্লাহ‌ তাআলার নাফরমানির মধ্যে ডুবে থেকে, তাঁর রহমত চাইতে থাকে বা তাঁর রহমতের প্রবল আশা করতে থাকে (যেমন এরূপ ভাবা, আমি যত নাফরমানিই করি না কেন, তিনি আমায় ক্ষমা করে দিবেন) । কাউকে-তো এমনও দাবি করতে দেখা যায় যে, তার প্রতি আল্লাহ‌ তাআলা খুবই সন্তুষ্ট এবং সে আল্লাহ‌ তাআলার বিশেষ রহমত প্রাপ্ত। অথচ ঐ দাবিদারগণের অনেকে নামাযি, যিকিরকারী হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ‌ তাআলার বড় বড় নাফরমানি করছে। যেমন, কেউ পর্দাকে অমান্য করছে, কেউ সুদ খাচ্ছে, কেউ সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে কথা বলছে, গিবত করার ব্যাপারে বেপরোয়া আচরণ করছে; আলেম উলামাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করছে। সে করণীয় কিছু বিষয়কে করে যাচ্ছে বলে নিজেকে ধার্মিক, সচেতন , নেককার, মকবূল মনে করছে। কিন্তু বর্জনীয় বিষয়গুলি বর্জন করছে না। আর এই অবস্থায় তার নিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হল, আমি আল্লাহ‌ তাআলার বিশেষ বান্দা।

আল্লাহ‌ তাআলার রহমতপ্রাপ্ত কিন্তু এক অর্থে সবাই। কারণ, তিনি রাহমান। রাহমান নামের কারণে আল্লাহ‌ তাআলার দস্তরখানে সবাই দুনিয়াতে খাচ্ছে, সুযোগ পাচ্ছে – দুনিয়াতে সাধারণভাবে সবাই রহমতপ্রাপ্ত। পৃথিবীতে মূলত পরীক্ষিত হচ্ছে মানুষ। এখানে কাউকে মাল-ধন-সম্পদ, সম্মান-যশ, রাজত্ব, সুস্থতা, শক্তি, শিক্ষা ইত্যাদি দেয়া আর না দেয়া আল্লাহ‌ তাআলার সন্তুষ্টির কোনো মাপকাঠি নয়। তা-ই যদি হত, তাহলে রাসূল ﷺ-এর ঐ বাণীর কী অর্থ? — এই দুনিয়ার মূল্য মশার পাখার সমান হলে কাফিরকে এক ঢোক পানি পর্যন্ত পান করতে দেয়া হত না। আখেরাতে কিন্তু আল্লাহ‌ তাআলার ‘রাহীম’ নামের প্রকাশ হবে। সেখানে তিনি দয়া করবেন শুধুমাত্র ঈমানদারদের উপর। কারণ এটাই সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত। সেখানে পূর্ণ ইনসাফের পাল্লা কায়েম হবে। সেখানে কোনো আমল নেই। আছে শুধু প্রতিদান। আজ দুনিয়াতে যারা প্রতিদান পাওয়ার উদ্দেশ্যে আল্লাহ‌ তাআলার হুকুম মানছে, কষ্ট করছে তারা সেইদিন পুরস্কৃত হবে। সেদিন ঈমান সম্বলিত নেক আমল ছাড়া কিছুই কাজে আসবে না।

প্রতিদানের মাপকাঠি হল ঈমান ও নেক আমল। আর দুনিয়াই তা তৈরির জায়গা। মাল-ধন-সম্পদ, সম্মান-যশ, রাজত্ব, সুস্থতা, শক্তি, শিক্ষা ইত্যাদি দুনিয়াতে দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে; কে এগুলোকে উদ্দেশ্য বানায় আর কে এগুলোর মালিককে উদ্দেশ্য বানায়। এগুলোকে আল্লাহ‌ তাআলার হুকুম পালনে ব্যবহার করলে কোনো অসুবিধা নেই; তবে তো উদ্দেশ্য আল্লাহ‌ তাআলাই হবে। আর এগুলোকে নিজস্ব সম্পত্তি, নিজের যোগ্যতা ও অর্জন মনে করে আল্লাহ‌ তাআলার হুকুমের বিপরীত চলতে থাকলে এগুলোই হবে শাস্তির কারণ। আল্লাহ‌ তাআলার সুস্পষ্ট ঘোষণা (অর্থ): যে ব্যক্তি অবাধ্যতা করেছিল, এবং পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিয়েছিল জাহান্নামই হবে তার ঠিকানা। আর যে ব্যক্তি নিজ প্রতিপালকের সামনে দাঁড়ানোর ভয় পোষণ করত এবং নিজেকে মন্দ চাহিদা থেকে বিরত রাখত জান্নাতই হবে তার ঠিকানা। সূরা নাযিআত – ৭৯:৩৭-৪০

আমাদের মনে সদা জাগরূক থাকা দরকার যে, দুনিয়া পরীক্ষাকেন্দ্র। আখেরাত হল ফলাফল পাবার স্থান। দুনিয়ার সুখ অস্থায়ী, দু:খও অস্থায়ী। আখেরাতের সুখ চিরস্থায়ী, আর দুঃখও চিরস্থায়ী। দুনিয়াতে আল্লাহ‌ তাআলার হুকুম মাননেওয়ালা তাই কখনই হতোদ্যম হয় না। দুনিয়ার দুঃখ তাকে ঐভাবে স্পর্শ করেনা যেভাবে স্পর্শ করে তাকে আখেরাতের ভাবনা। দুনিয়ার আনন্দে আত্মহারা হয়ে সে কখনই তার বানানেওয়ালাকে ভুলে না; ভাঙে না তাঁর হুকুম। দুনিয়ার কোনো বস্তু হাতছাড়া হলে তার অন্তর তড়পায় না যেভাবে তা বিষাদগ্রস্ত হয়ে যায় কোনো নেক আমল ছুটে গেলে। আর দুনিয়াদারের অবস্থাটা হয় পুরোই এর উল্টো! সে দুনিয়ার কাজের জন্য নামাযকে কুরবানী করে। দুনিয়ার কাজগুলি আগে করে, আর আখেরাতের কাজগুলি পিছিয়ে দেয়। দুনিয়ার কাজেতো বড় যত্নবান, কিন্তু দ্বীনি কাজে অবহেলা। আল্লাহ‌ তাআলার বড় বড় হুকুম লঙ্ঘন করে সে দুনিয়ার কাজগুলিকে ইবাদত আখ্যা দেয়। এভাবে সে ধোঁকা খেতে থাকে। রাসূল ﷺ এর সেই বাণী আমাদের স্মরণ রাখা দরকার, যেখানে তিনি ‘সুস্থতা’ আর ‘অবসর’-এর কথা উল্লেখ করে উম্মতকে সতর্ক করেছেন যে, এই দুই বিষয়ে মানুষ ধোঁকা খায়। বাস্তবিকই, নেক আমলের জন্য এখনো আমরা নিজেদেরকে সুস্থ মনে করছিনা। এখনো অবসরগুলির কদর করছি না! ‘পরে করব’, ‘কাল করব’ – ইত্যাদি বলে মনকে প্রবোধ দিচ্ছি। ডুবে আছি আল্লাহ‌ তাআলার নাফরমানিতে। কিন্তু প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্ত আমি চলছি কবরের দিকে। আল্লাহ‌ তাআলা কত মায়া করে সতর্ক করেছেন (অর্থ), হে মানুষ! কী জিনিস তোমাকে তোমার মহানুভব রব সম্পর্কে ধোঁকায় ফেলেছে? সূরা ইনফিতার – ৮২:৩৭-৪০

আমাদের সকল আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন!

By pressing the Subscribe button, you confirm that you have read and are agreeing to our Privacy Policy and Terms of Use
Add a comment Add a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous Post

সঠিক পথের সন্ধান-১

Next Post

দুনিয়ার হায়াত: এক অমূল্য সুযোগ