Dark Mode Light Mode

গুনাহের ক্ষতি ও শাস্তি: যে বিষয়গুলি আমাদের জানা জরুরি

গুনাহ করার জাগতিক ও পরকালীন উভয় ক্ষতিই আছে। কিন্তু আমরা অধিকাংশ সময় জাগতিক ক্ষতিটি চোখে দেখি না আর পরকালীন ক্ষতি তো মৃত্যুর পর দৃশ্যমান হবে তাই আমাদের কাছে হয়ত সেটা আরো দূরবর্তী মনে হয়।

জাগতিক ক্ষতি যদি আমরা চোখে দেখতাম, তাহলে সহজেই গুনাহ থেকে বিরত থাকতাম। কিন্তু আল্লাহ তাআলা যা চান! তিনি তো মানুষকে পরীক্ষা করছেন। পরীক্ষাকালীন সময়ে এটিই যৌক্তিক যে, বান্দা ফল তাৎক্ষণিক দেখবে না। এজন্যও, এবং আরো হেকমতের কারণে জাগতিক ক্ষতিকেও অধিকাংশ সময় আড়াল রাখা হয় অথবা বিলম্বিত করা হয়।

ঈমান অবশ্য এমন এক নূর, যা কিনা গুনাহের ক্ষতি সম্পর্কে মানুষকে উপলব্ধি করায়! ঈমানদার ঈমানের কারণেই আল্লাহকে ভয় করে ও ভালোবাসে। একজন ঈমানদার তাই গুনাহ করতে ভয় পায়, গুনাহ হলে তার অন্তর প্রকম্পিত হয়।

গুনাহের ফলে সামাজিক বিশৃঙ্খলার উৎপত্তি হয়

আল্লাহ না করুন, কারো ঈমান যদি এত দুর্বল হয়ে যায় যে, সে গুনাহ করে নিজের ভেতর কোনো প্রকার অনুতাপ ও কষ্ট অনুভবই না করে, এটা খুবই ভয়াবহ! এ বিষয়টি আমাদের প্রত্যেকের চিন্তা করা উচিত। কখনো এমনও হয়,  আমরা হয়ত কোনো গুনাহের ব্যাপারে গাফেল। সেই গুনাহ আমরা এজন্য করতে থাকি কারণ তার কোনো ক্ষতি আমাদের নজরে আসে না। নজরে না আসা মানে কি ক্ষতি না হওয়া?! কখনো তা নয়। আরো আশঙ্কাজনক অবস্থা হল, যে গুনাহে আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়ি, সেই গুনাহের ব্যাপারে সতর্ক করা হলে আমরা কখনো পাল্টা কোনো যুুক্তি-তর্ক শুরু করে দেই। এমন করা তো গুনাহ করে হঠকারিতা করার শামিল। দ্বীনদার মহলে পর্যন্ত এমন অবস্থার অবতারণা হয় যে, গীবতের মতন ভয়াবহ গুনাহ চলতে থাকে। কিন্তু তা প্রতিরোধ তো দূরের কথা, কেউ গীবত করলে তার কথায় সায় দেওয়া হয়। ফলে বক্তা-শ্রোতা, অর্থাৎ গীবতকারী ও শ্রবণকারী সবাই গুনাহে লিপ্ত হয়ে যায়। গীবত গুনাহটাও এমন যে, করার সময় কোনো ক্ষতিই অনুভূত হয় না! বরং নাউযুবিল্লাহ বাহাদুরি অনুভূত হয়। গীবতের কারণে নিজের রায় ও মতকেও খুব প্রাধান্য দেওয়া হয়। গীবতের কারণে সমাজে যে বিশৃঙ্খলা, অশান্তি ও কোটনামির বিস্তার লাভ হয়ে থাকে, সেটা আমরা জানি, কিন্তু মূল দায়ী ব্যক্তিকে হয়ত বিশেষ কোনো বাহ্যিক কারণে তাৎক্ষণিক তেমন ক্ষতি স্পর্শ করতে দেখা যায় না। যেমন: মূল দায়ী ব্যক্তি হয়ত সমাজে প্রভাবশালী। তাই তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস করে না। সেই ব্যক্তিও দিব্যি মনে করে, আমার উদ্দেশ্য অথবা যোগসাজস সফল হয়েছে! এর ফলে, একে তো তার অন্যায়ও যেমন বৃদ্ধি পায়, তার মদদ দাতাদের অন্যায়ও বেশি বিস্তার লাভ করে। গুনাহ বা অন্যায়-জুলুমের মূল ভুমিকা যে রাখে, কোনো অন্যায় যার মাধ্যমে প্রথম বিস্তার লাভ করে, সে তো গুনাহগারই, তার সাঙ্গ-পাঙ্গ ও মদদগার সবাই গুনাহগার। উপরন্তু, যে ব্যক্তি ঐ গুনাহর মূল উৎস বা প্রথম উস্কানিদাতা, অন্য সবার (তার অনুসারীদের) গুনাহর অপরাধে সে সমান অপরাধী!

আল্লাহ তাআলা সুযোগ দেন। কখনো অনেক বেশি সুযোগ দেন। তিনি আমাকে গুনাহ করার সুযোগ দিচ্ছেন — করে নেই, এ তো নিকৃষ্ট চিন্তা! তিনি যদি কাউকে রাগান্বিত হয়ে গুনাহ করার সুযোগ দেন (মাআ’যআল্লাহ!), তাহলে তো সর্বনাশ! এর মানে হল, যখন ঐ ব্যক্তি/গোষ্ঠীকে ধরবেন, তাঁর ধরপাকড় বড় ভয়াবহ হবে! আর আমরা যদি তাঁর দেওয়া সুযোগে খালেস তওবা করে ফেলি (কারণ, এটিও দয়াময় মালিকের পক্ষ থেকে বান্দাকে সুযোগ দানের অন্যতম একটি কারণ), তা হবে সর্বাধিক বুদ্ধিমানের কাজ! আল্লাহ তাআলার দেওয়া সুযোগকে সৎ কাজে লাগানো উচিত। এই সব সুযোগকে গুনাহর কাজে লাগালে আল্লাহ তাআলার নেয়ামতের না-শোকরি ও নাফরমানি আরো বেশি করা হবে, শাস্তি আর ক্ষতির আশঙ্কা ও কঠোরতা তত বাড়বে, যা কখনোই ডেকে আনা উচিত নয়!!

একটি প্রশ্নের জবাব

প্রশ্ন আসতে পারে, যদি কোনো ব্যক্তি গুনাহ করেই যায়, আর তওবা না করা সত্ত্বেও আল্লাহ তাআলা নিজ রহমতে তাকে ক্ষমা করে দেন? তাহলে তো আর গুনাহের শাস্তি (ঐ ব্যক্তির জন্য) অবশ্যম্ভাবী নয়?!

এই প্রশ্নের উত্তরে এতটুকু বলাই যথেষ্ট যে, মালিকের এমন সিদ্ধান্তের ওপর উনি ব্যতীত যেহেতু আর কারো কোনো অধিকারই নেই (অর্থাৎ তাঁর একান্ত ক্ষমতাবলে তিনি সবই করতে পারেন), কারুর কিছু বলারও অধিকার নেই, তাহলে এই প্রশ্ন উত্থাপন করে মনকে সান্ত্বনা দেওয়াও কখনো বৈধ নয়!

মুমিন গুনাহের জাগতিক ও পরকালীন উভয় ক্ষতির ব্যাপারে ভীত

মুমিন তাই বিশ্বাস করে (এটিই কুরআন সুন্নাহর মৌলিক শিক্ষা), তওবা না করলে গুনাহের শাস্তি অবশ্যম্ভাবী (আর এই বিশ্বাসের কারণে আল্লাহ তাআলা যা ইচ্ছা তা-ই করার অধিকার রাখেন, এই বিশ্বাসও তাদের অটুট থাকে)। তার ওপর, তওবা করা হলেও অনেক গুনাহের কুফল অথবা নেতিবাচক প্রভাব দুনিয়াতে আসার আশঙ্কা তো আছেই! এটিও মুমিন বিশ্বাস করে। তাই গুনাহের কুফল অথবা নেতিবাচক প্রভাব দুনিয়াতে আসার আশঙ্কা থেকে কোনো মুমিন কখনো নির্ভীক-নির্ভয় হয় না। আর আখেরাতের আযাব যে সবচেয়ে ভয়াবহ তা জেনে সে আরো বেশি ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে।

আমাদের সকল আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন!

By pressing the Subscribe button, you confirm that you have read and are agreeing to our Privacy Policy and Terms of Use
Add a comment Add a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous Post

মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর - ২

Next Post

রমযানের প্রথম রাত ও দিন