রাসূলে আকরাম ﷺ-এর পবিত্র হায়াতে ইসরা ও মেরাজ খুবই উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা। কোন মুসলমানই এই ঘটনার গুরুত্ব ও মহত্ত্ব অস্বীকার করতে পারে না। পৃথিবীর হিসাবে রাতের অল্প কিছু সময়ের মধ্যে আল্লাহ তাআলা নিজ কুদরতে তাঁর প্রিয় হাবীব ﷺ-কে বায়তুল মুকাদ্দাস ও ঊর্ধ্ব-জগতে বিস্ময়কর সফর করিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রতিটি মুসলমান দৃঢ়ভাবে ঈমান রাখে, আর এটি ফরয (শারীরিকভাবে ইসরা ও মেরাজ সংঘটিত হয়েছে – এ বিশ্বাস করা অত্যাবশ্যকীয়)।
হতে পারে এই ইসরা ও মেরাজের ঘটনাটি রজব মাসেই সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু সীরাতের কিতাব থেকে পর্যালোচনা করে উলামায়েকেরাম মেরাজের সংঘটিত হওয়ার তারিখ/মাস সম্পর্কে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, অন্য মাসে মেরাজ সংঘটিত হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। বিস্তারিত আলোচনার মধ্যে রবিউল আউয়াল, রমযান ও যুলহিজ্জা মাসে মেরাজ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ আছে।
মেরাজ রজব মাসেই সংঘটিত হোক অথবা অন্য মাসে, লাইলাতুল মে’রাজ-কে কেন্দ্র করে কোনো বিশেষ ইবাদত প্রমাণিত নেই। আমরা যদি এমন বিষয়ের অনুকরণ ও অনুসরণ করি যা রাসূলে আকরাম ﷺ-এর পবিত্র হায়াত ও সাহাবা রা. এর কথা ও কাজ দ্বারা প্রমাণিত নয়, তা পালন করা সম্পূর্ণ সুন্নত পরিপন্থী হবে। এতে সওয়াবের পরিবর্তে সীমালঙ্ঘন ও গুনাহ হবে।
এরই বেশি সম্ভাবনা যে, নবুয়তের পঞ্চম বর্ষে মেরাজের ঘটনাটি ঘটেছিল। তারপর প্রিয় নবীজী ﷺ আঠার বছর দুনিয়াতে ছিলেন। এত দীর্ঘ সময়ে কোন বিশেষ ইবাদত তাঁর ﷺ বা তাঁর সাহাবা রা. থেকে প্রমাণিত নেই। অতএব আমরা লাইলাতুল মেরাজকে কেন্দ্র করে কোন বিশেষ ইবাদত বা বিশেষ নামায পড়ব না এবং এই শিরোনামে নির্দিষ্ট দিন উদযাপন করব না।
মূলত: রজব মাসে ইবাদত-বন্দেগী বাড়িয়ে দেওয়া এজন্যই উচিত যে, রজব সম্মানিত চার মাসের অন্তর্ভুক্ত এবং রমযান আসছে। এ সময় থেকেই পবিত্র রমযান মাসের প্রস্তুতি শুরুর নির্দেশনা হাদীসে রয়েছে।
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبَ وَشَعْبَانَ وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ ‘আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফী রাজাবা ওয়া শা’বান ওয়া….(হে আল্লাহ, রজব ও শা’বান মাসে আমাদের বরকত দান কর এবং…) ‘ — এ দোআটি অর্থের প্রতি লক্ষ্য করে পড়া ও আমল করা উচিত। হাদীসবিশারদগণ এটির মান নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন; কিন্তু দোআটিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করার কথা বলা হয়নি। কারণ একে তো দোআটির অর্থ সুন্দর, আবার নেককারগণ যুগ যুগ ধরে যেটি আমল করছেন — এরকম দোআগুলো করার ব্যাপারে শরীয়ত প্রশস্ততা রেখেছে — সুন্নাহ না মনে করে দোআটি করলে কোনো দ্বিধা থাকে না।
যে সময়টি যত বরকতপূর্ণ হয়ে থাকে, তার ভুমিকাও তত বরকতপূর্ণ। রমযানের ঠিক পূর্বের মাস হল শাবান। সে হিসেবে শাবান মাসই তো রমযানের একমাত্র ও যথার্থ ভূমিকা হতে পারত! কিন্তু যেহেতু সম্মানিত রজব শাবানের পূর্বের মাস, তাই কেমন যেন রজব থেকেই রমযানের প্রস্তুতি নেওয়া সহজ ও বেশি যৌক্তিক।
আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে অবশ্যই বরকত দিতে চান। বরকতকে এক মাস পূর্ব থেকে নয়, দুই মাস পূর্ব থেকে বৃদ্ধি করে দিলে সেটি কি তাঁর পক্ষে একটুও কঠিন?! বাস্তবিকই উনার দান অসীম ও অশেষ।
বান্দার পক্ষ থেকে একটু চেষ্টা করলেই আল্লাহ তাআলার রহমত ও বরকত অর্জন করা সম্ভব (মুক্ষাপেক্ষী তো আমরাই)। আমাদের তাই আন্তরিকতার সঙ্গে এখন থেকেই (রমযানের জন্য) দোআ ও চেষ্টা করে যাওয়া উচিত!