Dark Mode Light Mode
দ্বীনি বিভিন্ন কাজ ও কর্মী: প্রতিদ্বন্দী নয়, পরস্পরের সম্পূরক-২
দ্বীনি বিভিন্ন কাজ ও কর্মী: প্রতিদ্বন্দী নয়, পরস্পরের সম্পূরক-১
সতর্ক হও মুসলিম

দ্বীনি বিভিন্ন কাজ ও কর্মী: প্রতিদ্বন্দী নয়, পরস্পরের সম্পূরক-১

তালীম, তাবলীগ, তাযকিয়া, জিহাদ, ইসলামী সিয়াসত (রাজনীতি) – সবগুলোই ইসলাম তথা দ্বীনের এক একটি কাজ ও ময়দান। সবই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সবগুলিরই ফজিলত দ্বারা পবিত্র কুরআন ও আহাদীস পরিপূর্ণ। সবগুলিই নবিওয়ালা কাজ। প্রত্যেক যুগেই এই সবগুলোর চর্চা উম্মতের মধ্যে ছিল, রয়েছে এবং থাকবে। পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে কোনোটির প্রতি গুরুত্ব ও চর্চা অধিক হলেও অন্যটিকে কোনোভাবেই অবহেলা করা হয়নি এবং সম্ভবও না। উম্মতের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ খুব ইখলাস, মুজাহাদা ও কুরবানির সাথে বিভিন্ন ময়দানে মেহনত করেছেন, কখনই তারা অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নয়, সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন; নিজেকে বড় মনে করে নয়, বরং নিজেকে মিটিয়ে দিয়ে অন্য সবাইকে বড় মনে করে দ্বীনি কাজে আত্মনিয়োজিত রয়েছেন।

প্রতিটি ময়দানও এত বিশাল যে, এক একটির মাঝে বড় বড় ময়দান বিদ্যমান। সবগুলিই দ্বীনের পরিপূর্ণতায় সহায়ক। কোনোটিই স্বতন্ত্রভাবে “পূর্ণ দ্বীন” তো নয়-ই বা এমনও নয় যে, কোনো একটির মাধ্যমে পূর্ণ দ্বীন বা দ্বীনি পরিবেশ গঠন সম্ভব। একটি অপরটির সহযোগী, সহায়ক ও সম্পূরক। তবে হ্যাঁ, প্রতিটি ময়দানই এমন যে, পূর্ণ দ্বীনকে অনুসরণের জযবা উম্মতের মধ্যে তৈরি করে।

দ্বীনের কর্মীদের মধ্যে হৃদ্যতা, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য খুবই প্রয়োজন এবং অত্যাবশ্যকীয়। বিভিন্ন পর্যায়ে কিছু মতভেদ, কিছু কর্ম পার্থক্য – এগুলো থাকতে পারে। এগুলো ময়দানের বা ক্ষেত্র বিশেষে কাজের ধরণের ভিন্নতার কারণে হয়ে থাকে। এগুলোর কারণে মুসলমানদের মাঝে কোনো প্রকার রেষারেষি, দলাদলি বা শত্রুতার প্রশ্নই উঠে না। সকল মুসলমানত ভাই ভাই। দ্বীনের কাজ করতে গিয়ে তাই একেক কাজে নিয়োজিত থেকেও তারা ভাই, সমাজেও তারা ভাই, সবখানেই তারা ভাই। পরস্পরের প্রতি চরম ও পরম তাদের আন্তরিক সম্পর্ক। কর্মগত ও চিন্তাগত কিছু পার্থক্য তাদের ঈমানী সম্পর্কে কোনো রকম ফাটল সৃষ্টি করতে পারে না। বরং সহযোগিতার হাত ও পারস্পরিক মমত্ববোধ ঈমানদারদেরকে পরস্পরের প্রতি আরো বেশি উদার করে দেয়। ঈমানদারদের মন-মানসিকতা তথা চিন্তা ভাবনা-কে আরো বহুগুণ আল্লাহ তাআলা মুখী করে দেয়, করে দেয় আখেরাতমুখী।

নিজের দোষ যার সামনে রয়েছে, সে অন্যের দোষ অন্বেষণের কোনো সময় ও ফুরসতই পায় না। নিজের সংশোধন যার আন্তরিক অভিপ্রায় হয়, তার মনোযোগ কখনো অন্য কিছু হয় না। যেখানে তার দায়িত্ব সেখানে সে প্রয়োজনে “নাকও গলাবে”, যেখানে তার কোনো দায়-দায়িত্ব নেই, সেখান থেকে সে নিজেকে বিরত রাখবে।

আজ আমরা দ্বীনের একটি কাজে নিয়োজিত হয়ে সাথে এমন কিছু কাজে লিপ্ত হয়ে যাই যা নিতান্তই দুঃখজনক এবং মারাত্মক ক্ষতিকর। যেমন: সাধারণ মানুষের উলামাদের প্রতি যত্রতত্র সমালোচনা। এমনকি তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ, অন্য ময়দানে নিয়োজিত মুসলমানদের হেয় করা বা তাদের ভুল-ভ্রান্তিকে ন্যাক্কারজনক ভাবে তুলে ধরা, এমন ভান করা বা এমন ধারণা ও মানসিকতা পোষণ করা যে, আমার কাজই শ্রেষ্ঠ, অন্যদেরটা যতই ভালো কাজ হোক – তা গৌণ। এই সবই মারাত্মক বাড়াবাড়ি; এই রকম চিন্তা-চেতনা ও ধারণা খুবই ক্ষতিকর; অনেকগুলিতো এমন যে, সেগুলি মৃত্যুর সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ঈমান হারানোরও কারণ পর্যন্ত হতে পারে! (আল্লাহ তাআলার পানাহ।)

মুসলমান – সে যত সাধারণই হোক – সে আমার ভাই। সে আমার থেকে বহু গুণে উত্তম। এটাই হতে হবে আমাদের ধারণা। তার কোনো কাজ স্পষ্টতই খারাপ হলে, আমি সেই দিকে নিজেকে মনোযোগী না করে তার গুণ দেখব। হতে পারে তার ভিতর এমন কোনো গুণ রয়েছে, যার কারণেই সে ক্ষমা পাবে; আর হতে পারে আমার মধ্যে এমন কোনো দোষ রয়েছে যার কারণে আমি ধরা পড়ব! সুতরাং, কোন সাহসে আমার ভাইয়ের আয়েব (দোষ) আমি দেখছি? এটা নিষেধ; এটা গুনাহ। হ্যাঁ, আমার নিজের ভিতর কী দোষ আছে, সেটা খুঁজে খুঁজে সংশোধন করব। আর যাকে সংশোধন করার দায়িত্ব আমার উপর বর্তায়নি, যাকে উপদেশ দেয়ার দায়িত্ব আমার উপর বর্তায়নি, যে মেহনত/কাজ আমি বুঝি না, সেই ব্যক্তি তথা জামআত বা কাজ সম্পর্কে আমার মাথা ঘর্মাক্ত করছি কেন? তাদের বিষয়ে আমার মুখ নেতিবাচক মন্তব্য করবে – এ তো হতেই পারে না। আমি নিজেকে বাঁচানোর জন্যই তা থেকে নিজের মন এবং যবান-কে পরহেয করব। এতে অনেক কুধারণা, অনর্থক কথা তথা গীবত-শেকায়াত থেকে আমি বাঁচব ইনশাআল্লাহ । যদি আমার মতে, কারুর সম্পর্কে আমার এই সমালোচনা, ধারণা, নেতিবাচক সিদ্ধান্ত সঠিক হয়ে থাকে, তাহলে আমি তা কোথা থেকে যাচাই করেছি? খুব বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জেনেছি কী? এটা সঠিক নিক্তিতে যাচাই করতে হবে। নতুবা আল্লাহ তাআলা কুধারণার জন্য আমাকে ধরবেন।

আমি আমার ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা, নিয়ত, প্রচেষ্টা, আবেগ, মন্তব্য – সবকিছুকেই শরিয়তের অনুগামী করে রাখব। সেজন্যই তো আমি মুসলমান।

চলবে ইনশাআল্লাহ……

আমাদের সকল আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন!

By pressing the Subscribe button, you confirm that you have read and are agreeing to our Privacy Policy and Terms of Use
Add a comment Add a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous Post

দ্বীনি বিভিন্ন কাজ ও কর্মী: প্রতিদ্বন্দী নয়, পরস্পরের সম্পূরক-২

Next Post

সতর্ক হও মুসলিম