হায় আজ মুমিন হৃদয় কতই না দুঃখ ও বেদনা ভারাক্রান্ত।
এটি সেই সময় যখন সারা দুনিয়ার চারপাশ থেকে লাব্বাইক বলতে বলতে মুমিনগণ আশেকানা রূপ নিয়ে কাবার দিকে ছুটে আসে।
এটি সেই অতি পবিত্র হজ্বের মৌসুম। মক্কা মুকাররমা লক্ষ লক্ষ হাজিদের দ্বারা ভরা থাকে। একে একে মীনা-আরাফা-মুযদালিফা মুখরিত হয়ে ওঠে।
কিন্তু চিত্রপট আজ একটু ভিন্ন…
এ অবস্থায় আল্লাহ তাআলার কাছে আমাদের বিশেষভাবে ক্ষমা চাওয়া উচিত। উম্মাহর দুর্দিনে উম্মাহকেই কাঁদতে হবে। উম্মাহকে বিশেষভাবে তওবা-ইস্তেগফার করতে হবে। না আল্লাহ তাআলা আমাদের সামান্যতম ইবাদতের মুখাপেক্ষী, না কারো থেকে কোনোকিছুর অণু পরিমাণ প্রয়োজন রয়েছে তাঁর। মুখাপেক্ষী তো তাঁর প্রতি আমরা ও সারা জাহান। সবাই-সবকিছু শত ভাগ মুখাপেক্ষী তাঁর। তিনি সম্পূর্ণভাবেই সবার অমুক্ষাপেক্ষী। তিনিই একচ্ছত্র খালিক-মালিক-রাযিক, অসীম ক্ষমতাধর। গাফফার, রাযযাক, সাত্তার, জাব্বার, আলীম, কারীম, রাহমান, রাহীম, কাদীর, মুদাব্বির — রাব্বুল আলামীন।
আমরা জানি যে, হজ্ব-কুরবানি হল প্রেমময় আমল। আশেকদের সঙ্গে সব অবস্থায়ই আল্লাহ তাআলার একটি বন্ধন অটুট রয়েছে। যদি বান্দার নিয়ত ও প্রচেষ্টা খাঁটি থাকে, আল্লাহ তাআলার দরবারে হাজির হওয়ার পথে শত বাঁধা, প্রতিকূলতা, ব্যর্থতা আর বিফলতার পরিণতি আদৌ মন্দ নয়। বরং এ ক্ষেত্রে ফল তো একটিই — আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও তাঁর রহমত অর্জন (ইনশাআল্লাহ)।
আমাদের প্রত্যেককে নিজ অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে শোধরাতে হবে। তাহলে আল্লাহ তাআলার ক্রোধের থেকে বাঁচা যাবে। মালিককে নারাজ করেই আজ আমাদের এ দুর্দশা হয়েছে। না হলে, যারা এত প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজেকে আল্লাহ-মুখী রেখেছেন তারা আল্লাহর দরবারে হাজির না হতে পেরেও, বরং সব অবস্থায়ই, সফল; কিছুমাত্র বিফল নন। যেমনটি কবি বলেন,
এ পথে বাহাদুরি নয়
দেখা হয় বান্দা
কতটুকু নত হয়,
কত বিনয়ভরে
মাথা হেট করে
যেতে তৈরি হয়*।
(*অর্থাৎ সফরে হেজাযের জন্য সে কতটুকু আন্তরিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে)
অনেক আগমনকারীর চেয়ে
ব্যর্থ মনোরথ হে তুমি!
ধন্যবাদ তব আফসোস
ধন্য তব নিয়ত আর দোআ,
শোনা হয়েছে তোমার ফরিয়াদ
তোমার তরেই তাঁর কবুলিয়াত!
আগমনে বিফল ওগো!
তুমি সফল, তুমি সফল
প্রেমিকের খাতায়
তব নাম হয়েছে নকল!
নিঃসন্দেহে এ হল নেক বান্দাদের সঙ্গে কারীম রবের সম্পর্কের সুমিষ্ট ফল।
আমরা সবাই দোআ-কান্নাকাটি করি যেন আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাতের আগে দুনিয়াতেই একটিবারের জন্য হলেও তাঁর দরবারে উপস্থিতির তাওফীক হয়ে যায়। (কেবল এই ইচ্ছাটুকু অন্তরে লালন করাও কি কম বড় নেয়ামত?!) হজ্বের মৌসুমে এ দোআ করব না তো আর কখন, কবে করব!?
আসুন সবাই আমরা শুধরে যাই; অনেক বেশি জুলুম করে ফেলেছি আমরা নিজের ওপর।
প্রবল আশা করা যায় যে, আমাদের এ তওবা-ইস্তেগফার আর কান্নাকাটি বৃথা যাবে না; আবার মক্কা-মদিনা হাজীদের যিকির-দোআয় মুখরিত হয়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ।