Dark Mode Light Mode

সম্মানের মোহ

প্রবল ফেতনার সময়ের অন্যতম একটি লক্ষণ হল সম্মানের মোহের ব্যাপকতা। যে যেভাবে পারে সম্মান অর্জনের প্রতিযোগিতায় নামবে।

ক্ষমতা, ব্যবসা, চাকুরি, লেখাপড়া সবকিছুর মূল হবে মানুষ আমাকে এই বলবে, সেই বলবে। কী নিজ নফসের হক আর পরিবারের হক, সবকিছু জলাঞ্জলি দেবে সে এই মোহে। আল্লাহ পাকের রাহে সময় ব্যয়ের সময় হবে না; কিন্তু এমন স্থানে ছুটে যাওয়ার সময় বের করা হবে যেখানে ‘না গেলে’ মান-সম্মানের প্রশ্ন আসবে(!)

আমাদের প্রত্যেককে নিজের অবস্থা ও অবস্থান যাচাই করতে হবে।

কত সামাজিক রীতিকে আমরা কেবল এজন্যই স্বাগত জানাই যে এগুলো না করলে সমাজে আমার নাক কাটা যাবে। কত কাজে এজন্য জড়িয়ে যাই কারণ তা না করা হলে আত্মীয়, সহকর্মী ও বন্ধুরা মন্দ বলবে। অথচ সেগুলির দ্বীনি বা দুনিয়াবী লাভের পরোয়া করা হয় না। হ্যাঁ ঐ লাভ দেখা হয় যা বাস্তবে ক্ষতিকর। যার মধ্যে নিজের মনতুষ্টি ছাড়া আর শুধু মানুষকে খুশি করার উদ্দেশ্য বিদ্যমান। জগৎ-সংসারের লাভ অর্জন করতে গেলে যদি ঈমানী ক্ষতি পোহাতে হয় সেটা সবচেয়ে বড় ক্ষতি। কিন্তু সেটাকেই লাভ মেনে করা হয়, সেটারই লোভ করা হয়।

নিজের বিষয়ে নিজের সিদ্ধান্ত নেয়ার রীতি মানুষ তখনই গ্রহণ করে যখন তার কোনো অভিভাবক থাকে না, থাকে না কোনো পথপ্রদর্শক। দ্বীন কিন্তু এমনটা শেখায়নি আমাদের। যারা একা চলে তাদের পথ বড় ঝুঁকিপূর্ণ হয়। এ কথা দ্বীন-দুনিয়া সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

সম্মানের তো প্রয়োজন আছে। কিন্তু যে সম্মান অর্জনে আমাকে নেক সঙ্গ থেকে দূরে থাকতে হয়, আর পরিণতিতে আল্লাহ পাকের পথ থেকে সরে যেতে হয়, সেই সম্মান কি কখনো লাভজনক হয়ে থাকে? কখনো নয়।

দ্বীন ও দুনিয়ার পদ ও পদবীই যদি উদ্দেশ্য হয় তাহলে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের বিষয়টি তো গৌণ হয়ে গেল‍। অথচ মুমিনের সব কাজই আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিকে কেন্দ্র করে হওয়া উচিত। তারপর যেটা আল্লাহ তার বান্দার জন্য নির্ধারণ করবেন সেটাতেই সন্তুষ্ট থাকবে সে।

আজ সমাজে এত অনাচার, হিংসা-বিদ্বেষ ও রেষারেষির অন্যতম কারণ হল সবাই পদ ও পদবীর আকাঙ্ক্ষী। কথা বলার আর কাজ করার মূল উদ্দেশ্যই হল ‘আমি আমার ভাগ চাই’, ‘আমি আমার দাবি পূরণে মরিয়া’। এ চিন্তা কি কখনো মুমিনের চিন্তা হতে পারে?! কখনো নয়।

কাব ইবনে মালেক رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ  ﷺ বলেছেন: দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে একটি ছাগলপালের মধ্যে ছেড়ে দিলে এগুলো ছাগলপালের জন্য এর চেয়ে বেশি ক্ষতিকর হবে না, যতটুকু ক্ষতিকর হয় মানুষের দ্বীনের জন্য তার সম্পদের মোহ ও সম্মানের লোভ। তিরমিযী, দারেমী

আখেরাত সত্য। সেখানের হিসাব-নিকাশ সত্য। আমাদের সব কথা ও কাজ লিপিবদ্ধ হচ্ছে। কোন নিয়তে কী করছি – সবকিছু লিপিবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। সেগুলি আল্লাহ তাআলার সামনে পেশ করা হবে। আর আমরা কে কী করছি – তিনিতো সবই দেখছেন এ থেকে বিস্মৃত হওয়া যাবে না।

সেজন্যই বার বার সত্যকে নবায়ন করতে হয়। তাত্ত্বিকভাবে নেক-পথ বোঝার পরেও সত্যকে বার বার নবায়ন করতে হয়। আজীবন সত্য ও সঠিক কথা শুনতে থাকতে হয়। নেক-সাহচর্যের এখানে অনেক বড় গুরুত্ব। নেক-সঙ্গ অবলম্বন করে বার বার সত্যকে শোনার ও চিন্তার মাধ্যমেই সত্যের ওপর আমল সম্ভব ও সহজ হয়।

মানুষের নফস বড় চতুর। সে বলে – তুমি সব বুঝো, তোমাকে কেউ পথহারা করতে পারবে না। আর আমরা যখনই এবং যতবারই নিজের বুদ্ধি অবলম্বন করে কাজ করি, আসলে ততবারই অধঃপতিত হই। এ কথাটি যে স্বীকার করি না, এটাতো হল অবাধ্যতার ও অধঃপতনের আসল প্রমাণ – নিজের নফসের ওপরই আমার আস্থা! কবি বলেন,

যে রাজদরবারে থাকে
সে রাজার ভয়ে মাথা নত রাখে
রাজার স্নেহ-দৃষ্টি তার ওপরে,
আর যে জঙ্গলে-জঙ্গলে ঘুরে
সে বাঘ-ভাল্লুকের সাথে থাকে
রাজার ঠেকা নেই তাকে বাঁচাবে।

আমাদের সকল আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন!

By pressing the Subscribe button, you confirm that you have read and are agreeing to our Privacy Policy and Terms of Use
Add a comment Add a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous Post

হতাশা নয়: বার বার তওবাই সফলতার পথ

Next Post

জীবনকে সহজ ও সুন্দর করার উপায়