Dark Mode Light Mode

সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা ও দোআ করে সত্য অনুসন্ধান করুন

কুরআন-সুন্নাহর সঠিক শিক্ষা উলামায়েকেরাম ব্যতিত বোঝা সম্ভব নয়। প্রাথামিক পর্যায়ে কুরআন-হাদীসের সরাসরি একক অধ্যায়ন, সেটি কিতাব/বই থেকে হোক, কিংবা আজ যেমন: অনলাইনের মাধ্যমে প্রবন্ধ/ভিডিওর মাধ্যমে হচ্ছে — এ ধরণের মাধ্যমে হোক, এগুলো বিশেষ শর্তে যদিও ঠিক আছে, মূল শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে ঐসব আলেমগণ থেকে যারা আমানতদারির সঙ্গে দ্বীন-ইসলামকে উম্মতের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন।

এ প্রশ্নের জবাব, কিভাবে বুঝব কে হক আর কে/কারা (কোন্ আলেম) না-হক, অর্থাৎ কে সত্যর ওপর আর কে সত্যের ওপর নেই (বা এমনও হতে পারে প্রতারক!), বোঝার জন্য নিয়তকে খাঁটি করা জরুরি। তারপরই যেটি জরুরি তা হল, দ্বীনকে জানার জন্য কয়েকজন আলেমগণের কাছে যাতায়াত করা। সঙ্গে আল্লাহ তাআলার কাছে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করে দোআ করা উচিত। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি খাঁটি ভালোবাসা থাকলে হকের ওপর প্রতিষ্ঠিত আলেমগণকে চেনা যাবে, সে ব্যবস্থা আল্লাহ পাকই করবেন।

বর্তমান সময়ে অধিকাংশ মানুষ আলেমগণের কাছে যায় না। আলেমগণের কাছে গেলেও তাদের মাজলিসে দীর্ঘ সময় ব্যয় করে না। একবার নয়, কোনো আলেমের একাধিক মাজলিসে দীর্ঘদিন যাতায়াত করতে হবে। যদি কারো মধ্যে সত্যকে চেনার ব্যাপারে খুব বিভ্রান্তি-সন্দেহ-শোবা থাকে, প্রাথমিক পর্যায়ে একাধিক আলেমের কাছে যাওয়া খুবই জরুরি। তাদের মাজলিসে একাধিক বার উপস্থিত থেকে তাদের সান্নিধ্যে দীর্ঘ সময় ব্যয় করা উচিত। প্রয়োজনে, তাদের সঙ্গে বিশেষবাবে একান্তে কথা বলা উচিত। আগে থেকেই নিজের প্রশ্ন তৈরি রাখা উচিত। আন্তরিকভাবে, আদবের সঙ্গে (যেমন, তাদের সময়-সুযোগ অনুযায়ী অনুমতি সাপেক্ষে) তাদেরকে নিজের মৌলিক প্রশ্নগুলি করা উচিত। যেখানেই যাবেন, কিছু বিষয় সামনে রাখবেন/লক্ষ করবেন, যেমন:

– কতটুকু ভারসাম্য আচরণ ও জবাব পেলেন।
– কারো কাছে গিয়ে আপনি নিজের অন্তরের মধ্যে কী পরিবর্তন অনুভব করলেন।
(যদি কারু জ্ঞান-বুদ্ধি খুব সীমিত থাকে তার জন্য উপরোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তার প্রয়োজন নেই। স্বাভাবিকভাবে চেষ্টাগুলো করে যান আর দোআ করুন।)

যেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তা হল, হক বা সত্য সন্ধানে তাড়াহুড়া করবেন না। কারো বই/কিতাব কুরআনের আয়াত ও হাদীস পূর্ণ থাকা মানেই তিনি হকের ওপর আছেন, এমন কিন্তু নয়! কারো বইয়ে আপনি নিজের মতের বিপরীত অনেক কিছু পাচ্ছেন বলেই তিনি হকের ওপর নেই, এমনও কিন্তু নয়। আমরা বলি যে আমরা কম জানি, কিন্তু যাচাই করতে ত্বরা করি, যা আদৌ ঠিক নয়। নিজেকে আল্লাহ তাআলার কাছে সোপর্দ করুন। ঈমান ও হেদায়াত অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়! সত্যের সন্ধানে উপরে উল্লেখিত কাজগুলোর পাশাপাশি কুরআনুল কারীমের এই দোআগুলো পড়ুন (কোন্ মুসলমান সূরা ফাতিহা জানে না! কী অপূর্ব দোআ সূরা ফাতিহায়! তারপরও সূরা ফাতিহা পুরোটা দেওয়া হল, তবে অর্থ ব্যতীত):

সূরা ফাতিহা – ১:১-৭, অর্থাৎ পুরো সূরা ফাতিহা:

الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ- الرَّحْمـنِ الرَّحِيمِ- مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ- إِيَّاكَ نَعْبُدُ وإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ- اهدِنَــــا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ- صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ

সূরা আলে ইমরান – ৩:৮, দোআটি হল:

رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً ۚ إِنَّكَ أَنتَ ٱلْوَهَّابُ

অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্যলংঘনে প্রবৃত্ত কর না এবং তোমার নিকট থেকে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই তো (সব কিছুর) দাতা।

হাদীসের এই দোআটিও পড়ুন:

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ

অর্থ: হে অন্তরসমূহ পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে আপনি আপনার দ্বীনের ওপর দৃঢ় রাখুন। (দোআটি সুনানে তিরমিযী শরীফে বর্ণিত হয়েছে)

ইনশাআল্লাহ চেষ্টার সঙ্গে আন্তরিক দোআ যুক্ত হলে আল্লাহ তাআলার সাহায্য লাভ হবে।

সাথে একটি কথা না বললেই নয়, যে ফাঁদে আজ অধিকাংশ সাধারণ মানুষ আটকে পড়ছে! কোনো আলেম যখন কোনো আলেম/ব্যক্তি/গোষ্ঠির ব্যাপারে মন্তব্য করেন, হোক সেটা সাধারণ নেতিবাচক মন্তব্য, সংশোধনমূলক বক্তব্য, সরাসরি দোষারোপ কিংবা তিক্ত কোনো সমালোচনা — সাধারণ মানুষেরা (যাদের নিয়মতান্ত্রিক দ্বীনি লেখাপড়া নেই, তাদের অনেকেই) খুব দ্রুত প্রান্তিক সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় (যেমন: উনার কথা খুব খারাপ, বা উনিই সঠিক)। এটা খুব ক্ষতিকর। কখনো কোনো আলেম যখন কোনো বিষয়ে/কারো ব্যাপারে মন্তব্য করেন, সমালোচনা করেন – সেটা যথার্থই করেন। কখনো কোনো আলেম বা কেউ যখন কোনো বিষয়ে/কারো/কোনো গেষ্ঠির ব্যাপারে মন্তব্য করেন, সমালোচনা করেন — সেটার পেছনে উদ্দেশ্য বা পদ্ধতিগতভাবে কোনো অন্যায় পক্ষপাতিত্ব থাকে।

আরেকটি কথা অনেকে বলে থাকেন। তা হল, সবার কথাই ভালো লাগে। আমি সবার কাছ থেকে ভালো জিনিসটি নিয়ে থাকি। এ কথাটির অর্থও কখনো ইতিবাচক, কখনো বিপরীত। যাদের দ্বীনি জ্ঞান খুবই স্বল্প ও বোধগম্যতাও সীমাবদ্ধ, তাদের জন্য অনেকক্ষেত্রে এ নীতি প্রযোজ্য। অন্য সবার উচিত সাধ্য অনুযায়ী ইসলামের বুনিয়াদি বিষয়াদি জানা ও সত্যের মাপকাঠি জেনে সত্য-অসত্য নিরূপণে অগ্রসর হওয়া, কেবল সবার ভালো গ্রহণ করার ওপর আস্থাবান হয়ে বসে না থাকা। (যদিও একটি কথা সত্য। তা হল, সবার (প্রকৃত) ভালোকে সম্মান করা আর তা প্রয়োজন পরিমাণ গ্রহণ করায় কোনো বাঁধা নেই। বরং তা প্রশংসনীয়। তাই বলে হক-বাতিলের মানদন্ডে যাচাই করে কোনো কিছু বাতিল সাব্যস্ত হলে তা গ্রহণের প্রশ্নই আসে না! আসলে এখানেও স্বল্প জ্ঞানী ব্যক্তি যেন আলেমগণকেই জিজ্ঞেস করে জেনে নেয়। এটিই কুরআন-সুন্নাহ নির্দেশিত মূলনীতি।)

মনে রাখবেন! আমরা ভুল বুঝতে পারি, ভুল জানতে পারি। আমাদেরকে কেউ ভুল বোঝাতে পারে, ভুল পথ দেখাতে পারে। আল্লাহ তাআলা সহায় হলে, আমরা ভুল পথে গিয়েও শুধরে যেতে পারব। তাই আমাদের দিক থেকে করণীয় কাজগুলো আমরা যথাযথভাবে করব ইনশাআল্লাহ (এটিই আমাদের দায়িত্ব)। আমরা যেন নিয়ত, চেষ্টা ও দোআর কাজ যথাযথভাবে করি। এক্ষেত্রে আল্লাহর কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণ ও সবর প্রয়োজন। ইনশাআল্লাহ সত্য উন্মোচিত হবে। কমপক্ষে, সত্যের অনুসন্ধানে আমরা দায়মুক্ত হব ইনশাআল্লাহ।

সত্যের সন্ধানে নিজের মনের প্রবণতাকে প্রাধান্য দিলে আর তাড়াহুড়া করা অনুচিত।

আমাদের সকল আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন!

By pressing the Subscribe button, you confirm that you have read and are agreeing to our Privacy Policy and Terms of Use
Add a comment Add a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous Post

হক-বাতিলের সংঘর্ষ চিরন্তন: যে উপলব্ধি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে

Next Post

লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান বা শবে বরাত