Dark Mode Light Mode

বিদায় রমযান: কিভাবে কাটাবো বাকিটা বছর

যুহদ ও তাকওয়া অর্জনের, সওয়াব ও নেকী কামানোর বসন্তকাল রমযানুল মুবারক ইতিমধ্যে বিদায় নিয়েছে। এ মাসের প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি মুহূর্ত ছিল জাহান্নাম থেকে দূরে সরার এবং জান্নাতের নিকটবর্তী হওয়ার বিশেষ অনুশীলনকাল। রমযান আমাদেরকে শিক্ষা দিয়ে গেছে, পাপ পরিহারের এবং বন্দেগীর নিয়মনিষ্ঠা। খাঁটি মুমিন বান্দা সারা বছর রমযানের নূরে নূরান্বিত থাকবে, এর আলোয় উদ্ভাসিত হবে। এ নূর তাকে অন্ধকারে আলোর দিশা দিবে। রমযানে মুমিন বান্দা যে অনুশীলন করেছে তার প্রয়োগকাল সারাটি বছর, সারাটি জীবন। কেননা তার যাত্রা তো অসীমের পথে, অসীমের সীমায় পা রাখা পর্যন্ত মুমিন বান্দা রবের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে আমল করে যাবে, ইবাদত-বন্দেগীতে নিজেকে নিয়োজিত রাখবে। আল্লাহ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى‎ ইরশাদ করেন (অর্থ): “আর তুমি তোমার রবের ইবাদত কর, তোমার মৃত্যু আসা পর্যন্ত।” সূরা হিজর – ১৫: ৯৯
(অর্থ): “হে ঈমানদারগণ!” তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় কর আর মুসলিম না হয়ে মৃত্যু বরণ কর না।” সূরা আলে ইমরান – ৩:১০২

আয়াতে কারীমাগুলো আমাদেরকে বলে দিচ্ছে, মুমিন বান্দার পুরো জীবনটাই হল নেকী কামানোর এবং আখেরাত বানানোর শস্যক্ষেত্র। রমযানের কৃত আমলগুলোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখার মাঝেই রয়েছে রমযান মাসের প্রকৃত সার্থকতা। পবিত্র কুরআন-হাদীস অধ্যয়ন করলে আমাদের সামনে একটি বাস্তবতা স্পষ্টরূপে ফুটে ওঠে। তা হল, কোনো আমল কবুল হওয়ার অন্যতম আলামত হল, নিয়মিত সে আমল করতে পারা এবং সে আমলের সাথে সাথে অন্যান্য আমল করার তাওফীক লাভ করা। চুম্বক যেমন লোহাকে আকর্ষণ করে, তেমনি এক আমল অন্য আমলকে আকর্ষণ করে; টেনে আনে। গুনাহের ক্ষেত্রেও এ সত্যটি প্রযোজ্য। সুতরাং, রমযানে আমরা যে আমলগুলো করেছি তা কোনোভাবেই ছাড়া যাবে না। অন্যথায় সব চেষ্টা-সাধনাই পণ্ড হয়ে যাবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন (অর্থ): “আর তোমরা সে নারীর মত হয়ো না যে শক্তভাবে রশি পাকানোর পর তা নষ্ট করে ফেলে।” সূরা নাহল – ১৬:৯২

আমাদের সারা বছরের প্রতিটি দিনের অন্যতম কর্তব্য হল, নিয়মিত জামআতে শামিল হয়ে নামায আদায় করা। নবীজী ﷺ অন্তিম মুহূর্তেও নামাযের ব্যাপারে অসিয়ত করে গিয়েছেন। অর্ধ- জাহানের খলিফা হযরত উমর ফারুক رضي الله عنه একবার ইসলামী খেলাফতের সবগুলো প্রদেশের গভর্নর, নগরকর্তা ও পদস্থ লোকদের কাছে একটি ফরমান পাঠান। সে ফরমানে হযরত উমর رضي الله عنه বলেন (অর্থ): “আমার কাছে আপনাদের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজ নামায। যে ব্যক্তি নামায হেফাজত করে, তা আদায়ে যত্নবান থাকে সে দ্বীন হেফাজত করল; পক্ষান্তরে যে নামায নষ্ট করল, সে (নিজ) দ্বীনের অন্যান্য বিষয় ক্ষতি করল।” ইমাম মালিক, মুআত্তা: হাদীস নং, ৫

কাজেই কারো এ কথা ভাবার সুযোগ নাই যে, আমার উপর যেহেতু জাতির অনেক বড় দায়িত্ব অর্পিত, তাই আমার জন্য নামাযে অবহেলা করার সুযোগ রয়েছে। কক্ষনো নয়! কেননা যে নামাযে অবহেলা করবে সে তো সর্বক্ষেত্রেই ঝামেলা সৃষ্টি করবে।

মাঝে মাঝে নফল রোযাও রাখা দরকার। বিশেষত: শাওয়াল মাসের ছয় রোযা, আরাফা, আশুরা, শবে বরাত, প্রতি মাসে চন্দ্র তারিখ হিসাবে ১৩,১৪,১৫ তারিখের রোযা এবং সম্ভব হলে প্রতি সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখা উচিত। এ সব দিনে রোযা রাখার ব্যাপারে হাদীস শরীফে বিশেষ ভাবে তাগিদ দেয়া হয়েছে এবং বহু ফজিলতের কথা বিবৃত হয়েছে। সহীহ মুসলিম: হাদীস নং,১১৬২,১১৬৩,১১৬৪, তিরমিযীঃ হাদীস নং,৭৪৫ ইবনে মাজাহ.

রমযানে আমরা যেভাবে পবিত্র কুরআনের সংস্পর্শে থেকেছি পবিত্র কুরআনের সাথে এখনো সে সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করা, কুরআনের মর্ম বুঝার চেষ্টা করা এবং কুরআনের নির্দেশনালোকে মেনে জীবন গঠন করা প্রতিটি মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য। আফসোস, আজ কুরআনের গেলাফে ময়লার আস্তর জমে যায়, অথচ তা পরিষ্কার করার জন্যও কাউকে পাওয়া যায় না।

রমযানের সবচেয়ে বড় প্রশিক্ষণ ছিল, তাকওয়া অর্জন করা; হারাম থেকে বেঁচে থাকা এবং হালালকে গ্রহণ করা। সুতরাং ওজনে কম দেয়া, পণ্যে ভেজাল মিশানো, চুরি-ডাকাতি, সুদ-ঘুষ সহ সব ধরনের অমানবিক কর্ম-কাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে।

এরপর জীবন চলার পথে যদি ভুল হয়েই যায়, গুনাহ হয়ে যায়, তাহলে বান্দার হক আদায় করে দিয়ে আল্লাহর দরবারে তাওবা করার দরজা তো খোলা আছেই, চোখ বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত। সূরা যুমার – ৩৯:৫৩,৫৪, সহীহ মুসলিম ২/৩৫৮

তাছাড়া দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজকেই শুধুমাত্র দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের মাধ্যমে সওয়াবের এবং আখেরতের কাজ বানিয়ে ফেলা যায়। দুনিয়ার যে কোনো হালাল কাজ করার আগে যদি এ চিন্তা করা যায় যে, ‘এ কাজ তো আমি আমার আল্লাহর জন্য করছি’ তা হলেই আমি আমার ওঠা-বসা, খাওয়া-দাওয়া, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরী-বাকরি সব কিছুতেই সওয়াব পাবো। তাই তো আল্লাহর হাবীব ﷺ ইরশাদ করেন (অর্থ): “লোকে তার স্ত্রীর মুখে যে লোকমা তুলে দেয় সেটাতেও তার জন্য সওয়াব লেখা হয়।” সহীহ মুসলিম: হাদীস নং, ৫৪. তাই চাই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং বারবার নিয়তের তাজদীদ ও নবায়ন।

লেখক: হাফেজ মাওলানা আতাউর রহমান হেলাল, খতীব, বায়তুন নূর খাজে দেওয়ান জামে মসজিদ,লালবাগ,ঢাকা. প্রিন্সিপাল, জামিয়া মাদানিয়া কোলাপাড়া, শ্রীনগর, মুন্সীগঞ্জ ও মাদরাসা রশিদিয়া তাহসীনুল কুরআন, কাজীপাড়া, মিরপুর।

আমাদের সকল আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন!

By pressing the Subscribe button, you confirm that you have read and are agreeing to our Privacy Policy and Terms of Use
Add a comment Add a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous Post

কষ্ট-ক্লেশ করতেই হবে, অতএব…

Next Post

সঠিক পথের সন্ধান-২