Dark Mode Light Mode
যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব ও অন্যান্য বিষয় - ১ যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব ও অন্যান্য বিষয় - ১

যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব ও অন্যান্য বিষয় – ১

যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব

যার মালিকানায় সাড়ে সাত (৭.৫) তোলা সোনা বা সাড়ে বায়ান্না (৫২.৫) তোলা রূপা বা (৫২.৫) তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ সম্পদ আছে- প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন এমন প্রত্যেক মুকীমের উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, ব্যবসায়িক পণ্য, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি এবং অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর নিসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য। প্রয়োজনে অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার সমপরিমাণ হয়ে গেলে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব; পৃথকভাবে সোনা-রূপা বা টাকা-পয়সার নিসাব পূর্ণ হওয়া জরুরী নয়।

কুরবানীর নিছাব পুরো বছর থাকা জরুরী নয়; বরং ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত সময়ের মধ্যে নিছাব পরিমাণ সম্পদ থাকলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে।

কুরবানী ওয়াজিব এমন ব্যক্তি ঋণ করে কুরবানী করলে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। তবে সুদের উপর ঋণ নিয়ে কুরবানী করা যাবে না।
অপ্রাপ্ত বয়স্ক (নাবালিগ), বিকৃত মস্তিষ্ক সম্পন্ন এবং শরঈ মুসাফিরের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। তবে কুরবানীর সময়ের প্রথম দিকে এ অবস্থায় থাকার পর ৩য় দিন কুরবানীর সময় শেষ হওয়ার আগে নাবালিগ যদি বালিগ, বিৃকত মস্তিস্ক সম্পন্ন সুস্থ আর মুসাফির যদি মুকিম হয়ে যায় তাহলে (সামর্থ্যবান হলে) তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে। মুসাফির হাজ্বী সাহেবদের ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য।
যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় তারা নিজেরা যদি কুরবানী করে বা তদের পক্ষ থেকে কুরবানী করা হয় তাহলে অনেক ছওয়াব রয়েছে। তবে এমন ব্যক্তি কুরবানীর নিয়তে পশু কিনে ফেললে তা কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়, তা বিক্রি করা জায়েয নয়।

অন্যের পক্ষ থেকে কুরবানী

অন্য যে কোনো মুসলিমের পক্ষ থেকে কুরবানী করা জায়েয আছে। তবে অন্যের ওয়াজিব কুরবানী দিতে চাইলে ঐ ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। নতুবা ঐ ব্যক্তির কুরবানী আদায় হবে না। অবশ্য স্বামী বা পিতা যদি স্ত্রী বা সন্তানের বিনা অনুমতিতে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করে তাহলে তাদের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে, তবে অনুমতি নিয়ে আদায় করা ভালো। জীবিত-মৃত সকলের পক্ষ থেকে ঈসালে ছওয়াবের উদ্দেশ্যে নফল কুরবানী করা জায়েয। এ কুরবানীর গোশত দাতা ও তার পরিবার খেতে পারবে। তবে মৃত ব্যক্তি যদি কুরবানীর ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খাওয়া যাবে না। গরীব মিসকীনদের মাঝে সাদকা করে দিতে হবে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর পক্ষথেকে কুরবানী করা উত্তম। এটি বড় সৌভাগ্যের বিষয়ও বটে। নাবালিগের পক্ষ থেকে অভিভাবকের জন্য কুরবানী দেওয়া মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির জন্য নিজ দেশে বা অন্য কোথাও কুরবানী করা জায়েয।

কুরবানীর সময়

মোট তিন দিন কুরবানী করা যায়। যিলহজ্বের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে যিলহজ্বের ১০ তারিখে কুরবানী করা উত্তম। ১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাতে কুরবানী করা জায়েয। তবে রাতে আলো স্বল্পতার দরুণ জবাইয়ে ত্রুটি হতে পারে বিধায় রাতে জবাই করা অনুত্তম। অবশ্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকলে রাতে জবাই করতে কোনো অসুবিধা নাই।
যে সব এলাকার লোকদের উপর জুমআ ও ঈদের নামাজ ওয়াজিব তাদের জন্য ঈদের নামাজের আগে কুরবানী করা জায়েয নয়। অবশ্য বৃষ্টিবাদল বা অন্য কোনো ওজরের কারণে যদি প্রথম দিন ঈদের নামাজ না হয় তাহলে ঈদের নামাজের সময় অতিক্রমের পর প্রথম দিনেও তাদের কুরবানী করা জায়েয। কুরবানী দাতা এক স্থানে আর কুরবানীর পশু ভিন্ন স্থানে থাকলে কুরবানী দাতার ঈদের নামাজ পড়া বা না পড়া ধর্তব্য নয়; বরং পশু যে এলাকায় আছে ঐ এলাকায় ঈদের জামআত হয়ে গেলে পশু জবাই করা যাবে।
কুরবানীর দিনগুলোতে যদি জবাই করতে না পারে তাহলে খরিদকৃত পশু সাদকা করে দিতে হবে। তবে যদি (সময়ের পরে) জবাই করে ফেলে তাহলে পুরো গোশত সাদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে গোশতের মূল্য যদি জীবিত অবস্থার চেয়ে কমে যায় তাহলে হ্রাস পরিমাণ মূল্যও সাদকা করতে হবে। অবশ্য ঐ পশু সাদকা করা বা পশুর মূল্য সাদকা করা উভয়টির ইখতিয়ার আছে।
আর যদি ওয়াজিব কুরবানীর জন্য পশুই কিনে না থাকে এবং কুরবানীর সময় পার হয়ে যায় তাহলে কুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সাদকা করা ওয়াজিব হবে। তবে কুরবানীর দিনে পশুর মূল্য সাদকা করলে কুরবানীর ওয়াজিব আদায় হবে না; বরং পশুই জবাই করতে হবে।

কেমন হবে কুরবানীর পশু

কুরবানীর পশু মোটাতাজা ও হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম। উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এসব পশুর নর-মাদা এবং বন্ধ্যা সবই কুরবানী করা যায়। উল্লেখিত পশু ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। উট কমপক্ষে ৫ বছরের, গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি এমন হৃষ্টপুষ্ট ও মোটাতাজা হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয।
যদি পশুর বিক্রেতা কুরবানীর বয়স পূর্ণ হওয়ার কথা বলে আর পশুর শরীরের অবস্থা দেখেও তাই মনে হয় তাহলে বিক্রেতার কথার উপর নির্ভর করে পশু কেনা এবং তা কুরবানী করা যাবে।

যে ধরনের পশু কুরবানী করা জায়েয নয় এবং অন্যান্য কিছু মাসায়েল

অন্ধ, কানা পশুর কুরবানী জায়েয নয়। যে পশুর নাক, লেজ বা কোনো কান অথবা কোনো স্তন অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। তবে জন্মগতভাবেই যদি এসব অঙ্গের কোনটি ছোটো হয় তাহলে অসুবিধা নেই। যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত বেশি দাঁত ভেঙ্গে গেছে যে, ঘাস-খাদ্য চিবিয়ে খেতে পারে না এমন পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়।
ঔষধ দ্বারা দুধ শুকিয়ে ফেলা হয়েছে এমন পশু, এমন শুকনো দুর্বল পশু যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যতে পারে না বা এমন লেংড়া যে শুধু তিন পায়েই চলতে পারে চতুর্থ পায়ে ভরই দিতে পারে না। এ ধরনের পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়।
পাগল পশু কুরবানী কারা জায়েয, তবে যদি এমন পাগল হয় যে, ঘাস পানি দিলে খায় না এবং মাঠেও চরে না তাহলে সেটার কুরবানী জায়েয হবে না।
যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। তবে যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ভেঙ্গে গেছে বা জন্মগতভাবে শিং নেই সে পশু কুরবানী করা জায়েয।
গর্ভবতী পশু কুরবানী করা জায়েয। জবাইয়ের পর যদি বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তাহলে সেটাও জবাই করতে হবে। তবে প্রসবের সময় আসন্ন হলে সে পশু কুরবানী করা মাকরূহ। কুরবানীর পশু বাচ্চা দিলে ঐ বাচ্চা জবাই না করে জীবিত সাদকা করে দেওয়া উত্তম। যদি সাদকা না করে তবে কুরবানীর পশুর সাথে বাচ্চাটিকেও জবাই করবে এবং বাচ্চাটির গোশত ও যাবতীয় কিছু সাদকা করে দিবে।
কুরবানীর নিয়তে ভালো পশু কেনার পর যদি তাতে এমন কোনো দোষ দেখা যায় যে কারণে কুরবানী ছহীহ হয় না তাহলে এর স্থলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। তবে ক্রেতা গরীব হলে ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারাই কুরবানী করতে পারবে।
জবাইয়ের প্রস্তুতির সময় যদি কোনো দোষ-ত্রুটি সৃষ্টি হয়ে যায় যেমন : পা ভেঙ্গে গেল বা চোখ নষ্ট হয়ে গেল তাহলে এ পশুর কুরবানী জায়েয।
কুরবানীর পশু যদি চুরি হয়ে যায় বা মরে যায় আর কুরবানীদাতার উপর পূর্ব থেকেই কুরবানী ওয়াজিব থাকে তাহলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। গরীব (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব না) তাকে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে না।
কুরবানীর পশু হারিয়ে যাওয়ার পর যদি আরেকটি কেনা হয় এবং পরে হারানোটিও পাওয়া যায় তাহলে কুরবানীদাতা গরীব হলে (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়) দু’টি পশুই কুরবানী করতে হবে। আর ধনী হলে কোনো একটি পশু কুরবানী করলেই হবে। তবে দুটি কুরবানী করাই উত্তম।
হারানো পশুটি যদি কুরবানীর সময়ের পর পাওয়া যায় তবে কুরবানীদাতা গরীব হলে তা সাদকা করে দিতে হবে। আর সে ধনী হলে সাদকা করতে হবে না, তবে ধনীর জন্যও উত্তম হল সাদকা করে দেওয়া।

ইনশাআল্লাহ চলবে…

আমাদের সকল আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন!

By pressing the Subscribe button, you confirm that you have read and are agreeing to our Privacy Policy and Terms of Use
Add a comment Add a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous Post
হিজরী বর্ষ: একটি সরল মূল্যায়ণ

হিজরী বর্ষ: একটি সরল মূল্যায়ণ

Next Post

যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব ও অন্যান্য বিষয় - ২