Dark Mode Light Mode

দুনিয়া ও আখেরাতে মুক্তির জন্য খুবই সহজ একটি আমল

যাদের নেক কাজের ঝুলিতে তেমন কিছুই নাই তাদের অবশ্যই উচিত কমপক্ষে দরূদ শরীফ বেশি করে পাঠ করা। আর এ উপদেশটি তো স্বয়ং এই লেখকের জন্যই অধিক প্রযোজ্য! অতএব সম্মানিত পাঠক! আপনার দোআ প্রার্থী যেন এ বান্দা আমলটি করে দুনিয়া ও আখেরাতের বেড়া পার হয়ে যেতে পারি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবার জন্য ও উম্মাতে মুসলিমার জন্য দরূদ পাঠের বরকতে মুক্তির ব্যবস্থা করে দিন। আমীন। 

আমরা দিনে-রাতে যে যতটুকু নেক কাজই করি না কেন, যদি বলা হয় এসব আমলের অবস্থা, অর্থাৎ তাতে ইখলাস, সুন্নত, মনোযোগ প্রভৃতি, নিম্নমানের, সবাই এক বাক্যে স্বীকার করব। ইল্লা মাশাআল্লাহ! আল্লাহ তাআলার নেক বান্দাগণ যারা তাদের কথা ভিন্ন!

আমাদের যত পরিচয় আছে তার মধ্যে দুটি পরিচয়ই মূল ও মুখ্য। একটি হল, আমরা আল্লাহ তাআলার বান্দা। আরেকটি হল, আমরা রাসূলে আকরাম ﷺ-এর উম্মত।

রাসূলে আকরাম ﷺ-এর উম্মত হিসেবে কেয়ামতের দিন প্রিয় নবীজী ﷺ-এর সম্মুখে আমাদেরকে পড়তেই হবে! এটি চিন্তা করলে কেমন লাগা উচিত?! যেসব কাজ দুনিয়াতে আজ আমরা করছি সেগুলোর অধিকাংশই সুন্নত থেকে কত দূরে..অথচ একটু চেষ্টা করলে অনেক কাজই সুন্নত অনুযায়ী করা যায় — উচিত তো তা-ই। প্রত্যেক কাজের সুন্নত জেনে তদনুযায়ী আমল করার চেষ্টায় রত থাকা। কিন্তু এতে আমাদের গাফিলতির অন্তঃ নেই যেন!

প্রিয় নবীজী ﷺ-এর প্রতি সালাম ও সালাওয়াত পাঠ, যেটিকে আমরা দরূদ পাঠ বলে থাকি – করতে থাকলে অন্তত আশা করা যায়, কেয়ামতের দিন প্রিয় নবীজী ﷺ-এর সামনে কিছুটা হলেও আমাদের লজ্জা ‘হয়ত’ হালকা হবে (ইনশাআল্লাহ)! এতটুকুও যদি না করি, আর কিভাবে প্রিয় নবীজী ﷺ-কে নাফরমানির এত কালো মুখটা দেখাব কিভাবে?! আর আমরা তো কেয়ামতের দিন প্রিয় নবীজী ﷺ-এর পূর্ণ মুখাপেক্ষী থাকব। তিনি আমাদের কারো জন্য শাফাআত করলে তা আল্লাহ তাআলার কাছে গৃহিত হবে আর আমাদের মুক্তির ব্যবস্থা হয়েই যাবে ইনশাআল্লাহ!

***********************

আমি নবীজী ﷺ কে কতটুকু ভালোবাসি? নিশ্চয় একজন ঈমানদার হিসেবে এ ভালোবাসাটি অনেক গভীর। যদি তাকে কাছে পেতাম না জানি কী হাদীয়া-তোফা নিয়ে উপস্থিত হতাম! সে সুযোগটি তো আজ হচ্ছে না। চিন্তা করুন, আল্লাহ সুবহানু ওয়া তাআলা কী এক বিস্ময়কর ব্যবস্থা করেই রেখেছেন আমাদের জন্যও! আমরা প্রিয় নবীজী ﷺ-এর প্রতি দরূদ পাঠ করলে সেটি তার ﷺ-এর কাছে আমাদের নাম-পরিচয় নিয়ে পেশ করা হচ্ছে!! এটি কোনো মামুলি বিষয় নয়, সাধারণ ব্যাপার নয়। আমাদের পক্ষ থেকে এমন হাদীয়া নবীজী ﷺ কে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে যা তার ﷺ-এর মর্যাদাকে আরো বৃদ্ধির মাধ্যম!! আমরাই কী, আর আমাদের পঠিত দরূদই বা কেমন সেটা তো বলাই নিষ্প্রয়োজন! কিন্তু আল্লাহ সুবহানু ওয়া তাআলার যে ব্যবস্থাপনা তা মহা বিস্ময়কর, আমাদের জন্য বিশাল রহমত অর্জনের এক মহা উৎস!!

আল্লাহ তাআলা তো তাঁর হাবীব ﷺ-এর মর্যাদাকে নিজেই বুলন্দকারী, স্বয়ং তিনিই প্রিয় নবীজী ﷺ-এর সম্মানকে উত্তোলন করেছেন, করতেই থাকবেন! আমাদের মতন সাধারণ থেকে সাধারণকে তিনি দরূদ পাঠে নিয়োজিত করে কেমন যেন তাঁর হাবীব ﷺ-এর উম্মতকে সে কাজটিতে নিয়োজিত করে দিলেন আর এটিকে আমাদেরই নাজাতের সুবর্ণ এক মাধ্যম বানিয়ে দিলেন!! হায়! এটির উপলব্ধি কি আমাদের সবার আছে?!

দরূদ শরীফ পাঠের ফযীলত সম্পর্কিত দুটি হাদীস

যে কেউ আমার প্রতি সালাম পেশ করবে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি দশটি সালাম পেশ করবেন, তার দশটি গুনাহ ক্ষমা করা হবে এবং তার মর্যাদা দশগুণ বৃদ্ধি করা হবে। নাসাঈ

দিনসমূহের মধ্যে জুম্মা সর্বোত্তম। এইদিন আদম عَلَيْهِ ٱلسَّلَامُ -কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিন তিনি ইন্তেকাল করেছেন, এ দিন শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে। তাই এ দিন তোমরা আমার প্রতি অধিক দরূদ পাঠ কর, কারণ তোমাদের পঠিত দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়ে থাকে। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! কিভাবে তা আপনার কাছে পেশ করা হবে যখন আমি মাটিতে মিশে যাবেন? নবীজী ﷺ বললেন, আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগণের শরীর মাটি খায় না। আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ

কোন্ দরূদ শরীফ পড়ব

উলামায়েকেরাম বলেন, নামাযে পঠিত দরূদটি সর্বোত্তম। সাধ্যমতন নামাযের বাইরেও এটি পড়া উচিত।

সর্বদা সহজে পড়ার জন্য, আমরা  ছোট এ দরূদটি সবাই জানি, তাই এটিও পড়া যায়:
صلى الله عليه وسلم
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

আরও বেশি উত্তম হয় যদি এভাবে মাত্র একটি শব্দ বাড়িয়ে পড়া হয়:

صلى الله عليه وآله وسلم

(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আ-লিহি ওয়া সাল্লাম)

কারণ এতে প্রিয় নবীজী صلى الله عليه وسلم এর ‘আ-ল’ তথা পরিবারবর্গের ওপরও দরূদ পড়া হয়ে থাকে।

সবার উচিত (ব্যস্ততা অনুসারে) প্রতিদিন দরূদ পাঠের জন্য নির্দিষ্ট একটি পরিমাণ নির্ধারণ করে দরূদ পাঠ করা। তা হলে, কিছু হলেও এ বিরাট সৌভাগ্যের অধিকারী হওয়া সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ!

***********************

উলামায়েকেরাম দরূদ পাঠের অনেক বরকত লিখেছেন। যদি কারো কোনো হাজত (প্রয়োজন) থাকে, অসংখ্য অভিজ্ঞতা বলে যে, যেকোনো জায়েয হাজত পূরণ হওয়ার জন্য অধিক পরিমাণ দরূদ শরীফ পাঠ অত্যন্ত ফলপ্রসূ। ইনশাআল্লাহ উদ্দিষ্ট লক্ষ অর্জিত হয়েই যাবে!

তবে কেবল পার্থিব লক্ষ অর্জনই দরূদ পাঠের উদ্দেশ্য বানানো সংকীর্ণ মনোভাবের পরিচয়। প্রিয় নবীজী ﷺ-এর প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা আরো জোরদার হোক, প্রিয় নবীজী ﷺ-এর অনুকরণ-অনুসরণ (সুন্নাহ পালন) আরো সহজ হোক, এক গুনাহগার উম্মতের পক্ষ থেকে প্রিয় নবীজী ﷺ-এর প্রতি হাদিয়া পেশ করছি — এ সবগুলো নিয়তে দরূদ পাঠ করা উচিত।

কোনো সন্দেহ নেই যে, দরূদ পাঠের কারণে দ্বীন-দুনিয়ার অপরিসীম রহমত ও বরকত লাভ হয়।

হাদীস তো উল্লেখ করাই হল, প্রিয় নবীজী ﷺ-এর প্রতি একটি বার দরূদ শরীফ পড়লে আপনার ওপর দশটি রহমত নাযিল হবে এ প্রসঙ্গে বর্তমান যমানার একজন আলেমে দ্বীন, শায়খ সালাউদ্দীন সাইফী নকশবন্দী সাহেব একটি চমকপ্রদ কথা বলেছেন। সেটি দিয়েই প্রবন্ধটি শেষ করছি। আল্লাহ তাআলা যেন আমাদেরকে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে, প্রিয় নবীজী ﷺ-এর প্রতি খাঁটি ভক্তি, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা সহকারে অধিক দরূদ পাঠের তাওফীক দান করেন (আমীন)।

শায়খ সালাউদ্দীন সাইফী নকশবন্দী সাহেব একবার দরূদ পাঠের দশটি রহমত নাযিল প্রাপ্তির কথা উল্লেখ করে বলেন: আল্লাহ তাআলার একটি রহমতই তো আমাদের নাজাতের জন্য যথেষ্ট!

আমাদের সকল আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন!

By pressing the Subscribe button, you confirm that you have read and are agreeing to our Privacy Policy and Terms of Use
Add a comment Add a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous Post

মৃত্যু প্রতিরোধের চেষ্টা!? - ২

Next Post

দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও স্বেচ্ছাচারি মনোভাব নিয়ে কাজ: কোন পথে চলছি আমরা?