চিন্তার খোরাক​

মানুষ নেক তৌফিক থেকে বঞ্চিত হয় কখন – ৬

শাক্বীক বিন ইব্রাহীম رحمة الله عليه বলেন, মানুষ যে খায়ের ও নেক তৌফিক থেকে বঞ্চিত হয়ে যায় তার ৬ষ্ঠ কারণ হল, সে আখেরাত খেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে।

যে কিনা পুনরায় জীবিত হওয়া অস্বীকার করে ও আখেরাত থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে, সে সব কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়। তার অন্তরে আল্লাহ তাআলার ভয় থাকে না। পূর্ববর্তী উম্মতের মধ্যে এমন মানুষেরা যা বলত (যা আজকের আখেরাত-অস্বীকারকারীরাও বলে থাকে) তা কুরআন উল্লেখ করেছে:

إِنْ هِيَ إِلاَّ حَيَاتُنَا الدُّنْيَا وَمَا نَحْنُ بِمَبْعُوثِينَ

(অর্থ:) জীবন তো এই আমাদের পার্থিব জীবনটাই, আমরা মরি ও বাঁচি, আর আমরা পুনরুত্থিত হব না। সূরা মুমিনূন: ৩৭।

মানুষ যখন এ কথা ভুলে যায় কিংবা অস্বীকার করে যে, আখেরাতে তাকে হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে, তখন সে মারাত্মক ভ্রষ্টতায় পড়ে। আল্লাহ তাআলা কালামের পাকের বহু জায়গায় বিভিন্নভাবে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেন:

وَاتَّقُواْ يَوْمًا تُرْجَعُونَ فِيهِ إِلَى اللّهِ ثُمَّ تُوَفَّى كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لاَ يُظْلَمُونَ

(অর্থ:) আর সেই দিনকে ভয় কর, যেদিন তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে আল্লাহর কাছে। তারপর প্রত্যেক ব্যক্তিকে, যা কিছু সে কামাই করেছিল, তা (-র বিনিময়) পুরাপুরি দেয়া হবে এবং তাদের উপর জুলুম করা হবে না। সূরা বাকারা: ২৮১।

অন্যত্র বলেন:

كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَما الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلاَّ مَتَاعُ الْغُرُورِ

(অর্থ:) প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে, আর তোমাদের প্রতিদান তোমাদেরকে পূর্ণমাত্রায় কেয়ামতের দিনই দেয়া হবে। তখন যাকে জাহান্নাম থেকে পরিত্রান দেয়া হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে-ই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ধোঁকার উপকরণ ছাড়া আর কিছুই নয়। সূরা আলে ইমরান: ২৮৫।

কেউ আখেরাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার আলামত এই যে, তার সফলতার মাপকাঠি কেবল এই দুনিয়া – পার্থিব আয়, উপার্জন। দুনিয়ার অর্জনকে চূড়ান্ত মনে করা মানেই হল আখেরাত থেকে ঐ ব্যক্তি সম্পূর্ণ গাফেল ও বেপরোয়া হয়ে গেছে।

সূরা কাহাফে যে চারটি ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে একটি হল দুই ব্যক্তির উদাহরণ-সম্বলিত একটি ঘটনা। তাদের মধ্যে একজন, যে কিনা আল্লাহর পক্ষ থেকে অধিক জাগতিক নেয়ামত প্রাপ্ত ছিল, সে দম্ভ করে আখেরাতকে অস্বীকার করে বসল। সে তার ফল-ফলাদিতে পূর্ণ বাগান, অধিক লোকবল, ধন-সম্পদকে চূড়ান্ত সফলতা মনে করল। তার আখেরাতের বিষয়ে গাফলতি এত বেশি ছিল যে, এক পর্যায়ে সে দুনিয়া-প্রাপ্তির সার্থকতা উল্লেখ করতে গিয়ে বলে উঠল, (অর্থ:) আমার মনে হয় না যে, এ বাগান কখনো ধ্বংস হবে, এবং আমি কেয়ামত সংঘটিত হবে বলে মনে করি না।* আর যদি আমি (কখনো) নিজ রবের নিকট প্রত্যাবর্তিত হইও, তবে আমি অবশ্যই (সেখানে) এই বাগানের চেয়ে উত্তম স্থান পাব। (সূরা কাহাফ: ৩৫-৩৬)। এত স্পর্ধার মন্দ পরিণতি তাকে দুনিয়াতেই ভোগ করতে হয়েছে; তার সেই সুজলা-সুফলা বাগান, যা কিনা আল্লাহ তাআলারই এক দান ছিল – সব ধ্বংস হয়ে গেল।

মানুষ আখেরাত থেকে সম্পূর্ণ উদাসীন হওয়া নিজ পরিণতিকে অস্বীকার করারই নামান্তর এবং নিজ পরিণতি অস্বীকারের অর্থ হল, নিজ সৃষ্টিকর্তা ও প্রতিপালক থেকে গাফেল হয়ে তাঁকে অস্বীকার করা।

———————————

*আজ পর্যন্ত যুগে যুগে এমন দম্ভোক্তি এবং আখেরাত-অস্বীকারকারী কথা ও কাজের বহি:প্রকাশ হতভাগ্যদের দ্বারা প্রদর্শিত হয়ে আসছে।

**তারা যদি আখেরাতকে ‘একরকম’ বিশ্বাসও করে, খুব তাচ্ছিল্যের সাথে করে থাকে এবং এভাবেই বলে বসে, দুনিয়াতেই আল্লাহ আমাকে এত দিল, না জানি আখেরাতে দিলে কত দিবে! এটা আসলে তাদের মনের এক কল্পনা মাত্র। কারণ, কেয়ামত অস্বীকার করাই এত বড় কুফর ও আল্লাহর নাফরমানি যে, এরূপ ব্যক্তি আখেরাতে কেবল চির ক্ষতিগ্রস্তই হবে।

Last Updated on February 1, 2023 @ 11:52 am by IslamInLife

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: you are not allowed to select/copy content. If you want you can share it