ঈমান ও আক্বীদাউপলক্ষ ও সংস্কৃতি

আল্লাহ তাআলার অধীন যে ভালোবাসা নয়: তাতে কেবল ক্ষতি

​ভালোবাসা নিয়ে কত চিন্তা-ভাবনা। ভালোবাসার অভিজ্ঞতা নিয়ে কত কাব্য-উপন্যাস আর রচনা। জীবনে ভালোবাসার কত রকম প্রভাব।

আসলেই মানবজীবনে ভালোবাসার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কেউ তা অস্বীকার করতে পারে না। সমস্যা হল আমাদের চিন্তা-চেতনা ও মৌলিক বিশ্বাস নিয়ে। মস্তিষ্কপ্রসূত অনেক ভাবনা নিয়ে আমরা জোর দিয়ে বলতে থাকি অনেক কিছুই। কিন্তু বাস্তব ফলাফল অনেক ব্যতিক্রম, তাতে অনেক পার্থক্য। হবেই, কারণ আমরা মানুষ হলাম সীমাবদ্ধ জ্ঞানের অধিকারী। এ কথাটি সৃষ্টির প্রথম মানুষ থেকে নিয়ে একদম সর্বশেষ মানুষটির জন্য প্রযোজ্য – অশেষ জ্ঞানের অধিকারী নয় কেউই।

ইসলাম যে বলে রাসূলগণ সত্য এবং অগাধ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন, তাই বলে কিন্তু ইসলাম এটা বলে না যে, রাসূলগণ অসীম জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। কারণ তারাও মানুষ ছিলেন। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাদেরকে যতটুকু জ্ঞান দিয়েছিলেন, সেই জ্ঞানে তারা অবশ্যই জ্ঞানী ছিলেন। এবং যেহেতু তাদেরকে আল্লাহ তাআলা সঠিক ও চরম সত্য উপলব্ধির শক্তি দিয়েছেন, তাদের জ্ঞান ও উপলব্ধি ছিল অতুলনীয়, আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু অশেষ জ্ঞানের অধিকারী কেবলই আল্লাহ।

ভালোবাসার জ্ঞানটাও যদি মানুষ মনগড়া চিন্তা গবেষণা না করে আল্লাহ প্রদত্তটি নিতো – তাতেই মানুষের জন্য সর্বাধিক মঙ্গল নিহিত ছিল। কিন্তু যখনই মানুষ স্রষ্টার আদেশ লঙ্ঘন করে তখন তার পরিণতি ভালো হয় না। ভালোবাসার ব্যাপারে আমরা এতটাই মনগড়া পথে চলেছি ও চলছি যে, এখন প্রতিনিয়ত অনেক ভালোবাসাই ঘৃণার জন্ম দিচ্ছে। কারণ আমরা যে ভালোবাসার তত্ত্ব, দর্শন আর স্বপ্ন নিজ থেকে উদ্ভাবন করেছি তাতে লাভ শুধু এটাই যে, মানসিক বা শারীরিক কিছু খোরাক পাব, ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন ও সামাজিক জীবনে কোনো ভারসাম্যতা বাকি থাকবে না। কাউকে দেখলেই ভালোবাসা জেগে উঠা  অথবা মনকে লাগামহীন ছেড়ে দিয়ে তাকে বললাম – খুঁজো তোমার ভালোবাসার মানুষটিকে – এগুলো আসলে মানুষ নামক এত সুন্দর সৃষ্টির জন্য শোভনীয় তো নয়ই, অতি নীচতার পরিচয়।

ভালোবাসার প্রকারও তো অনেক। মানুষ বিয়ের মাধ্যমে তার স্ত্রীকে ভালোবাসবে। মা-বাবা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ের ভালোবাসাও রয়েছে। রয়েছে বন্ধুর প্রতিও বন্ধুর ভালোবাসা। আবার কোনো মানুষকে শ্রদ্ধা করেও মানুষ ভালোবাসে। অফিসের বস তার অধীনস্থদের ভালোবাসে, অধীনস্থরাও ভালোবাসে তাকে। একেকটি ভালোবাসা কত বিচিত্র, কত স্বতন্ত্র। সবই ভালোবাসা। ইসলাম শেখায় যে, এইসব ভালোবাসার মূল ভিত্তি থাকতে হবে, থাকতে হবে ভালোবাসা প্রকাশের নীতিমালা। স্বাভাবিকভাবেই সব ভালোবাসা উৎসারিত ও উৎপন্ন হয়ে থাকে স্রষ্টা থেকে। পূর্ণাঙ্গ ও মূল ভালোবাসা হল আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা – স্রষ্টার ভালোবাসা। তাঁকে ভালোবাসি বলেই তাঁর অধীনস্থ (অবশ্যই বান্দা) হিসেবে তাঁর অন্যান্য অধীনস্থদেরকে আমি তাঁরই জন্য ভালোবাসি। আর সেই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশও কখনো আমার নিজ মন মতন হতে পারে না। যেহেতু ভালোবাসা শেখালেন তিনি, ভালোবাসতে আদেশও করলেন তিনি, তাই তাঁর মতন করেই, তাঁর আদেশ অনুযায়ীই আমাকে অন্যকে ভালোবাসতে হবে। আমি একদিকে স্বীকার করলাম যে, ভালোবাসতে আমাকে আল্লাহ শিখিয়েছেন আর অন্যদিকে সেই ভালোবাসার পদ্ধতি অবলম্বন করলাম আল্লাহরই অন্য কোনো সৃষ্টির – এটা হতে পারে না।

ঈমানের আলোকে বিবেক দিয়ে এতটুকু চিন্তা করলে কিভাবে একজন মুসলমান ভ্যালেন্টাইনস ডে উদযাপন করবে? মুমিনের সব ভালোবাসাতো আল্লাহ তাআলার ভালোবাসার অধীন। যে ভালোবাসা স্থাপনে আল্লাহ পাকই নারাজ, যাকে ভালোবাসা প্রস্তাব করলে আল্লাহ তাআলাই রাগান্বিত হবেন, সেটা আবার মুমিন প্রস্তাব করবে কিভাবে?! মুমিনতো সে যে কিনা প্রথমেই দেখে আল্লাহ কী চান? কারো সাথে এমন সম্পর্ক করলে তাঁর সাথে আমার ভালোবাসা ঠিক থাকবে তো?

আসুন আমরা ভিত্তিহীন সব ভালোবাসাকে পরিত্যাগ করি। সৃষ্টির ভালোবাসাকে স্রষ্টার ভালোবাসার ওপর প্রাধান্য না দেই। যে কিনা সৃষ্টির ভালোবাসাকে স্রষ্টার ভালোবাসার ওপর প্রাধান্য দেবে সে আসলে সর্বপ্রথম নিজের ওপর অবিচার করবে। কারণ স্রষ্টাই তাকে ভালোবাসতে শেখালো, আর সে স্রষ্টার আদেশের বিপরীতে কোনো সৃষ্টিকে মূল ভালোবাসার পাত্র বানিয়ে স্রষ্টার নাফরমানি করল। এটা উপলব্ধি করার জন্য ও স্বীকার করা জন্য প্রকৃতপক্ষে ঈমানের গুণ লাগে। ঈমান না থাকলে বুদ্ধি যুক্তি পেশ করে বলবে, তুমি কাউকে ভালোবেসেছ, এটাতো খুবই উত্তম কাজ; এখানে আবার অন্যায়ের কী আছে?! ঈমানবিহীন মানুষ মস্তিষ্কপ্রসূত এমন যুক্তির কথাটি অকপটে মেনে নেবে। অথচ কোন কাজ উত্তম বা অনুত্তম, কোনটি ন্যায় ও অন্যায় – এটি যদি মানুষই চূড়ান্তভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারত তাহলে এত যুদ্ধ-বিগ্রহ আর মতবিরোধ কীসের? মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত সসীম জ্ঞান আসলে এ জাতীয় চূড়ান্ত উত্তর দিতে কখনোই সক্ষম নয়। স্রষ্টা আল্লাহ তাআলাই চূড়ান্ত ও পরিপূর্ণ সফলতার পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সেটা যে কিনা গ্রহণ না করে বিমুখ হবে তার জন্য কোনো উপদেশই কার্যকর হবে না। সেজন্যইতো মৃত্যু পরবর্তী জীবন পুরস্কার ও শাস্তির জন্য নির্ধারিত রয়েছে।

Last Updated on February 28, 2023 @ 12:38 pm by IslamInLife

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: you are not allowed to select/copy content. If you want you can share it