মুমিন সবসময় আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও আশ্রয়ের অন্বেষী। কী সুখ, কী দুঃখ – যেকোনো অবস্থায় এটা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। একটি হাদীসে মুমিনের আচরণকে ‘বিস্ময়কর’ বলা হয়েছে। কারণ, মুমিন আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা ও হুকুমের কাছে নিজেকে সোপর্দ করে দেয়।
ফেতনার সময় যখন এসেই পড়বে তখনও মুমিন খুঁজবে আল্লাহর আশ্রয় কীসে? তার ভালো করেই জানা আছে যে, এই ভয়াবহ বিপর্যয় ও প্রতিকূলতায় আল্লাহ তাআলার আশ্রয় ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই। আর অবশ্যই এ সময়ের বিস্তারিত বর্ণনা এবং করণীয় কী, সে নির্দেশনা আল্লাহ তাআলা ও তাঁর প্রিয় রাসূল ﷺ দিয়েছেন।
তিরমিযীর বর্ণনায়: সাইয়্যেদুনা আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলূল্লাহ ﷺ বলেছেন (অর্থ): যখন গণীমতের মালকে ব্যক্তিগত সম্পদ বানিয়ে নেয়া হবে, আমানতকে গনীমত মনে করা হবে। যাকাতকে জরিমানা মনে করা হবে, এলমে দ্বীনকে দ্বীনের উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য স্বার্থে অর্জন করা হবে। মানুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে এবং মায়ের অবাধ্যতা করবে। বন্ধুকে কাছে টানবে আর পিতাকে দূরে সরিয়ে রাখবে। মসজিদে উচ্চ:স্বরে কথা হবে, গোত্রের সর্দার হবে তাদের ফাসেক ও পাপাচারী ব্যক্তিটি। সমাজের নেতা হবে তাদের সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তিটি। কারো প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হবে তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য। গায়িকা ও গান বাদ্যের ব্যাপক প্রচলন হবে, মদ পান করা হবে এবং উম্মতের পরবর্তীগণ পূর্ববর্তীগণকে অভিশাপ দিবে। তখন তোমরা অপেক্ষা করা লাল ধূলিঝড়ের, ভূমিকম্পের, ভূমি ধ্বসের, চেহারা বিকৃতির ও পাথর বৃষ্টির। এছাড়া অন্যান্য নিদর্শন ও বিপর্যয়ের অপেক্ষা কর, যেগুলো একটির পর আরেকটি এভাবে আসবে, যেভাবে একটি মালার সুতা কেটে দিলে এর দানাগুলো একটির পর আরেকটি পড়তে থাকে।
মুসলিম শরীফের একটি হাদীসে আছে, সাইয়্যেদুনা মাকাল ইবনে ইয়াসার رضي الله عنه বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন (অর্থ): ব্যাপক খুনাখুনির যুগে এবাদতে লেগে থাকা এমন ফযীলতের কাজ, যেমন হিজরত করে আমার কাছে যাওয়া।
বুখারী শরীফের বর্ণনায়, তাবেঈ যুবায়ের ইবনে আদী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন (অর্থ): আমরা আনাস ইবনে মালেক رضي الله عنه এর কাছে হাজির হলাম এবং হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের অন্যায় অত্যাচারের অভিযোগ করলাম। তিনি তখন বললেন, তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং এ কথা বিশ্বাস কর যে, তোমাদের উপর যে যুগটিই আসবে, তার পরবর্তী যুগটি এর চেয়েও মন্দ হবে। আর এভাবেই তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ করবে। এ কথাটি তোমাদের নবীর মুখ থেকে শুনেছি। [দীর্ঘ হায়াত প্রাপ্ত সাহাবী আনাস ইবনে মালেক رضي الله عنه নবীজী ﷺ এর ওফাতের পর প্রায় আশি বছর জীবিত ছিলেন]
ফেতনার যুগের বর্ণনা সম্বলিত ও সে সময় কী করণীয়, এ বিষয়ে হাদীসে পাকে এত স্পষ্ট বর্ণনা থাকা সত্ত্বেও আমাদের অলসতা ও কালক্ষেপণের সুযোগ কোথায়?