উম্মতের জাগতিক উন্নতি হলে দেখতে হবে আল্লাহ তাআলার আদেশ ও নিষেধ পালন হছে কি না। যদি ব্যাপকভাবে আল্লাহ পাক এর নির্দেশ সমূহ লঙ্ঘন হতে থাকে আর একই সাথে আয়-উন্নতি বৃদ্ধি পায় তবে তো এটা অনেক বড় এক আশঙ্কার কথা! কারণ, বাদশা নারাজ হয়েও যদি সুযোগ দিতে থাকেন তবে তার ক্রোধ যেকোনো মুহূর্তে নেমে আসতে পারে। তখন সামান্য সময়ও অবকাশ পাওয়া যাবে না।
পার্থিব জীবনের আয় উন্নতিকে আমাদের সালাফ (পূর্বসূরী নেককারগণ) খুব ভয় করতেন। অথচ উনারা কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ীই জীবনযাপনে রীতিমত অভ্যস্ত ছিলেন। মূলত উনাদের পার্থিব উন্নতিও ছিল নেক আমলের বরকত। তারপরও উনারা নিজের নফসের উপর কখনো আস্থাবান হননি। সন্দেহজনক বিষয়ে তো বটেই, অজানা গুনাহর ব্যাপারে খুব বেশি চিন্তান্বিত থাকতেন। তাদের যাবতীয় অবস্থা এক দিকেই নিবিষ্ট থাকত – আল্লাহর সামনে কি নিয়ে দাঁড়াব, কিভাবে দাঁড়াব।
আমাদের অবস্থা হল বিপরীত। পার্থিব বিষয়াবলি সহজ না হলে বলি যে, দ্বীনি উন্নতি সম্ভব না। বলি যে, দুনিয়াতে আয় রোজগার না থাকলে কারো পাত্তা পাওয়া যায় না, তাই যতটুকু ছাড়া যায় আখেরাত ছেড়ে দাও, যত বেশি ধরা যায় ধর দুনিয়া।
ফলে কী হয়েছে? দেখুন। চিন্তা করুন। তারপর নিজেই ইনসাফ করুন! ইতিহাস দেখুন। পূর্ববর্তী, এমনকি বাপ-দাদার অবস্থাও স্মরণ করে চিন্তা করুন। নিজ জীবন থেকে লব্ধ অভিজ্ঞতা আর শিক্ষাকে সামনে রাখুন। এবার কুরআন ও সুন্নাহর পাল্লায় একটু মাপুন বিষয় গুলো।
গভীর ও বিস্তারিত আলোচনায় যাচ্ছি না। কিন্তু মৌলিক দু-তিনটা কথা উল্লেখ করা জরুরি মনে করছি। পার্থিব উন্নতিকে উদ্দেশ্য বানিয়ে কাজ করে শান্তি ও স্বস্তির নিঃশ্বাস কতটুকু পেয়েছি? পার্থিব অস্থায়ী ও অনিশ্চিত লাভ অর্জনের জন্য স্থায়ী ও সুনিশ্চিত আখেরাতের প্রস্তুতি কী পরিমান জলাঞ্জলি দিয়েছি? সত্যিকার নিঃস্বার্থ আপনজন কাকে পেয়েছি?
প্রতিটি সুস্থ ও বিবেক সম্পন্ন মানুষ চোখ বন্ধ করে দিব্যদৃষ্টিতে বাস্তবতাকে অবলোকন করতে পারে। এতে কোনো বাঁধা থাকলে সেটা নিজের অবহেলা-অনীহা ছাড়া আর কী?
জীবনের যে কিনারেই আমি-আপনি দাঁড়িয়ে থাকি না কেন, এখন আর একটি মুহূর্তকে অনর্থক যেতে দেয়া যায় না। সফরের এক লম্বা পথ অতিক্রান্ত হয়েছে। সামনে কবর। আর কোনো ঝুঁকি না নিয়ে এবার আখেরাতেকেই প্রাধান্য দেয়া সমীচীন নয় কি?