সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর رحمة الله عليه (মৃ. ১০৬ হিজরী : ৭২৫ খৃস্টাব্দ)

দাদার দাপট আর পিতার দুনিয়াবিমুখিতা উভয় বিশেষণে বিশেষিত ব্যক্তি। তিনি ইলম ও প্রজ্ঞায় মানুষের হৃদয়গ্রাহী ছিলেন। দুনিয়াবিমুখিতা, ইলম ও বিনয় দিয়ে যিনি দুনিয়া ভরে দিয়েছিলেন। ফুকাহা ও মুসলিম আইনজ্ঞদের অন্যতম বুযূর্গ, দুনিয়া বিরাগীদের ফকীহ, উলামা কেরামের মধ্যমণি, মদীনা শরীফের সপ্তম ফকীদের একজন, যাহিদ তাবেয়ীদের প্রধান ব্যক্তি, আলিম বিন আদিল। তিনি সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর ইবনুল খাত্তাব রাযিআল্লাহু আনহুমা।

মদীনার পরিবেশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সেখানকার সৌরভিত আলো বাতাস খেয়ে বড় হয়েছিলেন। শৈশবকালে ইলম ও জ্ঞানের বড় বড় আসরে যোগদান করেছিলেন। উলামাদের মজলিসে উঠাবসা করেছিলেন। তাজা ও সজীব ঈমান ও ফিকহ হাসিল করেছিলেন সাহাবা কেরামের মুখ থেকে। যাঁদের কর্ণকুহরে তখনও মহানবী ﷺ-এর বাণীগুলো ঝঙ্কৃত হচ্ছিল।

তাঁর বাবা তাঁকে খুব ভালোবাসতো। দেখতে তিনি তাঁর বাবার মতো ছিলেন। চলাফেরা ও কথাবার্তায় ছিলেন তাঁর দাদা হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর মতো। হযরত ইমাম মালেক রহ. বলেন, সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ্ তাঁর কালে পূর্ববর্তী নেককার লোকদের মতো ছিলেন। দুনিয়াবিরাগ, মিতব্যয়িতা এবং জীবনযাপনে আগেকার সাহাবা কেরাম সদৃশ তিনি ব্যতীত অন্য কেউ ছিল না। সালিম নসীহত করে আসআ’সকে বলেছিলেন, আসআ’স, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নিকট চেয়ো না।

সালিম একজন মর্যাদান ব্যক্তি ছিলেন। একদিন তিনি বাদশাহ সুলাইমান ইবনে আব্দুল মালিকের নিকট গেলেন। তিনি বারবার তাকে খোশআমদেদ জানাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি তাঁকে নিজের সিংহাসনে বসালেন। আরেকবার হিশাম বিন আব্দুল মালিক কা’বা শরীফের ভেতরে প্রবেশ করলেন। গিয়ে দেখেন, সেখানে সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ্ সাধকের ঢংয়ে নীরবে বসে আছেন। দু’ঠোঁটে আল্লাহ তাআলার যিকির। যে যিকির শোনতে পাওয়া যায় কিন্তু বোঝা যায় না। বললেন, সালিম, কিছু লাগলে আমাকে বলুন। এ কথা শোনে সালিম যিকির বন্ধ করে বললেন, এই বায়তুল্লাহ্ শরীফে আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য কারও নিকট চাইতে আমার লজ্জা লাগে। এ কথা শোনে হিশাম ইবনে আব্দুল মালিক নীরব হয়ে গেলেন। তাঁর মুখমণ্ডলে পেরেশানির ছাপ ফুটে ওঠল। সালিম যখন বাইতুল্লাহ্ শরীফ থেকে বের হলেন তাঁকে অনুসরণ করে হিশামও বের হলেন। লোকজন জড়ো হওয়ার আগেই হিশাম নিজের সেই কথা আবার ব্যক্ত করলেন। বললেন, এখন চাইতে তো কোন অসুবিধা নেই। তখন সালিম বললেন, আমি আপনার কাছে কী চাইবো? জাগতিক কোন কিছু না পরকালীন কোন কিছু? হিশাম সামান্য হাসিমুখে বললেন, জাগতিক কোন কিছু চান। সালিম বললেন, গোটা জগতের মালিকের কাছে জাগতিক কোন কিছু চাইলাম না। আর এখন বুঝি আপনার কাছে চাইবো? আপনি তো জগতের কোন কিছুরই মালিক নন।

হযরত সালিম একবার বাদশাহ ওয়ালিদ ইবনে আব্দুল মালিকের নিকট গেলেন। সালিমের শরীরের অবস্থা দেখে ওয়ালিদ বিস্মিত হলেন। কারণ সেই শরীরের অবয়ব হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর সাথে মিল ছিল। তিনি বললেন, সালিম! তোমার শরীর তো বেশ সুন্দর! তুমি কী খাও? সালিম বললেন, রুটি আর (যয়তুন) তৈল। এই খাবারের কথা শোনে ওয়ালিদ আশ্চার্য হলেন। তাঁর চোখেমুখে বিস্ময়ের ছাপ। বললেন, আপনার কোন কিছু লাগবে? সালিম বললেন, আগে নিয়ে আসেন কী আনবেন। দেখলে হয়তো খাওয়ার চাহিদা হতে পারে। হয়তো তখন খেতেও পারি।
হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহ. যখন খিলাফতের দায়িত্ব নিলেন তখন তাঁর দু’ঠোঁট থেকে হাসি উধাও হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলার প্রতি ভয়ে তিনি আতঙ্কিত ও অস্থির হয়ে পড়েন। ডাকলেন সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ্, মুহাম্মাদ ইবনে কা’ব আলকুরাযী এবং রাযা ইবনে হায়াতকে। তিনি তাঁদেরকে বললেন, আমি কঠিন এক দায়িত্বের পরীক্ষায় আক্রান্ত। আপনারা আমাকে পরামর্শ প্রদান করুন। তখন সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ্ ক্ষীণ আওয়াজে বললেন, আগামীদিন আল্লাহ তাআলার আযাব থেকে নিস্তার পেতে হলে দুনিয়াবিমুখী হোন। আমৃত্যু আখেরাত অনুরাগী হয়ে থাকুন।
হযরত সালিম রা. সারা জীবন সাদামাঠা ও সহজ-সরলভাবে কাটিয়েছেন। আমৃত্যু তিনি ছিলেন এক সফল সাধক ও বুযূর্গ। হিজরী ১০৬ সালে যিলহজ্ব মাসের শেষের দিকে তিনি মদীনা শরীফে ইন্তেকাল করেন।

error: you are not allowed to select/copy content. If you want you can share it