কাহমাস ইবনুল হাসান কাইসী রহমাতুল্লাহি আলাইহি (মৃ. ১৪৯ হিজরী : ৭৬৬ খৃস্টাব্দ)
প্রতিবেশীর অলক্ষ্যে তার বাগানের আঞ্জির গাছের পাতায় হাত মুছে যিনি চল্লিশ কেঁদেছিলেন। নিজেকে এবং ইতিহাসকে যিনি তাকওয়ার কোলে স্থান দিয়েছিলেন। যাঁর মুখ ঈমান ও কস্তুরির সৌরভে টইটম্বুর ছিল। হৃদয়ছোঁয়া কথাবার্তা যিনি পারদশী ছিলেন। জীবনের গল্প লিখেছিলেন তাকওয়ার কলম দিয়ে। সাথে ছিল যুহদের কালি। লিখেছিলেন আলোর কথামালা। মাতাপিতার প্রদি সদাচরণ দিয়ে তৈরি হয়েছিল যাঁর লেখার পত্র-পাতা। তিনি কাহ্মাস ইবনুল হাসান কাইসী তামীমী হানাফী। বসরা নগরী অধিবাসী। বসরা শহরেরর বিখ্যাত ইবাদতগুজার। শীর্ষস্থানীয় নির্ভরযোগ্য লোকদের তিনি একজন। যাঁর কথার অনুরণ থাকে গণমানুষের হৃদয়জুড়ে। হৃদয় থেকে ছড়িয়ে পড়ে অন্তরের অন্তস্তলে।
দিনের বেলায় সামান্য মজুরিতে রঙের কাজ করতেন। সন্ধ্যাবেলায় তা দিয়ে মায়ের জন্য ফল কিনে নিয়ে আসতেন। মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহার করতেন। আমৃত্যু মায়ের খেদমত করেছেন। ঠা-া পানির নেয়ামতের জন্য কাঁদতেন। দিবারাত্রিতে এক হাজার রাকাত নামায পড়তেন। ক্লান্ত হয়ে পড়লে নিজেকে তিরস্কৃত করে বলতেন, দাঁড়াও হে মন! হে প্রবৃত্তি তুমিই সকল অনিষ্টের মূল। এক মুহূর্তের জন্যও ইবাদত বাদ দিয়ে তোমার বিশ্রামের জন্য আমি প্রস্তুত নই।
কাহ্মাস রহ. নিজের গুনাহের কথা জানানোর উদ্দেশ্যে আবূ সালামার নিকট বসলেন। বললেন, আমি গুনাহ করেছি। যার জন্য আমি চল্লিশ বছর যাবৎ কাঁদছি। ব্যথিত বদনে আবূ সালামা বললেন, আবূ আব্দুল্লাহ্! কী সেই গুনাহ? কাহ্মাস বিষন্ন ও বিমর্ষ কণ্ঠে বললেন, একবার আমাকে দেখতে আমার এক ভাই এসেছিলেন। তার জন্য এক দীনার দিয়ে একটি মাছ খরিদ করি। খাওয়ার পর উঠে হাত মুছার জন্য আমার প্রতিবেশীর বাগান থেকে আঞ্জিরের একটি পাতা ছিড়ে ফেলি। সে জন্য চল্লিশ বছর ধরে কাঁদছি। কারণ প্রতিবেশীকে না জানিয়ে আমি সেই পাতা ছিড়েছিলাম।
একদিন তার পকেট থেকে এক দীনার মুদ্রা রাস্তায় পড়ে যায়। খোঁজ করতে ফিরে এসে তা পেয়ে যান। হাতে নিয়ে বললেন, এটা যে আমার দীনার তার নিশ্চয়তা কী? আমারও হতে পারে অন্য কারও তো হতে পারে। তাকওয়ার খাতিরে তিনি তা না নিয়ে ফেলে গেলেন।
একদিন বাড়িতে একটি বিচ্ছু দেখতে পান। সেটা তিনি ধরতে বা মারতে চাইলেন। কিন্তু এরই মধ্যে বিচ্ছুটি দ্রুত গর্তে ঢুকে পড়ে। তিনি সেটা ধরতে গর্তে হাত ঢুকিয়ে দিলেন। ধরতে পারলেন না। উল্টো তিনি দংশিত হলেন। ব্যথায় কাতর হলেন। জিজ্ঞাসিত হলেন, এমন কেন করলেন? তিনি বললেন, চিন্তা করলাম হয়তো বিচ্ছুটি গর্ত থেকে বের হয়ে মাকে দংশন করতে পারে।
সন্ধ্যাবেলায় আমর বিন উবাইদ তিনি সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে হযরত কাহমাসের নিকট আসলেন। সালাম দিলেন। তিনি তাদের নিয়ে বসে আছেন। তখন তার মা বললেন, তোমাদের এভাবে গল্প করা আমার পছন্দ নয়। তখন তিনি তাদেরকে তা জানিয়ে দিলেন এবং আপনারা এভাবে আমার নিকট আসবেন না।
তিনি অনেক গুণ, মর্যাদা ও কারামাতের অধিকারী ছিলেন। সর্বত্র তার অলৌকিক কথা ছড়িয়ে পড়েছিল। নিকট-দূরের লোকেরাও তা জানতো। একদিন তিনি এক দিরহাম দিয়ে আটা ক্রয় করলেন। সামান্য পরিমাণ সেখান থেকে আহার করে থাকেন। বহুদিন পর দেখলেন, আগের অবস্থায় আছে। যেভাবে আটা ছিল সেভাবেই আছে। এতদিন খাওয়ার পর সেগুলো এতটুকু কমেনি। বিখ্যাত এই বুযর্গ হিজরী ১৪৯ সালে মক্কা শরীফে মারা যান।