আমির ইবনে আব্দুল্লাহ্ ইবনে যুবাইর রহমাতুল্লাহি আলাইহি (মৃ. ১২৪ হিজরী : ৭৪১ খৃস্টাব্দ)
যিনি নিজেকে আল্লাহ তাআলা থেকে ছয়বার খরিদ করেছিলেন। ইন্তেকালের সময় যিনি সেজদা অবস্থায় ছিলেন। সততায় আলোয় যিনি দরিদ্র লোকদের রাতের আঁধার আলোকিত করেছিলেন। যাহিদ ও দুনিয়াবিমুখ। বুযূর্গ ও মুত্তাকী। রাতের বেলা নামায পড়ে আর দিনের বেলা রোযা রেখে কাটাতেন। গোটা জীবন সাদামাঠা কাটিয়েছেন। দুনিয়ার প্রতি বিমুখ এবং আখেরাতের প্রতি অনুরাগী ছিলেন। তিনি আমির ইবনে আব্দুল্লাহ্ ইবনুয যুবাইর ইবনুল আওয়্যাম। যিনি গোপন দান-সদকার জন্য লালায়িত ছিলেন। রাতের বেলায় লোকজন যখন নামায পড়তো তিনি গোপনে তাদের পদতলে অর্থকড়ি বিলাতেন।
মৃত্যুকালে তিনি আল্লাহ’র ঘরের মেহমান ছিলেন। মৃত্যুকথা স্মরণ করে ভীত হতেন। মরণ নিয়ে বেশি শঙ্কিত থাকতেন। যার কারণে মৃত্যুস্মরণে তিনি কাঁপতেন। সুফইয়ান ইবনে উয়াইনা রহ. বলেন, আমির ইবনে আব্দুল্লাহ্ রহ. নিজের জীবন আল্লাহ তাআলা থেকে ছয়বার ক্রয় করেছেন।
প্রতিবার তিনি এক ব্যক্তির রক্তমূল্য পরিমাণ সম্পদ দান করতেন। প্রচুর দান-সদাকা করতেন। কখনও ব্যাগে দশ হাজার দিরহাম নিয়ে বের হতেন। বিলাতেন দেদার। রাতে ইশার নামায পড়ার সময় তার কাছে এক দিরহামও অবশিষ্ট থাকতো না।
রাতের বেলায় ইবাদতগুজার লোকের খোঁজে বের হতেন। তাদের সেজদা অবস্থায় তিনি তাদের পায়ের কাছে দিরহাম-দীনার তথা সোনা ও রুপার মুদ্রা রেখে আসতেন। তারা কিন্তু টেরও পেতো না। জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করলো, আপনি তো প্রকাশ্যে দান-সাদাকা দিতে পারেন? তিনি বললেন, লোকজন আমাকে বা আমার প্রতিনিধিকে দেখে তাদের চেহারা রক্তিম হোক এটা আমার বড় অপছন্দের বিষয়। (তাই গোপনে দান-সাদাকা করে থাকি)।
রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে কঙ্কালসার হয়ে গিয়েছিলেন। দেখা যেতো, ব্যথিত মনে শয্যায় বসে আছেন। এমন সময় আকাশে বেড়াচ্ছে মুয়াযযিনের আল্লাহু আকবার, আযানের ধ্বনি। এদিকে আমির ইবনে আব্দুল্লাহ্ রহ. এর বাড়ি মসজিদের নিকটে ছিল। তিনি নেড়ে ওঠতেন। জোরে বলতেন, আমার হাত ধরো। আমাকে মসজিদে নিয়ে চলো। লোকজন বলতো, আপনি তো অসুস্থ। নিজের প্রতি সদয় হোন। তিনি বলতেন, না। আমাকে মসজিদে নিয়ে চলো। আল্লাহ তাআলার আহ্বানকারী আহ্বান করছে আর আমি কিনা সাড়া দিবো না! তা হতে পারে না। লোকজন তাকে মসজিদে নিয়ে গেল। ইমাম সাহেবের সাথে জামাতের নামাযে এক রাকাত পড়ার পর চলে গেলেন দুনিয়া থেকে পরকালে। কেউ কেউ বলেছেন, তখন তিনি সেজদায় পড়ে ছিলেন।
১২৪ হিজরীতে মারা যান এই মহান মনীষী।