আজ নেক সংস্রব ও দ্বীনি জ্ঞানের অভাবের কারণে আমাদের সার্বিক অবস্থার ব্যাপক অবনতি হয়েছে যে। ফলস্বরুপ আমাদের একটি ধারণা হয়েছে যে, সত্যিকারের দ্বীনদার ও ভালো মানুষ দুনিয়াতে আর নেই। অথবা আমাদের স্থূল দৃষ্টিতে ও বিচারে শুধু নিজের সংজ্ঞায়িত “সৎ” বা “ভালো” কেই পূর্ণাঙ্গ ভালো হওয়ার মাপকাঠি মনে হচ্ছে; ধরে নিয়েছি নিজেদের এই কাল্পনিক সীমানাই সর্বশেষ ভালোর মাপকাঠি।
যারা ইচ্ছাকৃত ও হঠকারিতা স্বরূপ এমন করে থাকে – তারা তো সত্যকেই অগ্রাহ্য করে। সর্বসাধারণ মুসলমানদের এই অবস্থায় উপনীত হওয়ার অন্যতম কারণ হল, নেককার ও পরহেযগারদের থেকে বিচ্ছিন্নতা, তাদের সংস্রবের মাধ্যমে কোনো প্রকারের উপকার লাভের চিন্তা-প্রচেষ্টার প্রতি চরম উদাসীনতা ও অবহেলা। কমপক্ষে এ কথা অস্বীকার করা মুশকিল যে, দ্বীনি পরিবেশ ও দ্বীনদারদের সাথে বৃহত্তর সাধারণ জনগোষ্ঠীর দূরত্ব সৃষ্টি হওয়াতে তারা ভেবে বসেছে, না – এই যুগে আর জুন্নুন মিশরী নেই, নেই বায়েজীদ বোস্তামী। এখন আল্লাহ তাআলার সাহায্য ঐ আগের যুগের মতন পাওয়া এক রকম অসম্ভব ব্যাপার।
নি:সন্দেহে এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। এই মারাত্মক ভুল ধারণার বশবর্তী হওয়ার ফলে প্রকৃত ভালো মানুষ, আমাদের নজরে ধরা পড়ে না, আর পড়লেও তাদের আমরা যেহেতু চিনতেই পারি না – উপকৃত হওয়া তো আরও দূরের কথা। এর চেয়েও আরও এক ধাপ এগিয়ে যে মারাত্মক ধোঁকা তা হল, আমার কাছে তো নিজেকেই সর্বাধিক ভালো বলে মনে হয়। এই কথা হয়ত কেউ মুখে বলে না, কিন্তু তার কাজে কর্মে ও অন্যদের প্রতি বিরূপ মন্তব্যের মাধ্যমে তা সুস্পষ্ট প্রতীয়মান হয়। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, আমরা নিজেকেই অন্যদের চেয়ে উত্তম মনে করি, যা নি:সন্দেহে অহংকার। তার উপর কেউ যদি নিজেই দ্বীনদার ও ভালো মুসলমান না হয়, দ্বীন সম্পর্কে তার জ্ঞানও তেমন নেই, দ্বীনি মহলের সাথে যোগাযোগ নেই বললেই চলে; সে যদি যথেচ্ছা সব মুসলমানকে হেয় করে – তা কতই না মস্ত বড় দাম্ভিকতা। কোনোভাবেই এই উপলব্ধি মুমিনের শান নয়। মুমিন এই অবস্থায় স্থির থাকতেই পারে না। মুমিনের কদাচিৎ এমন যদি শুধু মনে একটু উদয়ও হয়ে যায় – সে তওবা-ইস্তিগফার করে নেয়।
আমাদের উচিত নেক সংস্রব ও দ্বীনি জ্ঞান চর্চায় উলামায়েকেরামের শরণাপন্ন হওয়া। সর্বোপরি আল্লাহ তাআলার কাছে খুব আন্তরিকভাবে দোআ করা উচিত, যেন তিনি আমাদেরকে সঠিক পথ দেখান, সঠিক পথেই রাখেন। তা না হলে, মন মত চলা হবে, মন গড়া পাথেয় সংগৃহীত হবে ও জীবনাবসান হবে ফেরাউন, হামান, আবু-লাহাব ও আবু-জাহেলদের মত – আল্লাহ তাআলার পানাহ। মুসলমানের সন্তান হয়ে ঈমান ও ইসলামের মত অমূল্য দান থেকে বঞ্চিত হওয়ার চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কী আছে?!