Dark Mode Light Mode

কুরআন তেলাওয়াত: হোক প্রতিদিন

কুরআন মাজীদ। স্বয়ং আল্লাহ তাআলার কালাম (কথা)। কোনো কিছুর সাথেই তাঁর তুলনা হয় না। আল্লাহ তাআলার সাথে যেমন কারো তুলনা অসম্ভব, তাঁর কালামের সাথেও কারো তুলনা সম্ভব নয়।

কুরআন মাজীদের তেলাওয়াত সুমহান ইবাদত। আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা অর্জনের অতি সহজ এবং অতুলনীয় পথ।

অনেক বড় একজন আলেমে দ্বীন, শায়খ মানযূর নো’মানী رحمة الله عليه-এর মা’আরিফুল হাদীসের পঞ্চম খন্ড ‘কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত’-এ লেখেন:

কুরআন মাজীদের তেলাওয়াতও ‘আল্লাহ তাআলার যিকিরের’ একটি প্রকার এবং কোনো কোনো দৃষ্টিকোণ থেকে এটি সর্বোত্তম ও সর্বোচ্চ পর্যায়ের। বান্দার  তেলাওয়াতে লিপ্ত থাকাটি আল্লাহ তাআলার কাছে খুবই পছন্দনীয় ও প্রিয় আমল।

নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা যেকোনো দৃষ্টান্ত ও উপমার উর্ধ্বে। কিন্তু এ অধম লেখক এ বাস্তবতাটি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে খুব ভালোভাবে বুঝেছে যে, কোনো সময় যখন আমি কাউকে এ অবস্থায় দেখেছি যে, সে আমার লেখা কোনো কিতাব মনোযোগ সহকারে পড়ছে, তখন আমার অন্তর খুশিতে ভরে গিয়েছে এবং তার সঙ্গে আমার এমন এক বিশেষ সম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি হয়েছে – যা অনেক আপনজন ও আত্মীয়দের সঙ্গে সম্ভব হয়নি। যাহোক, আমি তো নিজের এ অভিজ্ঞতা থেকে এটা বুঝেছি যে, যখন আল্লাহ তাআলা তাঁর কোনো বান্দাকে নিজের কালাম তথা কুরআন মাজীদের তেলাওয়াত করতে শুনেন ও দেখেন, তখন তিনি ঐ বান্দার প্রতি অনেক বেশি খুশী হন। (তবে সে যদি নিজের কোনো মারাত্মক অপরাধের কারণে আল্লাহ তাআলার কৃপা দৃষ্টির যোগ্যতাই না রাখে, সেটা ভিন্ন কথা)

প্রিয় রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজ উম্মতকে কুরআন মাজীদের মাহাত্ম্য ও মর্যাদার সঙ্গে পরিচিত করাতে গিয়ে এবং তেলাওয়াতের প্রতি উৎসাহ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন শিরোনাম ও ভাষা ব্যবহার করেছেন।

[আমরা মা’আরিফুল হাদীস থেকেই একটি হাদীস পড়ি – আমলের জন্য তা খুবই উৎসাহজনক]

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন (অর্থ): মানুষের অন্তরে ঠিক এভাবে মরিচা পড়ে থাকে, যেভাবে লোহায় পানি লাগলে মরিচা ধরে। জিজ্ঞাসা করা হল, ইয়া রাসূলুল্লাহ ﷺ! এটা পরিষ্কার করার উপায় কী? তিনি বললেন: মৃত্যুকে অধিক স্মরণ করা ও কুরআন মাজীদের তেলাওয়াত। বায়হাকী

ব্যাখ্যা: অন্তরের মরিচা এই যে, আল্লাহ তাআলা থেকে এবং আখেরাতের পরিণাম থেকে উদাসীন ও নিশ্চিন্ত হয়ে যায়। এটা হচ্ছে ছোট-বড় সকল গুনাহের ভিত্তিমূল, আর নিঃসন্দেহে এর অমোঘ চিকিৎসা এটাই যে, নিজের মৃত্যুর কথা বেশি করে স্মরণ করবে, এর ধ্যান ও মুরাকাবা (চিন্তা ফিকির) করবে এবং কুরআন মাজীদের মাহাত্ম্য ও আল্লাহ তাআলার সঙ্গে এর বিশেষ সম্পর্কের কথা স্মরণ রেখে আদব ও ইখলাসের (আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির) সাথে কুরআনুল কারীমের তেলাওয়াত করবে। যদি এই তেলাওয়াত আল্লাহ তাআলার তাওফীকে অন্তরের আগ্রহ ও চিন্তা-ভাবনার সঙ্গে হয়, তাহলে ইনশাআল্লাহ এটি অন্তরের মরিচা ও ময়লা দূর করে দিয়ে অন্তরকে নূর দিয়ে ভরে দিবে! আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এমন সৌভাগ্য দান করুন!! (আমীন)

এখানে শায়খ মানযূর নো’মানী رحمة الله عليه -এর মা’রিফুল হাদীস থেকে সংকলিত অংশটি শেষ হল।

কুরআন মাজীদের তেলাওয়াত মহান রাব্বুল আলামীনের সঙ্গে ভালোবাসা স্থাপনের আমল। আল্লাহ তাআলার কথাকে পড়তে থাকার আনন্দ কতই না মধুর! সেই স্বাদ ও অনুভূতি কিছুটা হলেও যেন আল্লাহ তাআলা আমাদের দান করেন! (আমীন)

আলহামদুলিল্লাহ আমরা যারা শুদ্ধভাবে পড়তে পারি, তারা তো সবসময় তেলাওয়াত করব। আগ্রহ, দরদ আর হেদায়েতের চরম পিপাসা নিয়ে কুরআন পড়ব ইনশাআল্লাহ। তাতে মাহবুবে ইলাহীর ভালোবাসা যেমন বাড়বে, প্রতি হরফে হরফে কত নেকী পাব ইনশাআল্লাহ! আর কুরআন মাজীদ শুদ্ধ করে পড়া তো প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয। তাই যারা তেলাওয়াত শিখিনি, আর দেরি না করে আজই এ চেষ্টায় লেগে যাই – কিভাবে, কোথায় তেলাওয়াত শেখা শুরু করা যায়(?) বড় গুনাহগার ও হতভাগ্য সেই ব্যক্তি যে কিনা অবহেলা করে আল্লাহ তাআলার কালাম শুদ্ধভাবে পড়া শিখবে না। বিশুদ্ধ তেলাওয়াত ব্যতীত নামাযই তো শুদ্ধ হবে না!

আমরা যেন কুরআনকে ভালবাসি এবং কুরআনকে জীবনের একমাত্র অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করি। প্রতিদিন কিছু কুরআন তেলাওয়াত করতে থাকি। একটি দিনও যেন আমার এমন না যায় যেদিন আমার তেলাওয়াত হল না। কুরআন মাজীদ তেলাওয়াতের বিস্ময়কর বরকত দুনিয়া ও আখেরাত –  উভয় জগতে পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।

আমাদের সকল আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন!

By pressing the Subscribe button, you confirm that you have read and are agreeing to our Privacy Policy and Terms of Use
Add a comment Add a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous Post

হেদায়াতের নিদর্শন

Next Post

পবিত্র কুরআন: আবার আঁকড়ে ধরতে হবে তাঁকে