তাকদীর আল্লাহ তাআলার রহস্য। তিনি এটি কাউকে অবগত করেননি। না কোনো নবীকে, না কোনো ফেরেশতাকে। অতএব আমাদের কারো পক্ষে এই জ্ঞান অর্জন করা অসম্ভব।
তাকদীরে যা আছে তা-ই হবে, এ কথা বিশ্বাস করা ফরয। এটির ওপর অহেতুক যুক্তি/প্রশ্ন/বিতর্ক ওঠানো যেমন নির্বুদ্ধিতা, তেমন সর্বনাশা গোমরাহি কাজ ও ঈমান বিধ্বংসী। কেয়ামতের দিন তাকদীরের ওপর বিশ্বাস করা ব্যতীত এ (তাকদীর) সম্পর্কে বান্দাকে অন্য কোনো কিছু জিজ্ঞেস করা হবে না। তাই আল্লাহ তাআলার আদেশে তাকদীরে যা আছে হবেই — এটি বিশ্বাস করব এবং এ বিষয়ে অহেতুক প্রশ্ন/বিতর্ক অথবা এ জাতীয় কোনো বাড়তি আলোচনায় আমরা লিপ্ত হব না ইনশাআল্লাহ।
নেক পথে চেষ্টা করা বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলার আদেশ। তাকদীরে যা আছে তা-ই হবে, এমন ওজর দিয়ে বসে থাকলে ও চেষ্টা না করলে আল্লাহ তাআলার আদেশ লঙ্ঘিত হবে। যেসব ক্ষেত্রে চেষ্টা করা ফরয অথবা ওযাজিব, সেসব ক্ষেত্রে চেষ্টা না করলে গুনাহ হবে।
তাহলে বোঝা গেল তাকদীরে বিশ্বাস করা যেমন ফরয আবার চেষ্টা করাও (যেখানে চেষ্টার সুস্পষ্ট আদেশ আছে সেখানে) ফরয। আর তাকদীরের রহস্য উদঘাটন সম্পূর্ণভাবে নিষেধ।
একেবারে সহজে বুঝুন
আল্লাহ তাআলা সবই জানেন। অনাদি থেকে অনন্ত তাঁর জ্ঞান (আর আমাদের জ্ঞানের পরিধি তো খুবই সামান্য, আমরা তো অধিকাংশ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়ে পর্যন্ত অসম্পূর্ণ জ্ঞানের অধিকারী!)। কী হবে ও কী ঘটবে এবং কী হবে না ও কী ঘটবে না — আল্লাহ তাআলা সবই জানেন। তিনি সবই লিখে রেখেছেন — এটি তাঁরই ক্ষমতায় আছে, তিনি এতে পরিপূর্ণরূপে সক্ষম। এটাই তাকদীরের লিখন। আমাদের চেষ্টায় তিনি কোনো বাঁধা দেননি। হ্যাঁ, তিনি আমাদেরকে জানাননি আমরা কে কী করব, কিন্তু এটা বলে দিয়েছেন যে, আমরা কে কী করব — তিনি সবই জানেন। যেটি সেই অতি পবিত্র ও সুমহান সত্ত্বারই অন্যতম গুণ। অতএব মানুষকে তার কাজ করে যেতে হবে। সে কাজ করতে আদিষ্ট। তাকে ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তাকে জোর করে না ভালো কাজ করানো হচ্ছে, না মন্দ।
আল্লাহ তাআলার দিকে প্রশ্ন ছোড়া তিনি কেন কী করলেন বা কেন করবেন, এ তো চরম বেয়াদবি! এটা তো দুনিয়ার কোনো সাধারণ রাজ-দরবারেই গৃহীত হয় না। অথচ আমাদের মন এবং শয়তান খামাকা এদিকে (আল্লাহ তাআলা কেন কী করলেন/করলেন না) আমাদেরকে ধাবিত করে। যদি এ বিষয় নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই, অথচ এ রহস্য উদঘাটন করা আমাদের সাধ্যেই নেই, তাহলে নিশ্চিত আমরা পথভ্রষ্ট ও ধ্বংস হব! সেজন্যই রাসূলে কারীম ﷺ আমাদেরকে স্পষ্ট সতর্ক করে দিয়েছেন যেন আমরা তাকদীরের ব্যাপারে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত না হই।
অতএব, তাকদীরের বিষয়ে আকীদা বিশুদ্ধ করে নেওয়ার জন্য প্রশ্ন করে উত্তর জেনে নেওয়ার পর তাকদীরের ওপর ঈমান এনে (বাড়তি কথা/তর্ক/যুক্তি না দিয়ে) নিশ্চুপ হয়ে যেতে হবে।
পরিশেষে কুরআনের এ আয়াতটি স্মরণ রাখুন:
لَا يُسْأَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْأَلُونَ
অর্থ: তিনি যা করেন, সে সম্পর্কে তাকে প্রশ্ন করা যাবে না; বরং তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। সূরা আম্বিয়া – ২১:২৩
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দান করুন ও সঠিকভাবে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।