ঈমান ও আক্বীদাআখলাক ও আত্মশুদ্ধি

আসুন চির শান্তি ও সফলতার পথে

আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ ٱلْإِسْلَـٰمِ دِينًۭا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِى ٱلْـَٔاخِرَةِ مِنَ ٱلْخَـٰسِرِينَ

অর্থ: যে কিনা ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো পথের অনুসরণ (ও গ্রহণ) করে, সেটা কখনোই তার থেকে গৃহীত (কবুল করা) হবে না, আর আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। আলে ইমরান ৩:৮৫

ইসলাম হল একমাত্র সঠিক, সরল ও সফলতার পথ। ইসলামই একমাত্র পবিত্র, পাক ও মহামহিম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা কাছে গ্রহণযোগ্য দ্বীন। হবেই তো! ইসলাম তো স্বয়ং সারা জাহানের মালিক আল্লাহ পাক প্রদত্ত — বাকি সব মানবসৃষ্ট পথ, অগ্রাহ্য ও বাতিল।

ইসলামকে দুনিয়াবাসীর কাছে পরিচিত করা হয়েছে সর্বাধিক পূণ্যবান মানুষদের দ্বারা — নবী ও রাসূলগণের মাধ্যমে।

শেষ নবীর উম্মতের জন্য তো আরও বড় নেয়ামত! একে তো সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী পেয়েছি, আরও পেয়েছি আল্লাহর পথ সহজে চেনার জন্য বিশাল এক বরকতময় কাফেলা, যে পূণাত্মা সাহাবা (রাদিআল্লাহু আনুহুম)-গণের জাম’আত দুনিয়াতে রেখে আমাদের প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন! জানিয়ে দিয়েছেন যে, তাঁর ﷺ সুন্নত ও তাঁর খুলাফায়ে রাশেদের অনুসরণেই ইসলামকে সঠিকভাবে চেনা যাবে, ইসলামের সঠিক অনুসরণ করা যাবে।

ইসলামের মৌলিক সব বিষয়গুলো একদম সহজ! আর সেগুলোই পরকালে চিরমুক্তির পাথেয়। অতএব, এমন ভুল করা যাবে না — ইসলামকে না জেনে, ইসলামের সঙ্গে পরিচিত না হয়ে আমরা দিশাহারা হয়ে গেলাম — মা’আয আল্লাহ! যেভাবে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো আমাদের কাছে পৌঁছেছে সেগুলোকে গ্রহণ করে, জীবনে ধারণ করে সাধ্যমতন আমল করে মৃত্যুর জন্য তৈরি থাকতে হবে!

আমরা সবাই দেখছি, এটা ব্যাপক ফেতনার সময় (যে সময়টিতে সত্য ও মিথ্যা এমনভাবে মিশ্রিত হয়ে যায়, সত্যকে চেনা কঠিন হয়ে পড়ে)। তারপরও যদি সতর্ক না থাকা হয়, চিন্তা-চেতনাকে লাগামহীন ছেড়ে দেওয়া হয়, ক্ষতি আমাদেরই, আর এই ক্ষতি ভয়াবহ ক্ষতি! কারণ, এটা তো ঈমান বাঁচানোর প্রশ্ন, নেক আমল সুরক্ষার প্রশ্ন! ঈমানবিহীন মৃত্যু অর্থ চিরকাল জাহান্নামী (আল্লাহর পানাহ্), চির বঞ্চিত!

সেজন্য সজাগ ও সতর্ক হওয়া চাই। আল্লাহ তাআলার কাছে আন্তরিকভাবে দোআ করা চাই। সঙ্গে চেষ্টাও করা চাই। ইনশাআল্লাহ তাহলে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সাহায্য আসবে। এমন হবে না যে, আমরা আল্লাহর পথে চেষ্টা ও দোআ করে বঞ্চিত হয়ে যাব! নেক পথে চেষ্টা করে কখনো কেউ বঞ্চিত হয়নি। যেখানে স্বয়ং আল্লাহ তাআলার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি রয়েছে, সেখানে কিভাবে বিফল হওয়া সম্ভব?! তা কখনও সম্ভব নয়।

অত্যন্ত দুঃখের কথা এটাই যে, আমরা সৎপথ অবলম্বনে হয় অলস অথবা উদাসীন অথবা বিমুখ।

আজ আমরা কেমন মুসলমান??! আমাদের অধিকাংশর মনে যত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব-সন্দেহ, বেশিরভাগ হল ঈমান-ইসলাম নিয়ে!! তাহলে আমি ঈমান-ইসলামের কোন্ স্তরে আছি, এটা ভেবে দেখা উচিত। এখনই খাঁটি তওবা করা দরকার। ঈমান-ইসলামের উপর জন্ম নিয়েছি — এটা কত সৌভাগ্যের কথা! এখন জরুরি এঁর কদর করার। যেভাবে জীবনযাপন করছি, তা ইসলামের বিপরীত হলে বড় আফসোসের ব্যাপার। একজন মুসলমানের তো এভাবে চলার কথা নয়।

যাহোক হতাশ হওয়া যাবে না। জরুরি হল, দ্রুত আল্লাহর পথে ফিরে আসা। আল্লাহর পথে ফিরে আসতেই হবে। ঈমানের অনুভূতি জাগ্রত হলেই তা সহজ।

ঈমানের অনুভূতি জাগ্রত করব কিভাবে? ঐযে বলা হল, তওবা, খাঁটি তওবা করতে হবে। খাঁটিভাবে আল্লাহর কাছে ফিরলে নেক অনুভূতি তিনিই জাগিয়ে দেবেন!

খাঁটি তওবার পর পর দ্বীনের ইলম অর্জনে গুরুত্ব দিতে হবে। শুধু বই পড়ে ইলম অর্জন হবে না। আলেমগণের কাছে যেতে হবে। ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। ঐ আলেমগণের কাছে যাবেন যাদের পরহেজগারির ব্যাপারে জানা আছে। বর্তমানে আমরা সাধারণ মানুষ এ জায়গাটিতে ভুল করি। আমরা বাহ্যিক কিছু কথা ও কাজ দেখে কাউকে দ্রুত ত্যাগ করি, কাউকে দ্রুত গ্রহণ করি। প্রশ্ন আসবে, বাহ্যিক অবস্থাই তো দেখব, সেটাই তো দেখা যায়, কারো ভিতর কি দেখা যায়?!

কথা সত্য। দেখব বাহ্যিকই। কিন্তু অবশ্যই দ্রুত দেখব না! সময় নেব একটু। কারো মাজেলিসে বার বার বসলে, কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কিছুটা লম্বা সময় অতিবাহিত করলে তার সম্পর্কে অনেক কিছু জানা ও বোঝা হয়ে যায়। কার থেকে দ্বীন গ্রহণ করতে যাচ্ছি সেটা সাধ্য অনুযায়ী কিছুটা যাচাই-বাছাই করা জরুরি। এ যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আমাদের কোনো বিশেষজ্ঞ বা পন্ডিত হওয়া লাগবে না! আল্লাহ তাআলা মানুষ চেনার সাধারণ মাপকাঠি সবাইকে দান করেছেন! স্বচ্ছ অন্তর দিয়ে হেদায়াতের পথের সন্ধান যে কেউ করতে পারে, এ যোগ্যতা আল্লাহ তাআলা সব মানুষকে দিয়েছেন।

যখন উপরে উল্লেখিত চেষ্টাটুকু আন্তরিকতা ও দোআর সঙ্গে করা হবে তখন অনুসরণীয় মানুষ ও হকপন্থী আলেম পেতে ভুল হবে না (ইনশাআল্লাহ)!

মনে রাখবেন, সত্য অনুসন্ধান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি বর্তমানে যদি কোনো কিছু কিনতে চান, যত দামী জিনিস কেনার ইচ্ছা করেছেন, তত বেশি যাচাই-বাছাই করে সেটা কিনবেন — এটাই স্বাভাবিক। এর মূল কারণ তো কিছু আগে বলাই হল, বর্তামান সময়ে সত্য-মিথ্যা আমরা মিশিয়ে ফেলেছি। সবক্ষেত্রে, আসল-নকল এখন খুব মিশ্রিত!

কিন্তু দেখবেন, আসলের সন্ধানকারী আসলই পায়, কমপক্ষে আসলের কাছাকাছি কিছু পায়! আর আল্লাহ তাআলার একটি দস্তুর (নিয়ম) হল, যত জরুরি জিনিস তত সহজলভ্য! তাহলে যেহেতু ঈমান-আমল সহজলভ্য, তা অর্জনের মাধ্যম এত কঠিন হবে কেন?! আসলে কঠিন নয়; অবশ্য দেখতে একটু কঠিন। এটা যেন এক পরীক্ষা, বান্দা কত আন্তরিকভাবে সত্যকে খুঁজে — সেটার পরীক্ষা!

এটাই দরকার — তা হল, ইখলাস। “খালেস”-ভাবে আল্লাহকে খোঁজা। কোনো ভন্ড, যিন্দিক, পথভ্রষ্টের অনুসারী হয়ে ঈমানের অমূল্য রত্ন হারিয়ে ফেলা যাবে না!

যেখানে আমরা সরাসরি আল্লাহকে ডাকতে পারছি, এমন সৌভাগ্যের পরও হতাশ হয়ে হাল ছাড়া মারাত্মক অন্যায়! তাঁর সাহায্য চাইতে হবেই হবে; আর তাঁর সাহায্য চাইলে পাওয়া যাবেই যাবে!

আসুন ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়ে নিই! কারণ, একে তো মৃত্যু অবধারিত, আবার মৃত্যু অকস্মাৎ আসতে পারে! আর কালবিলম্ব না করে আসুন আল্লাহর পথে অগ্রসর হতে শুরু করি। আজই খাঁটি তওবা করে জীবনকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তৈরি করি ইনশাআল্লাহ! এতে নগদ ফায়দা হল, শান্তিময় জীবন। আর মৃত্যু যখন যেখানে যেভাবেই হোক — ঈমানী মৃত্যুর সঙ্গে চির আবাস হিসেবে জান্নাত লাভ! হে আল্লাহ, তুমি আমাদের জন্য তোমার চির রহমতের ফয়সালা কর! আমীন।

Last Updated on August 4, 2025 @ 5:55 pm by IslamInLife বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *