Dark Mode Light Mode
কী হারালে বেশী কষ্ট হয়-২ কী হারালে বেশী কষ্ট হয়-২

কী হারালে বেশী কষ্ট হয়-২

মূলত: যে যেই বস্তু বা বিষয়কে আপন করেছে, তার কাছে সেই বস্তু হারানোর বেদনা বা কষ্টই বড়। কেউ বলবে যে তার সন্তান মারা গেলে তার সব শেষ। কেউ বলবে তার চাকুরী গেল তো সব গেল। কেউ হাত-পা-চোখ হারানোকে সবচেয়ে বড় হারানো মনে করে, কেউ স্বামী-স্ত্রী হারানো, জমি হারানো আর সম্পদ হারানোই মনে করে সব হারানো।

এগুলো হারানোর দুঃখ-কষ্টতো অন্যায় অবশ্যই নয় – খুবই ন্যায়সংগত। বরং আমাদের প্রতি এগুলোর সবই “নেয়ামত হওয়া”কে আমরা কেউ অস্বীকার করতে পারি না। এ সবই আল্লাহ তাআলার দেয়া নেয়ামত। তিনি এই সবকিছুর মালিক যেমন তিনি মালিক আমাদের প্রতিটি সত্ত্বার। এই নেয়ামত সমূহের সাথে আমাদের প্রয়োজন, শান্তি ও আরামকে আল্লাহ তাআলা এক প্রকার বেঁধেই দিয়েছেন। আবার সাথে সাথে এগুলোর সামগ্রিক ব্যবহার বিধি ও এগুলোর সাথে সম্পর্কের একটি সীমা তিনি – আল্লাহ তাআলাই নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সেই সীমা লঙ্ঘন করা কখনোই মুমিনের কাজ নয়।

আল্লাহ তাআলার দেয়া নেয়ামতকে ভালোবাসব আল্লাহ তাআলার জন্যই। এগুলোর সাথে আমার সামগ্রিক ব্যবহার হবে তাঁরই সন্তুষ্টির লক্ষে। এগুলোর কামনা ও বাসনা, এগুলোর সাথে সম্পর্কের ভিত্তি ও সীমা ততটুকুই হবে যা আমার প্রতি আল্লাহ তাআলার হুকুম। তখন যেটা হবে, মুমিনের এগুলো হারানোর কষ্ট আল্লাহ তাআলার হুকুম হারানোর চেয়ে অধিক কষ্টদায়ক কখনো হবে না।

আমাদের প্রতি আল্লাহ তাআলার অশেষ ও অসীম মেহেরবানি যে ঈমান ও ইসলামের মত অমূল্য নেয়ামত আমরা পেয়েছি। তারপর যদি আমরা আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল ﷺ-এর ভালোবাসাকে জলাঞ্জলি দিয়ে পার্থিব মোহ ও ভালোবাসা “অন্ধভাবে” গ্রহণ করি এবং আমাদের ঈমানের উপর আঘাত আসা সত্ত্বেও যদি দুনিয়ার কোনো বস্তু (হোক তা ধন-দৌলত কিংবা প্রভাব- প্রতিপত্তি) অর্জনের খাতিরে তা সহ্য করা হয়, তখন আর বলতে দ্বিধা নেই যে জন্মগতসূত্রে ঈমান ও ইসলাম পেয়েও আমরা নিজের জন্য বঞ্চনার রাস্তা উন্মুক্ত করছি, নিজের অস্তিত্ব ভুলতে শুরু করেছি! এর লক্ষণই হল, চিরস্থায়ী বস্তুর উপর ক্ষণস্থায়ী বস্তু অস্বাভাবিকভাবে ও অনেক বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। আর দুনিয়ার জীবনের চাওয়া-পাওয়াই তখন মুখ্য হয়ে যায়। বলুন, এই অবস্থায় কী হারালে কষ্ট বেশী হবে?

অতএব, আল্লাহ তাআলার নেয়ামতসমূহের শুকরিয়া আদায়স্বরূপ তাঁর হুকুম পালনের পরিবর্তে যখন তাঁর হুকুম ক্রমাগত লঙ্ঘন করা হয় তখন মানুষের সুখ-শান্তি ও দুঃখ-কষ্টের কারণ বিপরীতমুখী হয়ে যায়। নেক কাজ ভালো লাগে না, নেক কাজ না করতে পারলে (বা নেক কাজের সুযোগ হারালে) কষ্ট লাগে না। কষ্ট লাগে কেবলই দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী কিছু হাতছাড়া হলে। গুনাহ ও নাফরমানি ক্রমশ চলতে থাকলে (যদি তওবা ও ইস্তেগফার ছেড়ে দেয়া হয়), আরো মা3703রাত্মক হল ঈমান ও হায়া (লজ্জা) হারানোর অনুভূতি নষ্ট হওয়ার আশংকা থাকে; আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি হারানোর অনুভূতি পর্যন্ত বিলোপ পেতে থাকে; নবীজীর ﷺ শাফাআত আর জান্নাত হারানোর অনুভূতি নিঃশেষ হতে থাকে। তখন নামায কাযা হলে কষ্ট লাগে না, গুনাহ হয়ে গেলেও পরওয়া হয় না, দ্বীনি পরিবেশ ও দ্বীনদার আত্মীয়স্বজন-প্রতিবেশী-বন্ধুবান্ধবদের প্রতি অবজ্ঞা সৃষ্টি হয়। এই শোচনীয় অবস্থা থেকে আমরা আল্লাহ পাকের পানাহ চাই।

আজ উম্মতের অবস্থা কী? এটা বুঝতে হলে নিজের দিকে ও নিজের অধীনস্থদের দিকে একটু তাকানই যথেষ্ট। দেখতে হবে আমার ও আমার পরিবার থেকে কী হারিয়ে গেলে বেশি কষ্ট হয়? কী হারানোতে মন বেশি কাঁদে, অন্তরে আঘাত বেশি লাগে? সেটা কী আল্লাহ‌ তাআলার কোনো হুকুম বা নবীজী ﷺ-এর কোনো সুন্নত? না কী নেহায়াৎ দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী কোনো বস্তু? প্রত্যেকেরই নিজের অবস্থার উপর চিন্তা-ফিকির করে তওবা ও ইস্তেগফারে নিয়োজিত হওয়া উচিত।

আমাদের সকল আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন!

By pressing the Subscribe button, you confirm that you have read and are agreeing to our Privacy Policy and Terms of Use
Add a comment Add a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous Post

কী হারালে বেশি কষ্ট হয়-১

Next Post

আসল অভাবের অনুভূতির হয়েছে অভাব