Dark Mode Light Mode

কী রেখে যাচ্ছি বিদায়ের আগে – ৩

মানুষ স্বভাবত কর্মশীল। এটা তার সৃষ্টি প্রকৃতি। সে কাজ ছাড়া থাকতে পারে না। মানুষের প্রতিটি কাজেরই একটি ফল রয়েছে। মানুষ নিজে নিজে কোনো কাজের ফলাফল পুরোপুরি বুঝতে সক্ষম নয়। এটা মানুষের সীমাবদ্ধতা। এটা তার জন্য হীনমন্যতা নয়। এটা বরং তার মুখাপেক্ষিতা। এবং এই মুখাপেক্ষিতা নিজ স্রষ্টার প্রতি। সহজ কথায়, সৃষ্টি তো সম্পূর্ণ অমুখাপেক্ষী হবে না; মুখাপেক্ষিতা তার মাঝে থাকবেই। সুতরাং মানুষ যে কাজ করবে, তার ফল সম্পর্কিত অজ্ঞতা তার মধ্যে থাকাটাই স্বাভাবিক।

যেকোনো কাজের বাস্তব ফল স্রষ্টার চেয়ে ভালো আর কে জানবে? কোনো কাজের উত্তম পন্থা তাঁর চেয়ে ভালোভাবে বাতলে দিতে আর কে সক্ষম হবে? সেজন্যই নিজের জন্য মানুষ যেটা অর্জন করতে চায়, সেটার বাস্তব কর্মপন্থা ও ফলাফল যদি খোদ স্রষ্টার কাছ থেকেই সে জেনে নিতে পারে – সেটাই সর্বোত্তম। আর এভাবে কর্ম ও কর্মপন্থা বাছাই করাটাই সুস্থ বিবেকের পরিচয়। তখনই মানুষ সফলতা অর্জনের সর্বাধিক সঠিক বীজটি বপন করতে পারবে।

আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে ​​সেই ‘সঠিক বীজ বপন করা’ শেখানোর জন্য​ কিছু মানুষকে স্ব-স্ব জনগোষ্ঠীর কাছে নবী-রাসূল হিসেবে মনোনয়ন ​করে পাঠিয়েছেন।

কেউ যদি নিশ্চিতভাবে জানে যে অমুক গাছটি লাগালে সেটা জীবনভর ফল দেবে, ফলও খুব সুস্বাদু হবে। তাহলে কি সে জেনে-বুঝে অন্য এক গাছের বীজ বপন করবে যেটা কিনা একবার ফল দিয়েই মারা যাবে? বা যে গাছের ফল দেয়াটাই অনিশ্চিত?!

মানুষের জীবন তো ফল দেয়ার জন্যই। নেক কাজে নিবেদিত মানুষের ফল সবার জন্য উপকারী হয়। মন্দ কাজে লিপ্ত মানুষের ফল সবার জন্য ক্ষতিকর হয়। যে নেক কাজ যত নেক তার সুপ্রভাব তত বিস্তৃত ও কল্যাণকর। আবার যে মন্দ কাজ যত মন্দ তার কুপ্রভাব তত বিস্তৃত ও ক্ষতিকর। উভয়ের ফলই স্থায়ী, কিন্তু বিপরীতধর্মী।

যে মানুষ মরণের পরও সুফল দিতে পারে, সে কত মুবারক (বরকতপূর্ণ)! মূলত এমন ব্যক্তিই বুদ্ধিমান। কারণ সে এটা বুঝেছে যে, নশ্বর এ পার্থিব হায়াতটিকে নেক কাজে লাগালে সে চিরস্থায়ী সুফল পেতে থাকবে। এমন ব্যক্তির আন্তরিক ইচ্ছা ও স্বপ্ন হল, আমার পার্থিব জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্তই আমার জীবন-গাছটি কেবল ফল ও ছায়া দেবে না। মৃুত্যুর পরও ইনশাআল্লাহ, যতদিন সূর্য উদিত হবে আর সূর্য অস্ত যাবে ততদিন এ জীবনের নেক প্রভাবটুকু বাকি থাকবে আল্লাহর জন্য, আল্লাহর রাহে!

এ পথের আহবানই আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে নবী ﷺ নিয়ে এসেছেন। যে দাওয়াতের অন্যতম কথা হল, মানুষের জীবন শুধুমাত্র পার্থিব গণ্ডিতে আবদ্ধ নয়। এর বিস্তৃতি তার বাইরে, পরজগতে। সেটাই আখেরাত।

আখেরাত কোনো কাল্পনিক জগৎ নয়। দুনিয়াতে যে চিন্তা-চেতনা, কর্মের বীজই মানুষ বপন করুক না কেন,পরিপূর্ণ ফল ভোগের মূল জায়গা সেটা। অর্থাৎ, যেমন বীজ এই দুনিয়া নামক কর্মক্ষেত্রে বপন করা হয়, তেমনই ফল আখেরাতে পেতে হয়। আখেরাত হল কবর-জীবনের পর বাস্তব ও চিরস্থায়ী জীবন। দুনিয়া ধ্বংসের পর সেখানে সব মানুষকে পুনরায় জীবিত করা হবে। সেখানে মানুষ প্রথমে নিজ চোখে স্বীয় কর্মফল দেখবে। তারপরই সে প্রাপ্ত হবে সংশ্লিষ্ট পুরস্কার বা শাস্তি। এ বিষয়টি নবী ﷺ শুধু মৌখিকভাবেই সতর্ক করেননি, নিজ চিন্তা-চেতনা ও কর্মকে উপস্থাপন করে মানুষের (স্বীয় উম্মতের) সামনে উদাহরণ ও আদর্শ হিসেবে পেশ করেছে। যেন মানুষ ভুল পথ বেছে না নেয়, সে যেন নেক কাজেরই বীজ বপন করে।

———————————————————————————————————————

* তাদের মনোনয়ন নিয়ে কো​নো প্রশ্ন উত্থাপনকারী​ অবশ্য​ চরম মূর্খ ​এবং বেয়াদব​ও ​​বটে। কারণ, দুনিয়ার প্রশাসন যদি কাউকে মনোনয়ন দেয়, সেই প্রশাসনের উপর কথা বলার সাধ্য কার?! আর আল্লাহ তাআলা তো সবকিছুর একচ্ছত্র অধিপতি।

আমাদের সকল আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন!

By pressing the Subscribe button, you confirm that you have read and are agreeing to our Privacy Policy and Terms of Use
Add a comment Add a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous Post

কী রেখে যাচ্ছি বিদায়ের আগে - ২

Next Post

সম্পদ ও সম্মান: বাস্তবতার উপলব্ধি আবশ্যক - ১