ড. আল্লামা খালেদ মাহমুদ (১৭ অক্টোবর ১৯২৫ – ১৪ মে ২০২০) ছিলেন একজন পাকিস্তানি আলেমে-দ্বীন। তিনি পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে ইসলামিক একাডেমি ও সিটি জামিয়া মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। নবুওয়াতের চূড়ান্ততা (খতমে নবুওয়ত) বিষয়ক তার গবেষণা ও রচনার জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন। Wikipedia থেকে সংগৃহিত
তিনি নিজের একটি চিত্তাকর্ষক ঘটনা বর্ণনা করেন:
আমার ছাত্র যামানার ঘটনা। ট্রেনের সফরে ছিলাম। একটা বগিতে আমি এক পাশে শুয়ে আছি, কিন্তু জাগ্রত। অদূরে কিছু কলেজ-ইউনিভার্সিটির ছাত্র ভাইয়েরা আছেন।
হঠাৎ শুনতে পারলাম: এক লোক ঐ ছাত্র ভাইদের বলল, একটু কথা বলতে পারি? ছেলেরা ইতিবাচক জবাব দিতেই সেই লোকটা নিজের পরিচয় দিল সে খ্রিস্টান ধর্মের একজন পাদ্রী।
আমার কান খাড়া হয়ে গেল! মতলব কী এই পাদ্রীর?
পাদ্রী বলতে লাগল: তোমাদের দেখে মুসলমান মনে হচ্ছে? ছেলেগুলো ইতিবাচক উত্তর দিল।
পাদ্রী তাদের বলল: তোমাদের ধর্মে যে দরূদ শরীফের একটা আমল আছে, সেটা জানা আছে? মুসলমান ছেলেগুলো বলল, হাঁ।
পাদ্রী তারপর বলল: পারবে বলতে কেউ? দরূদ শরীফ পাঠ করতে পারবে?
একজন ছাত্র দরূদ পড়ল: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ।
পাদ্রী বলল: এর অর্থ জানো?
ছাত্র ভাইয়েরা বলল, তা অবশ্য আমরা বলতে পারব না, দরূদের অর্থ জানি না।
পাদ্রী বলতে লাগল, আচ্ছা আমি বলে দিচ্ছি। এর অর্থ আল্লাহ তুমি মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপর রহমত বর্ষণ কর। আচ্ছা এই সূত্রে আমার একটা প্রশ্ন আছে, আমি তোমাদের কাছে সেটা জানতে চাই!
আমি (মাওলানা খালেদ মাহমুদ) তো এতক্ষণ শুয়ে শুয়ে শুনছিলাম, এখন উঠে বসলাম! পাদ্রী কী বলতে চায়??!
পাদ্রী বলতে লাগল, তোমাদের পয়গম্বর কতদিন হল দুনিয়া ছেড়ে গেছেন? এখনও তাঁর উপর দরূদ পাঠ করতে হচ্ছে, কেয়ামত পর্যন্ত পড়া হবে! এর কারণ কী? তার মানে হল, রহমত এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ হয়নি (নাউযুবিল্লাহ)। নবী দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে গেছে কত শত বছর, এখনও তার উপর রহমতই পূর্ণ হল না?! (নাউযুবিল্লাহ!)
[পাদ্রীর এ জাতীয় নোংরা কথা উল্লেখ করতে গিয়ে ঘটনা বর্ণনার এ পর্যায়ে মাওলানা খালেদ মাহমুদ সাহেব কেঁদে উঠলেন।]
ছেলেদের মধ্যে এই বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পাদ্রী তো মহাখুশি! এই মুসলমান যুবকদের কাছে এর জবাব পাবে না — জানে সে..
আমি তো আগেই উঠে বসেছিলাম। এবার আমি উঠে গিয়ে ঐ মাজমার এক কোণায় গিয়ে বসলাম।
পাদ্রী আমার পরিচয় জানতে চাইলে বললাম, আমি মুসলমানদের ছোটখাট এক মৌলভী। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কী প্রশ্ন করলেন?
একই কথা বলে আমাকেও পাদ্রী প্রশ্ন ছুড়ল।
আমি বললাম, এ কথা কাকে বলা হচ্ছে দেখ! তুমিই বল, দরূদ পড়ার সময় কাকে আমরা বলছি নবীর উপর রহমত বর্ষণ করতে?! পাদ্রী জবাবে বলল, আল্লাহকে বলা হচ্ছে। তারপর আমি পাদ্রীকে বললাম, হাঁ — আমরা কেবল আল্লাহকেই পূর্ণাঙ্গ মানি — কাউকে তাঁর সঙ্গে শরীক মানি না, শরীক করি না। নবীর রহমত ও মর্যাদা বৃদ্ধি যতই হোক, মনে করি না যে, তিনি কখনো খোদার মতন পূর্ণাঙ্গ হয়ে যাবেন! তাই যখন দরূদ পড়া হয়, আমাদের নবীর উপর রহমত বর্ষণের দোআটি অব্যাহত থাকে। আমাদের বিশ্বাস হল, নবী — তিনি মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ অবশ্যই — তবে তিনিও আল্লাহ তাআলার রহমতের মুখাপেক্ষী – (যেমন: খ্রিস্টানদের মতন) আমরা খোদার সঙ্গে নবীর কোনো তুলনা করি না! নবীকে কখনো খোদা বা খোদার পুত্রও বলি না!!
এ কথা শুনে পাদ্রীর মুখ বন্ধ হয়ে গেল।
ঘটনাটি উনার শেষ জীবনে একটি মাজলিসে ড. আল্লামা খালেদ মাহমুদ রহ. নিজে বলেছেন। আমরা উনার উর্দু ভিডিও দেখে ঘটনাটি এখানে বাংলা করে উপস্থাপন করেছি।