উসমান বিন মাযঊন রাযিআল্লাহু আনহু (মৃ. ২ হিজরী : ৬২৪ খৃস্টাব্দ)

রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাঁর জন্য কেঁদেছিলেন। যাঁকে তিনি চুমু খেয়েছিলেন। প্রবীণ এই সাহাবী তালি দেওয়া কাপড় দিয়ে দুনিয়াকে পরাস্ত করেছিলেন। শরীর পোঁছার আগেই যাঁর আত্মা উড়ে গেছে জান্নাতে। সাদামাঠা জীবনযাপন করতেন। পরকালের ধ্যানে মগ্ন। (আবিসিনিয়া ও মদীনা শরীফ) দুই হিজরতে ধন্য। দুনিয়া লাভ করেননি। দুনিয়াও তাঁকে ধরতে পারেনি। জীবনভর ছিলেন বুযুর্গ ও মুত্তাকী। মুসলমান হওয়ার পর থেকে আমৃত্যু তিনি ছিলেন পরহেযগার। তীব্র অনুভূতিপরায়ণ ছিলেন। তিনি উসমান বিন মাযঊন রা.। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘দারে আরকাম’-য়ে প্রবেশ করার আগেই মুসলমান হয়েছিলেন। দুইবার হিজরত করেছিলেন। জাহিলী যুগে বড় বুদ্ধিমান ও প্রজ্ঞাবান হিসেবে সমধিক পরিচিত। ইসলাম-পূর্বেই নিজের জন্য মদ্যপান হারাম করেছিলেন। মুহাজির সাহাবা কেরামের মাঝে তিনি ছিলেন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব। মদীনায় আগমনকারীদের মাঝে তিনিই সর্বপ্রথম মারা গিয়েছিলেন এবং তাঁকেই সর্বপ্রথম ‘জান্নাতুল বাকী’ গোরস্তানে সমাহিত করা হয়।

দিনের বেলায় রোযা রাখতেন আর রাত জেগে নামায ও ইবাদত বন্দেগী করতেন। সংসার-দুনিয়া ছেড়ে সফর-যাত্রা করে ভবঘুরে জীবনযাপন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বারণ করেন। পুরো জীবনটাকে দেয়ালবিহীন উপাসনালয়, উন্মুক্ত খানকায় পরিণত করেন। মোটা কাপড় পরিধান করতেন। রুটির টুকরো খেয়ে বেঁচেবর্তে ছিলেন। উসমান বিন মাযঊন রা.’র সহধর্মিণী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিবিদের নিকট গেলেন। তাঁরা দেখে বললেন, ব্যাপার কি, এমন সাজসজ্জাহীন? তোমার এমন করুণ দশা কেন? তোমার স্বামীর চেয়ে ধনী কোন লোক তো পুরো কুরাইশ গোত্রে নেই। তিনি বললেন, তিনি রাতে ইবাদত-বন্দেগীতে থাকেন আর দিনে রোযাদার। (সুতরাং সাজগোছ করবো কার জন্য?)

একবার হযরত উসমান বিন মাযঊন রা. নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এলেন। তাঁর গায়ে ছেঁড়া ও জীর্ণ কাপড়চোপড়। চামড়ার টুকরো দিয়ে তালি দেওয়া। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অবস্থা দেখে করুণা করলেন। এতে সাহাবা কেরামের চোখ অশ্রুসিক্ত হল। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তখন তোমাদের কেমন অবস্থা হবে যখন তোমরা সকালে একসেট জামা আর বিকেলে আরেক সেট জামা পরিধান করবে। তোমাদের সামনে রকমারি খাবার সামগ্রী পরিবেশন করা হবে। একবার এক রকম খাবারের ডিশ পরিবেশন করার পর পরক্ষণে অন্য রকম খাবারের ডিশ দেয়া হবে (!?)।

হযরত উসমান বিন মাযঊন রা.’র মৃত্যুসংবাদ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পৌঁছালে তিনি দৌড়িয়ে আসেন। দেখলেন, শয্যায় সটান হয়ে শোয়ে আছেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উপর পড়ে চুমো খেতে লাগলেন। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চোখের পানি উসমান ইবনে মাযঊনের গ-দেশের উপর পড়ছে আর তিনি বলছেন, (رَحِمَكَ اللهُ يَا عُثْمَانُ مَا أَصَبْتَ مِنَ الدُّنْيَا وَ لاَ أَصَابَتْ مِنْكَ) হে উসমান! আল্লাহ তাআলা তোমার প্রতি রহম করুন। তুমি দুনিয়া লাভ করোনি আর দুনিয়াও তোমার সাথে সম্পৃক্ত হতে পারেনি। (তিরমিযী, হাদীস : ৯৮৯)

error: you are not allowed to select/copy content. If you want you can share it