অসীম শক্তি ও কুদরতের অধিকারী, তিনিই আল্লাহ। এটা আমরা খুব কম বুঝি। এই জন্যই পেরেশানি ও চিন্তা অনেক ঘিরে ফেলে আমাদের। অথচ আমরা কি ঈমানদার নই?
হ্যাঁ, “আমরা ঈমানদার নই” এ কথাটা বলা না হলেও, এটা তো স্বীকার করতেই হয়, আজ ঈমান আমাদের খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে। নেক কাজ কমে গেছে, গুনাহও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। হাদীসে যেমনটা এসেছে, উম্মত সংখ্যায় হবে অনেক, কিন্তু খড়-খুটার মতন! দুনিয়ার মহব্বত, লম্বা লম্বা আশা উম্মতকে মৃত্যুর প্রতি বিতৃষ্ণ করে তুলবে।
তারপরও আমাদের ভরসাস্থল একমাত্র আল্লাহ তাআলাই। কারণ, ভরসাস্থল আসলে সবারই এক আল্লাহ! কেউ তা বুঝে, কেউ তা বুঝে না। কেউ তা স্বীকার করে, কেউ তা স্বীকার করে না। আল্লাহ তাআলা আমাদের মাফ করেন। বোঝার তাওফীক দেন।
ঈমান যতই দুর্বল হোক, এটাই মূল সম্বল দুনিয়া ও আখেরাতের। তাই তার যথাযথ মূল্যায়ন জরুরি। আরও দরকার এই ঈমানকে সজীব থেকে সজীব এবং আরও উন্নত করতে থাকার। যদি মুসলমানকে সর্বস্ব কুরবানি করতে হয়, তবুও। জীবন তো জীবনই। জীবন শুধু নয়। মান, ইজ্জত, সম্ভ্রম – সব কিছুই একজন ঈমানদার বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত থাকবে সর্বদা। তার চিন্তা -আল্লাহ তাআলা কী করলে সন্তুষ্ট হবেন, কোন পথে আল্লাহ তাআলার হুকুম কিভাবে মানা হবে।
আজ অমূল্য সম্পদ ঈমান নিয়ে আমাদের কি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা। অথচ এত বড় সম্পদটি আমরা পেয়েছি যেন ‘ফাও’। দুনিয়ার জীবনের প্রতিকূলতার মাঝে আমরা আমাদের ঈমানকে দোদুল্যমান করে ফেলছি। তারপরও আল্লাহ তাআলার অপার মহিমা, অসীম রহমত! তিনি আমাদের বার বার সুযোগ দেন। শত-সহস্রবার বাঁচিয়ে নেন। ‘যায় যায়’ ঈমানটা বিভিন্ন বাহানায় বাঁচে। কিন্তু আমরা আল্লাহ তাআলার প্রতি যদি একটুও কৃতজ্ঞ হতাম।
চিন্তা করুন, চারদিকে কী পরিমাণ ফেতনা আজ। একটু ভাবুন, আমরা কতটুকু ধরেছি আর ছেড়েছি কুরআন আর হাদীসকে(!) ইসলাম আজ আমার ব্যক্তিগত জীবনে বা পারিবারিক জীবনেই বা কতটুকু জায়গা নিয়েছে? যে কাজগুলো আমাদের সাধ্যের মাঝে, সে কাজগুলোরই যদি হিসাব করা হয়, তাহলেই ‘ধরা’ খাওয়ার অবস্থা। কী পরিমাণ নবির সুন্নতকে জীবনে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছি? কতটুকু চিন্তা-চেতনা, বিশ্বাস, জীবনের উদ্দেশ্য, ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা, প্রচেষ্টা, প্রত্যয় – আমাদের ঈমান নির্ভর? শুধু মুখের ঈমান, নাকি আন্তরিক ও কাজের মাধ্যমে আমাদের সেই ঈমান প্রকাশিত ও প্রমাণিত? গুনাহ বর্জনের মাধ্যমে আমাদের জীবনে কি ঈমানের প্রতিফলন রয়েছে, নাকি – ব্যস, আমরা নিজের ঈমান-কে যথেষ্ট বলছি আর নিজেই ধরে নিয়েছি “আমার ঈমান খুব ভালো” – কোনো কাল্পনিক ও চিন্তা-প্রসূত মাপকাঠিতেই।
একজন মুসলমান হবে আত্ম-সংশোধনে আজীবন সচেষ্ট। নিজের দোষ অন্বেষণে সর্বদা রত; সেগুলি দূরীকরণে সর্বাধিক যত্নবান। গুনাহ থেকে বাঁচাই হবে তার জীবনের অন্যতম সাধনা। কিন্তু আজ সেই রকম মুসলমান যেন ক্রমশ কমে যাচ্ছে। তাইতো অন্যকে দোষারোপের বাজার গরম। নিজের কাজের প্রতি আমাদের অবহেলা শুধু বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তরিকতা, সিদক (সত্যবাদিতা), ইখলাস হ্রাস পাচ্ছে। মনুষ্যত্ব ও মানবিকতার আসল রূপ বিদায় নিতে চলেছে। আল্লাহ তাআলার বিধান থেকে বিমুখ হয়ে পড়ছি আমরা। চিন্তা চেতনার মাঝে অগ্রাধিকার পাচ্ছে আরও কত ভালো ভাবে দুনিয়াতে বসবাস করা যায় – যদিও তা অন্যের হক নষ্ট করে হোক, আল্লাহ তাআলার নাফরমানি করে হলেও। ধান্দা চলছে যে করেই হোক আয়-ইনকাম বাড়াতে হবে; দ্বীনি শিক্ষা শুধু অবহেলা নয়, দ্বীনি শিক্ষাকে আজ অবমাননা করা হচ্ছে। দ্বীনদার তো দূরের কথা – দ্বীনদার বেশভূষার ব্যক্তি মাত্রই এখন হাস্য কৌতুকের পাত্র! উলামাগণকে সাহায্য সহযোগিতা তো দূরের বিষয়, তাদের ত্রুটি-দোষের খোঁজে ব্যয় হচ্ছে অনেক হায়াত! কতই না সীমালঙ্ঘনের পর সীমালঙ্ঘন চলছে আমাদের!
মুসলমানের ঘরে জন্ম নিয়ে আমরা যা করছি, তার জন্য আমাদের বুক আজ কাঁপছে না, কিন্তু কাল, যখন আমাদের সেই মহাশক্তিশালী, মহা-পরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলার সম্মুখীন হতে হবে, কি দশা হবে আমাদের?!