
ইহসান ও পারিবারিক জীবন
‘ইহসান’ আল কুরআনুল কারীমের একটি বিশেষ পরিভাষা যার ব্যাখ্যায় হাদীস শরীফে বলা হয়েছে (অর্থ): এমনভাবে আল্লাহ তাআলার ইবাদত কর যেন তুমি আল্লাহ কে দেখতে পাচ্ছ, আর যদি তাঁকে দেখতে না পাও (এমন অনুভূতি না এলে) তাহলে অন্ততপক্ষে এই ধ্যান-খেয়াল অন্তরে রাখ যে, তোমার আল্লাহ তোমাকে দেখছেন।
জনৈক ব্যক্তি একবার শায়খ আব্দুল হাই আরেফী رحمة الله عليه [হাকীমুল উম্মত শায়খ আশরাফ আলী থানভী رحمة الله عليه-এর খলীফা] এর কাছে নিবেদন করল, হযরত, আলহামদুলিল্লাহ্, আমি ইহসানের স্তরে পৌঁছে গিয়েছি। শায়খ আরেফী رحمة الله عليه তাকে মুবারকবাদ জানালেন ও বললেন, বাস্তবিকই ইহসান একটি বিরাট নেয়ামত যা অর্জন করতে পারলে অবশ্যই শুকরিয়া আদায় করা উচিত। তবে আপনার কাছে আমার জিজ্ঞাসা, ইহসানের এই অবস্থা কি আপনার শুধু নামাযের সময়ই হয় নাকি যখন আপনি স্ত্রী-সন্তান বা বন্ধু-বান্ধবদের সাথে মিলিত হন, কথাবার্তা বলেন, লেনদেন বা কোনো আচরণ করেন তখনো থাকে?
জবাবে লোকটি বলল, আমি তো মনে করেছি ইহসানের এই অবস্থা কেবল নামাযের সাথে এবং বেশির চেয়ে বেশি অন্যান্য ইবাদেতর সাথে। তাই নামাযেই ইহসানর গুণ অর্জনে সচেষ্ট হয়েছি এবং আল্লাহর রহমতে অনেকটা সফলও হয়েছি। কিন্তু নামাযের বাইরে অন্যান্য ক্ষেত্রেও যে ইহসান কাম্য সেটা তো কখনো ভাবিনি। শায়খ رحمة الله عليه তখন বললেন, এই ভুল ধারণটি ভাঙার জন্যই আমি প্রশ্নটি করেছিলাম।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, নামায ও অন্যান্য ইবাদতে এই ধ্যান-খেয়াল থাকা আবশ্যক যে, তুমি আল্লাহকে দেখছো বা তিনি তোমাকে দেখছেন। কিন্তু এই ধ্যান শুধু নামাযে সীমিত থাকা পূর্ণ ইহসান নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি অঙ্গনে এই ধ্যান থাকা চাই যে, আমার আল্লাহ আমাকে দেখছেন। বিশেষত: স্বামী-স্ত্রীর প্রত্যেককেই জীবন চলার ক্ষেত্রে এই ধ্যানটি জাররূক রাখা উচিত। কারণ, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটাই এমন যে তারা পরস্পরের শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গী হয়ে থাকেন। তাদের এই জীবন সফরে এমন অনেক ক্ষেত্র চলে আসে যে দিল ও দেমাগ বিস্বাদময় করে তুলে। ফলশ্রুতিতে মানুষ কখনো অবিবেচকের মত বেইনসাফি করে বসে। তাই এসব ক্ষেত্রে এই অনুভূতি থাকা অনেক বেশি জরুরি হয়ে দাঁড়ায় যে, আল্লাহ আমাকে দেখছেন। এই অনুভুতি না থাকলেই সাধারণত অন্যায় আচরণ হয়ে যায় ও পরস্পরের হক নষ্ট হতে থাকে। আল্লাহ তাআলা হেফাজত করুন। যিকির ও ফিকির: পৃষ্ঠা-৩০৩ অবলম্বনে
Last Updated on May 21, 2024 @ 5:56 pm by IslamInLife বাংলা