Dark Mode Light Mode

আল্লাহ অভিমুখী হওয়া: মুমিন জীবনের প্রধান কাজ

জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত অতিবাহিত হচ্ছে মানে হল, আমরা প্রতি মুহূর্ত মৃত্যুর দিকে ধাবমান। আর মৃত্যু দিকে ধাবমান অর্থ হল, আল্লাহ তাআলার কাছে ফিরে যাওয়ার সময়টি নিকটবর্তী হচ্ছে। সুতরাং প্রতিদিন আমাদের আল্লাহ তাআলার অভিমুখী হতে হবে। তা হলেই সময়ের সুরক্ষা হবে!

কিভাবে আল্লাহ তাআলার অভিমুখী হব

কুরআন তেলাওয়াত, দোআ, অথবা যেকোনো যিকিরের মাধ্যমেই সেটি সম্ভব। কোনো অসুস্থ মানুষকে আল্লাহর ওয়াস্তে সান্ত্বনা দেওয়াটিও আমাদেরকে আল্লাহ পাকের অভিমুখী করে। কোনো গরীবকে সাহায্য করাও আমাদেরকে আল্লাহ পাকের অভিমুখী করে। জাগতিক প্রয়োজনীয় কাজগুলো আল্লাহ তাআলার নির্দেশিত পথে করা হলে আমরা আল্লাহ অভিমুখী হলাম।  আরো সহজে বুঝুন, প্রিয় নবীজী ﷺ এর সুন্নাহ বা সুন্নতকে অবলম্বনকারী ব্যক্তি সর্বাধিক নিরাপদ!

স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা গুরুত্বপূর্ণ

যখন যে কাজটি জরুরি, সেটিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ইসলাম আমাদের এই সুমহান শিক্ষা দিয়েছে। এখানেই মুত্তাকী আলেমে দ্বীনের দিক-নির্দেশনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কখনো এমনও হতে পারে যে, কেউ তো সাওয়াব অর্জনের জন্যই আমল করছে, কিন্তু কোনো ওয়াজিব/জরুরি আমল ছেড়ে দিচ্ছে। অথবা এমনভাবে সাওয়াবের কাজটি করছে যার ফলে কারো অন্য কাউকে কষ্ট দিয়ে হারামে লিপ্ত হচ্ছে। হয়ত লক্ষ না করেই করছে, একটু লক্ষ করলে জানা যেত, অন্যকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা যেত।

এ জাতীয় ভুলগুলি বর্তমানে মসজিদে পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে! আমি মনে করছি, আমি তো সাওয়াবের কাজ করছি। অথচ এভাবে সাওয়াবের বিপরীতে কোনো মুসল্লীকে কষ্টে ফেলে দিচ্ছি। একজন মুসলমানকে কষ্ট দেওয়া তো স্পষ্টত গুনাহ। উদাহরণস্বরূপ: যেখানে নফল নামাযে দাঁড়ালে মানুষের কষ্ট হবে সেখানে নফল নামায় আদায় করা বা যেখানে অন্যের সালাত বা নামাযকে বিঘ্নিত করবে, এমন জায়গায় বসে তেলাওয়াতে মশগুল হওয়া — এ তো অনুচিত। তবে, অনিচ্ছাকৃতভাবে কারো এ জাতীয় কোনো ভুল-ভ্রান্তি  হয়ে গেলে ঘাবড়ানো যাবে না, হতাশ তো হওয়াই যাবে না! মসজিদে নতুন গমনকারী ব্যক্তিদেরকেও পুরনো মুসল্লীগণ যেন বুঝিয়ে বিষয়গুলি শুধরে দেন, এটি জরুরি।

উলাময়েকেরাম থেকে জেনে নিয়ে আমলের করণীয়-বর্জনীয় জেনে আমল করা সর্বসাধারণের জন্য জরুরি কাজ।

কষ্ট-ক্লেশের স্থান দুনিয়া

আল্লাহ অভিমুখী হওয়ার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা ও বোঝা জরুরি। পার্থিব জীবন সাধারণভাবে কষ্টের জীবন। অল্পেতুষ্টির জীবন গড়ে তুললে শান্তি পাওয়া যায়। আল্লাহ তাআলার সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট (অর্থাৎ, আমার ভাগ্যে তিনি যা রেখেছেন আমি তাতে খুশি) হওয়ার মধ্যে তো সব সমস্যারই যেন সমাধান!

তারাই পার্থিব জীবনে বেশি দুখী বা অসুখী যারা এখানে শুধু সুখের সন্ধান করে! যারা চায় তাদের মনের ইচ্ছাগুলি দুনিয়ায় পূরণ হোক তারা বেশি হা-হুতাশ করে থাকে। এর কারণ হল, পার্থিব জীবনে মনের ইচ্ছা খুব কমই পূরণ হয়ে থাকে। অধিকাংশ ইচ্ছা পার্থিব জীবনে অপূরণীয় থেকে যায়। যারা অন্যদের দেখে নিজের অবস্থা ও অবস্থান যাচাই করে ও সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়, সময়ের পরিক্রমায় তাদের অধিকাংশই ভুল প্রমাণিত হয়। কারণ স্থান, কাল ও পাত্র সবসময় ভিন্ন! সবার পরীক্ষা ভিন্ন, কারো এক নয়।

পার্থিব জীবনে কামনা-বাসনার সমুদ্রে নামা তো প্রশ্নই ওঠে না, এর তীরে অবস্থান করাও বিপজ্জনক। যারা কামনা বাসনার পূজারী তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। সে মুমিনের ঈমানই বেশি সুন্দর ও সুরক্ষিত যার পার্থিব কামনা-বাসনা কম। পার্থিব কামনা-বাসনাই সেই বাঁধা যা মানুষকে আল্লাহর পথে চলায় প্রথমতে দ্বিধায় ও পরে গাফলতে ফেলে দেয়। বান্দা যখন পার্থিব কামনা-বাসনার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে যায় তখন আখেরাতের প্রস্তুতিকে সে একরকম ভুলেই বসে! দিন-রাত তার পার্থিব আয়-উপার্জনেই ব্যয় হতে থাকে। মৃত্যু চলে আসলে কী পরিণতি হবে, আখেরাতের পুঁজি কী জমা হয়েছে, এ ব্যাপারে তাদের চরম অবহেলা!

আখেরাত-প্রত্যাশী ব্যক্তিদের অবস্থা

যারা আখেরাতের প্রত্যাশী হয় তাদের কামনা-বাসনা ভিন্নধর্মী। তাদের কাছে দুনিয়ার মূল্য নেই ঠিক, কিন্তু দুনিয়ার হায়াত বা জীবনটির অনে-ক মূল্য রয়েছে। আর এটিই সে উন্নত চিন্তা-চেতনা যা কিনা তাদেরকে আল্লাহ অভিমুখী করে তোলে! সহজে তাদের মুখ থেকে দোআ, যিকির বের হয়ে থাকে। কোন্ কাজটি কখন প্রাধান্য দেওয়া উচিত সেটি তারা উপলব্ধিও করে, সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। অথচ নানান পার্থিব কষ্ট-ক্লেশে তারাও জর্জরিত। কিন্তু এতে তারা কখনো সীমাতিরিক্ত ভেঙে পড়ে না। তারা পার্থিব সুখ-শান্তিকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয় না, আল্লাহ তাআলার প্রতি তাদের নিবিষ্টতা থাকে। দুনিয়ার ক্ষয়ক্ষতির বিপরীতে তারা সবসময় আখেরাতের পরিণতির কথা স্মরণ করে। তাদের মনে আল্লাহ তাআলার ভয় ও ভালোবাসা দোল খায়। এতে প্রাপ্ত শান্তি সীমাহীন ও অতুলনীয়! এটিই রুজু’ ইলাল্লাহ বা ইনাবত ইলাল্লাহর জাগতিক ফলেই অর্জন করা সম্ভব। আখেরাতে আল্লাহ-মুখীতার প্রাপ্তি ও সুফল আরো অনেক বড় ও বিশাল ইনশাআল্লাহ! এতেই মুমিন হৃদয় সদা-সর্বদা প্রশান্ত।

আল্লাহ তাআলার প্রতি সুধারণা ও যিকিরের মাধ্যমে তাঁর অভিমুখী হওয়া

সাইয়্যেদুনা আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, প্রিয় রাসূলুল্লাহ ﷺ  বলেছেন (অর্থ): আল্লাহ সুবহানু ওয়া তাআলা বলেন: আমার প্রতি আমার বান্দার যেমন ধারণা আমি সেই ধারণা অনুযায়ী তার সঙ্গে আছি, এবং আমি তার স্মরণ অনুযায়ী তার সঙ্গে আছি। যদি সে নিভৃতে (অন্তরে/মনে মনে) আমাকে স্মরণ করে, আমিও তাকে নিভৃতে স্মরণ করি। যদি সে দলবদ্ধভাবে আমাকে স্মরণ করে, আমি তার চেয়ে উত্তম দলে (যেমন: ফেরেশতাদের মধ্যে) তাকে স্মরণ করে থাকি। যদি সে এক বিঘত আমার দিকে অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। যদি সে এক হাত অগ্রসর হয়, আমি দু হাত সম্প্রসারিত করে তার দিকে অগ্রসর হই। যদি সে আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দৌঁড়ে যাই। বুখারী ও মুসলিম

তওবার মাধ্যমে আল্লাহ মুখী হওয়া

তওবার মাধ্যমে মুমিন আল্লাহ তাআলার সঙ্গে পুনরায় সুসম্পর্ক করে ফেলে! আল্লাহ তাআলা তওবাকারীকে ভালোবাসেন। যত গুনাহই হয়ে যাক, খাঁটিভাবে তওবা করা বান্দার কাজ। হাদীস শরীফে, রাতের গুনাহগারের জন্য দিনে, দিনের গুনাহগারের জন্য রাতে আল্লাহ তাআলার তওবার পথ (অর্থাৎ, আজীবন) খোলা রয়েছে আশ্বাস দিয়ে খাঁটিভাবে তওবা করতে বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলার নেক বান্দা হওয়ার এও এক অন্যতম পথ! আমাদের মতন গুনাহগারদের জন্য মহা সুসংবাদই বটে। আল্লাহ অভিমুখী হয়ে তাঁর প্রিয় হওয়ার জন্য খাঁটি তওবা করাই যথেষ্ট!

পার্থিব জীবনে বান্দা আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে বেশি নৈকট্য কখন অর্জন করে থাকে

এখানে একটি সংশয়ের কারণে প্রশ্ন উঠতে পারে যে, আল্লাহ তাআলা তো আমাদের নিকটেই! তা হলে ‘তাঁর সবচেয়ে নৈকট্য’ বলতে এখানে কী বোঝানো হয়েছে? বুঝে নিন, আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সবচেয়ে সুসম্পর্কের ভিত্তিতে তাঁর নৈকট্য অর্জনই এখানে বোঝানো উদ্দেশ্য।

বুদ্ধি দিয়ে ভাবলে ও সিদ্ধান্ত নিলে মনে হতে পারে, কাবা শরীফের সামনে পৌঁছতে পারলে কেউ পার্থিব জীবনে আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে বেশি নৈকট্য অর্জন করতে পারবে। এটিও এক ধরণের উত্তম নৈকট্য, কোনো সন্দেহ নেই! তারপরও মৌলিকভাবে আল্লাহ তাআলার সর্বাধিক নৈকট্য অর্জনটি আলহামদুলিল্লাহ আরো অনেক সহজ! সূরা আলাক্ব-এর ১৯ নম্বর আয়াতে আছে:

وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ

অর্থ: আপনি সেজদা করুন ও আমার নৈকট্য অর্জন করুন।

মুফাসসিরগণ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুসলিম শরীফের এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন (অর্থ): বান্দা সব হালতের মাঝে, সেজদা অবস্থায় আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী হয়ে থাকে।

অতএব, আল্লাহ মুখী হওয়ার জন্য সেজদা কতই না উত্তম মাধ্যম! হাদীসে তো সেজদারত অবস্থায় দোআ করারও তাগিদ দেওয়া এজন্যই দেওয়া হয়েছে কারণ, বান্দা আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে নিকটবর্তী পৌঁছে যায়!!

আমাদের সকল আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন!

By pressing the Subscribe button, you confirm that you have read and are agreeing to our Privacy Policy and Terms of Use
Add a comment Add a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous Post

সমসাময়িক বিষয় ও সর্বসাধারণ মুসলমানদের কখন করণীয় কী: জ্ঞান লাভের মৌলিক নীতি ও নির্দেশনা

Next Post

মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর - ১