Dark Mode Light Mode

আল্লাহ তাআলার সর্বোচ্চ সতর্কবাণীর ওপর চিন্তা করে সতর্ক হওয়ার সময়

নেক বান্দাদের অবস্থা

নেককারগণ নেককাজ করে নিজেকে আল্লাহ তাআলার দরবারে এভাবে পেশ করে থাকেন যেন তারা বিরাট গুনাহ করেছে ফেলেছেন। এর একটি কারণ হল, উনাদের সম্মুখে নিজেদের থেকে উন্নত নেককারগণের হালত বা অবস্থা বিদ্যমান থাকে। সেই তুলনায় নিজের নেকিকে পর্যন্ত উনারা অপর্যাপ্ত ও সামান্য-ক্ষুদ্র মনে হতে থাকেন। আরেকটি কারণ হল, সবসময় তাদের মধ্যে এমন ভীতি কাজ করে থাকে যে, হায় আমি যা করছি এসব তো আমার বা মানুষের নজরে খুব ভালো কাজ। আল্লাহ তাআলার নজরে এসব আদৌ গৃহিত হচ্ছে কিনা জানা নেই! হতে তো পারে যে, আমার আমলের ভেতর কোনো বড় কোতাহি (ত্রুটি) আছে, যার কারণে সবই বরবাদ হবে (আল্লাহর পানাহ!)। আরেকটি কারণ হল, নেককারগণই নিজেদের অধিক গুনাহগার বলে বিশ্বাস করে থাকে। তারা নিজের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র গুনাহকেও মারাত্মক বড় ভেবে চিন্তায় বিভোর থাকে। নেককাজ কতটুকু করল, কত বেশি হল সেদিকে তাদের খেয়ালই থাকে না। বরং ভুলেই যান। কেউ স্মরণ করালেও তাদের অবস্থা এমন যে, নিজ আমলের ওপর কোনো ফখর (গর্ব-অহংকার) ও আস্থা থাকে না।

বাস্তবে প্রকৃত নেককারগণ আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব ও মহত্বর সামনে ঝুঁকে থাকেন। নিজের ক্ষুদ্রতার যে এ’সাস (অনুভূতি) তাদের ভেতর থাকে সেটি কখনো নিজের কোনো বাহাদুরির চিন্তাকে মাথায় আনতে দেয় না। তাদের ভেতর আমিত্ব মেটানোর প্রকৃত চর্চা থাকার বরকত এটি!

সবই আল্লাহ সুবহানু ওয়া তাআলার অপার রহমত

যাহোক, সবই তাদের ওপর আল্লাহ তাআলার খাস (বিশেষ) রহমত। নিয়ত, সুন্নতের ইত্তেবা (অনুসরণ) , নিজ সংশোধন ও নাজাতের চিন্তা, তাদেরকে ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সমকালীন মানুষের জন্য হেদায়েতের মাধ্যম বানান। উনারা যিকির-ফিকিরে মশগুল। কারো মধ্যে আমলের যওক-শওক, কারো মধ্যে ইলম অর্জন-বন্টনের যওক-শওক — সবাই তারা আল্লাহ তাআলার মাহবুব বান্দা! মাশাআল্লাহ..

আমাদের করণীয়

আমরা গুনাহগাররা কমপক্ষে তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকি, ভালোবাসি তাদের! তাদের সঙ্গ-সোহবতকে অমূল্য বুঝে সেটির কদর করি ইনশাআল্লাহ। তাহলে তাদের সেই নেক প্রভাব আমাদের ওপরও কিছুটা পড়বে ইনশাআল্লাহ! এতে আমরাও আল্লাহ তাআলার রহমতের উপযুক্ত হতে পারব ইনশাআল্লাহ, আমাদের গুনাহ ক্ষমা করানোর পথ পেয়ে যাব ইনশাআল্লাহ। বান্দার গুনাহ আল্লাহ তাআলাই ক্ষমা করেন, রহমত তিনিই দান করেন। তবে নেক সঙ্গের প্রভাব এসবকে ত্বরান্বিত করে থাকে। এটি ভুলে গেলে চলবে না!

একশত জনকে হত্যাকারী সেই ব্যক্তি শেষমেশ নেক মানুষের বসতির দিকে রওয়ানা করেই খাঁটি তওবার নিয়তের (দৃঢ় ইচ্ছার) বরকতে মুক্তি পেয়েছিল, যেটি বুখারী শরীফে বর্ণিত বিখ্যাত ঘটনা!

আমাদের সবার প্রতি আল্লাহ তাআলার সর্বোচ্চ সতর্কবাণী

দিনে-দুপুরে, সন্ধ্যা-রাতে, প্রকাশ্যে-গোপনে কতরকম গুনাহে লিপ্ত হয়েও যদি আমরা আজ গুনাহ করা থেকে বিরত না হই!? তওবা না করি আর আল্লাহ তাআলার বারগাহে নিজেকে লজ্জিত-অনুতপ্ত অবস্থায় পেশ না করতে পারি, আল্লাহ না করুন, শীঘ্রই মহা আফসোসের দিন আসবে! সেদিন শোধরানোর কোনো রকম সুযোগ মিলবে না, কোনো ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব হবে না। দেখুন আল্লাহ তাআলা ঈমানদারগণকে লক্ষ করে কী বলছেন:

يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ إِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيمٌ

হে মানুষ! তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। নিশ্চয় কেয়ামতের প্রকম্পন একটি ভয়ংকর ব্যাপার।

يَوْمَ تَرَوْنَهَا تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّا أَرْضَعَتْ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا وَتَرَى النَّاسَ سُكَارَى وَمَا هُم بِسُكَارَى وَلَكِنَّ عَذَابَ اللَّهِ شَدِيدٌ

যেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন প্রত্যেক স্তন্যধাত্রী তার দুধের শিশুকে বিস্মৃত হবে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত করবে এবং মানুষকে তুমি দেখবে মাতাল; অথচ তারা (মদ খেয়ে যেমন হয় সেরকম কোনো কারণে) মাতাল নয়, বস্তুতঃ আল্লাহর আযাব সুকঠিন।

وَمِنَ النَّاسِ مَن يُجَادِلُ فِي اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّبِعُ كُلَّ شَيْطَانٍ مَّرِيدٍ

কতক মানুষ অজ্ঞানতাবশতঃ আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে এবং প্রত্যেক অবাধ্য শয়তানের অনুসরণ করে।

كُتِبَ عَلَيْهِ أَنَّهُ مَن تَوَلَّاهُ فَأَنَّهُ يُضِلُّهُ وَيَهْدِيهِ إِلَى عَذَابِ السَّعِيرِ

শয়তান সম্পর্কে লিখে দেয়া হয়েছে যে, যে কেউ তার সাথী হবে, সে (শয়তান) তাকে বিভ্রান্ত করবে এবং দোযখের আযাবের দিকে নিয়ে করবে। সূরা হজ্ব – ২২:১-৪

উপরের আয়াতগুলো গভীরভাবে পড়ুন। কয়েকবার পড়ুন! আল্লাহ তাআলা তাঁর সব বান্দাদের অর্থাৎ, পুরো মানবজাতিকে লক্ষ করে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সতর্কবাণী জারি করে দিয়েছেন। এবার যার সম্বিৎ ফিরবে না, সে আসলেই কত হতভাগ্য, কারণ সে তো শয়তানেরই সাথী হবে! শয়তান তাকে দোযখ পর্যন্ত নিয়ে ছাড়বে।

পবিত্র রমযান মাসে নিজের দিকে বিশেষ লক্ষ রাখি

রমযানের পবিত্র দিনগুলোতেও আমরা নিজেকে হারিয়ে না ফেলি। তাহলে তো অন্য দিনগুলোতে তওবা করা আরও কঠিন হয়ে পড়বে!

যে সময়গুলোতে নেককারগণ নিজেদের নেকি বৃদ্ধি করেও আল্লাহর দরবারে কেঁদে ফিরছে, নিজের মুক্তি নিয়ে চিন্তায় বিভোর..আমাদের মতন গুনাহগারের অবস্থা কেমন হওয়া উচিত, ভেবে অতি সত্বর খাঁটি তওবা করি ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ তাআলার রহমত অসীম। আন্তরিক তওবা করে সেখানে হাত পাতলে কেউ বঞ্চিত হব না ইনশাআল্লাহ!

আমাদের সকল আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন!

By pressing the Subscribe button, you confirm that you have read and are agreeing to our Privacy Policy and Terms of Use
Add a comment Add a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous Post

রমযান চিরকাল জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায়

Next Post

পরিবর্তন আজই: এ সুযোগ আর কোনোদিন নাও আসতে পারে