আমাদের আকাঙ্ক্ষা, আমাদের স্বপ্ন, আমাদের পরিকল্পনা, আমাদের প্রস্তুতি আর আমাদের কাজ-এর প্রতি আমরা একটু লক্ষ্য করি।
হয়ত আমরা প্রত্যেকে এই দাবী করছি যে, আমার জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনুযায়ীই আমি সম্মুখে অগ্রসর হচ্ছি। কমপক্ষে কর্মক্ষেত্রে মনোযোগী হয়ে প্রত্যেকে হয়ত নিজেকে এই সান্ত্বনাও দিচ্ছি – হ্যাঁ-হ্যাঁ আমি এই সব আকাঙ্ক্ষা/স্বপ্ন/পরিকল্পনা/প্রস্তুতি ও কাজ নিজের সার্বিক মঙ্গলের জন্যই করে যাচ্ছি। কিন্তু বাস্তবতা কি? প্রকৃতপক্ষে আমি কি নিজেকে নিজে প্রতারণা করছি না-তো?! আমার আকাঙ্ক্ষা, পরিকল্পনা, প্রচেষ্টা ও কাজকর্ম কি সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে?
ধরুন কেউ ডাক্তার হবার ইচ্ছা পোষণ করেছে, কিন্তু পড়তে শুরু করল ইঞ্জিনিয়ারিং….কেমন হল? এই উদাহরণটা একটু অবাস্তব মনে হচ্ছে, না? আচ্ছা, ধরুন, কেউ বলছে আমি পরীক্ষায় খুবই ভালো রেজাল্ট করতে চাই। পরীক্ষা একদম নিকটবর্তী হওয়া সত্ত্বেও একটুও পড়ছে না, কোনো প্রস্তুতি নেই, তবু সে বলেই চলছে যে ঐ পরীক্ষায় ভালো করার তার অনেক আগ্রহ। কেউ ভালো ব্যবসায়ী হবার ইচ্ছা পোষণ করেছে, কিন্তু খুঁজছে চাকুরি। আবার ধরুন ইংরেজি ভাষা শেখার তীব্র আকাঙ্ক্ষা ও স্পৃহার কথা উল্লেখ করেও কোনো একজন (ব্যক্তি) ইংরেজি ভাষা শেখাটাই এখনো শুরু করছে না। কোনো ব্যক্তি শুধু তার আকাঙ্ক্ষার কথা বলেই চলছে, আমি মিতব্যয়ী হব। কিন্তু যখনই কোনো দোকানে যায় আর কোনো কিছু দেখে তার ভালো লেগে যায়, ব্যস! আর দেরি নয়। এটা কিনতে হবে, ওটা কিনতে হবে। তারপর কিনেই ফেলে।
আমাদের অনেকের মনে এমন অনেক ভালো আকাঙ্ক্ষা, চাহিদা তৈরি হতেই থাকে। এই করব, সেই করব, ঐ করব। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে আমাদের চেষ্টা-মেহনত হয় বিপরীত। আফসোসের সময় কিছুটা সেটা বুঝে আসে। কিন্তু আবার সেই একইভাবে আমরা চলি। অলস, লক্ষ্যভ্রষ্ট, সময় বিনষ্টকারী, অসচেতন – নিজেকেই নিজে এইসব উপাধি দিতে তখন আমরা দ্বিধাবোধ করি না।
আমাদের জীবন-প্রবাহ থেমে নেই। কবরের জীবনের দিকেই আমরা ধাবমান। হাদীসে কবর যিয়ারতের এক দোআ-র মধ্যে তাই এরকমই শব্দাবলী বলা আছে (অর্থ): (সালাম দেওয়ার পর) ইনশাআল্লাহ, আমরা (জীবিতরা) তোমাদের (ইন্তেকাল-প্রাপ্তদের) সাথে মিলিত হবো।
আমরা প্রত্যেকেই আমাদের জীবনের চাওয়া-পাওয়া, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা, পরিকল্পনার দিকে বিশেষভাবে একটু মনোযোগী হই। কারণ, কবর সামনে, বিচার-দিবস সামনে, আসছে আল্লাহ তায়ালার সামনে দাঁড়ানোর সেই সুমহান মুহূর্ত…..।
কোনো মুসলমান যখন তার জীবন, জীবনের পরিণতি, জীবনের চাওয়া-পাওয়া আর পরিকল্পনা-প্রচেষ্টা নিয়ে চিন্তা ফিকির করবে, তার সব কিছুই ঘুরবে একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে। আর তা হল – “আমার আল্লাহ খুশী হচ্ছেন তো(?)” দুনিয়াতো – দুনিয়াই। মুসলমান-তো সবই দেখবে আখেরাতকে উদ্দেশ্য করে।
আজ আমাদের যত সমস্যা, যত ফিতনা-ফ্যাসাদ, জীবনে যত প্রকার অশান্তি আর অসুবিধা, সবই এজন্যই যে, আমরা মন মত চলছি। দোআ-র মধ্যে বলছি, রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল্ আ-খিরাতি হাসানা…আর কাজের সময় সব দুনিয়া আর আখেরাতের অনিষ্টকারী বস্তুর সমাগম-সরঞ্জাম-এর আয়োজন। তাতে আখেরাতে “হাসানা” পাওয়া তো দূরের কথা, দুনিয়াই “হাসানা” হচ্ছে না। মুখে বলছি এই পরিকল্পনা আর প্রচেষ্টার পিছনে মহৎ উদ্দেশ্য রয়েছে, আর কাজ হল পুরোই আল্লাহ তাআলার নাফরমানির। যেমন, আজকাল গান-বাদ্য গেয়েও মানুষকে ক্যান্সার থেকে বাঁচানোর জন্য “চ্যারিটি-শো” করে টাকা তোলা হয়। কোনো মুসলমান এভাবে বাঁচতে চাইবে? আচ্ছা, আপনি চাইবেন যে আল্লাহ না করুন, আপনার ক্যান্সার হলে, আপনার পরিবারের সদস্যরা আল্লাহ তাআলা-কে নারাজ করে আপনার জন্য টাকা নাজায়েয অনুষ্ঠান করে তুলুক?!
কাফির-মুশরিকরা তো দুনিয়াকে উদ্দেশ্য বানিয়ে সে অনুযায়ী তাদের পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টাকে সাজিয়েছে এবং খুব কাজ করছে। আমাদের, অর্থাৎ, মুসলমানদের কি হল?! আমরা কি আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য আর তদানুযায়ী আমাদের প্রচেষ্টা কি করা উচিত, তা ভুলে গিয়েছি? নাকি যারা ইসলাম পায়নি, তাদের পথ আমাদের থেকে উত্তম বলে আমরা মনে করছি?! আল্লাহ তায়ালা হেফাযত করুন।
কেউ মুসলমান হবার দাবীও করছি, কিন্তু নামায পড়ছি না, পর্দা-কে হেয় করছি, সুদ-ঘুষ সম্পর্কে বেপরোয়া হচ্ছি, গান-বাদ্য আর গীবত চর্চা করছি…..তবু্ও আশা করছি আল্লাহ তাআলা আমায় ক্ষমা করবেন….বলুন, এটা তাহলে কেমন?
চলুন সংশোধনের ফিকিরে লাগি। দ্বীন সম্পর্কে জানতে শুরু করি আর আল্লাহ তাআলার সাহায্য কামনায় দোআর মধ্যে লেগে যাই। ইনশাআল্লাহ অবস্থার পরিবর্তন হবে, যদি আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকে।
একটু লক্ষ্য করুন, আল্লাহ তাআলার সতর্কবাণী। [রহমতের কথা বলে কি সুন্দর দয়াময় আল্লাহ তায়ালা সাবধান করছেন… ]
অর্থ: বলে দিন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজ সত্ত্বার উপর সীমালঙ্ঘন করেছে, আল্লাহ তায়ালার রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সমস্ত পাপ ক্ষমা করেন। নিশ্চয়ই তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হয়ে যাও, তাঁর সমীপে আনুগত্য প্রকাশ করো তোমাদের নিকট শাস্তি আসার আগে, যার পর আর তোমাদেরকে সাহায্য করা হবে না। সূরা যুমার – ৩৯:৫৩-৫৪