২৩তম তারাবীহ: ২৬তম পারার মর্মার্থ
সূরা আহকাফ
মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত পঁয়ত্রিশ, রুকু তিন
অন্যান্য মক্কী সূরার মতো এ সূরার আলোচ্য বিষয়ও ৩টি, যথাঃ তাওহীদ: আল্লাহ তা’আলার একত্ববাদে বিশ্বাস স্থাপন। রিসালাত: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নবুওয়তের সত্যতা স্বীকার। আখেরাত: পরকালে বিশ্বাস স্থাপন। এ সূরার শুরুতে তাওহীদ, কুরআনের সত্যতা ও পরকালের বাস্তবতার মত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের আলোচনা ওঠে এসেছে। সাথে সাথে মুশরিকদের প্রতিমাগুলোর অক্ষমতা তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো শুনতে পায় না, দেখতে পায় না, এমনকি কল্যাণ অকল্যাণের কোনো ক্ষমতাও তাদের নেই।
এ ছাড়া সূরা আহকাফে অন্যান্য যে বিষয় গুলো আলোচিত হয়েছে সেগুলো পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হলো :
১. মুশরিকদের কাছে কুরআন শরীফের আয়াত তিলওয়াত করা হলে তারা বিভিন্ন সন্দেহ সংকায় জাগানিয়া আপত্তি উত্থাপন করত। বলত, তোমরা যেটাকে কুরআন বলে ভাবছো তা তো সুস্পষ্ট যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়, এটা তো মুহাম্মদের স্বকল্পিত মনগড়া কিছু কথা। (মুমিন ব্যক্তিদের) ঈমান যদি কল্যাণের কিছু হত তাহলে গরীব দরিদ্র এবং চাষাভুষো শ্রেণীর লোকেরা আমাদের আগে তা গ্রহণ করতে পারত না। কাফের মুশরিকদের এ ধরনের ওজর আপত্তির বাকরূদ্ধকর জবাব দেওয়া হয়েছে। (৭-১২)
২. সূরা আহকাফে আমাদের সামনে দু’টি বিপরীতমুখী দৃষ্টান্ত পেশ করা হয়েছে; প্রথমত: একজন নেক সন্তানের দৃষ্টান্ত, যার হৃদয় ঈমানের নূরে উদ্ভাসিত, শরীয়তের হুকুম আহকামের উপর সদা অটুট, মাতা পিতার আদর যতেœ যখন সে বড় হয়, স্বাস্থ্য সবলতায় ও বোধ বুদ্ধিতে পরিপক্ক হয় তখন সে আল্লাহ তা’আলার কাছে তিনটি দোআ করে:
এক, হে আল্লাহ! আপনার নেয়ামতের শোকর আদায় করার তাওফীক দান করুন।
দুই, আপনার মরজী মাফিক আমল করার তাওফীক দান করুন।
তিন, আমার সন্তান সন্ততিদের নেক বানান।
এমন নেক সন্তানের জন্য আল্লাহ তা’আলা জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। (১৫-১৬)
দ্বিতীয়ত: এক হতভাগা নাফরমান ছেলের দৃষ্টান্ত যে তার পিতা মাতার পক্ষ থেকে ঈমানের দাওয়াত পেয়েও তা প্রত্যাখ্যান করে, যে তার পিতা মাতাকে বলে “উফ! তোমরা আমাকে মৃত্যুর পর পুনরুত্থিত হওয়ার কথা বলছ, অথচ আমি আমার জীবনে অনেককে মরতে দেখেছি, তাদের কাউকে তো আবার যিন্দা হতে দেখছি না।” (১৭)
প্রথম নমুনাটি হল মুমিনদের আর দ্বিতীয় নমুনাটি কাফির মুশরিকদের। উভয়ই নিজেদের কৃতকর্মের প্রতিদান পাবে।
৩. সূরা আহকাফে আদ জাতির অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। নবী হুদ আ. কে কষ্ট দেওয়ার কারণে তাদেরকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। শাস্তি স্বরূপ তাদের উপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষণ করা হয়। কিছুকাল যাবৎ অনাবৃষ্টি ও তীব্র গরমের কারণে তারা অতিষ্ট হয়ে উঠেছিল। হঠাৎ মেঘের ঘনঘটা দেখে তারা যারপর নাই আনন্দিত হয়। তারা মনে করছিল, আজ মুষলধারে বৃষ্টি হবে। আনন্দের আতিশয্যে তারা ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। কিন্তু ঠিক বৃষ্টির সময় এক মহাপ্রলয়ঙ্কর ঝঞ্ঝাবায়ু ধেয়ে আসে। ‘আদ’ জাতি ছিল বিশাল দেহের অধিকরী। কিন্তু প্রলয়ঙ্কর বাতাস যখন তাদের শূন্যে ভাসাতে শুরু করে তখন তাদেরকে বাতাসে ঘুর্ণয়মান বিক্ষিপ্ত ধূলিকণার মত মনে হচ্ছিল, এরপর যখন তারা যমীনে নিক্ষিপ্ত হয়, তখন তাদেরকে মৃত বিক্ষিপ্ত খেজুর গাছের মত দেখা যাচ্ছিল। আদ জাতির আযাবের কথা শুনিয়ে মক্কাবাসীদেরকে ভয় দেখানো হয়েছে। আর যাই হোক, তারা তো কওমে আদের চেয়ে বেশী বলবান ও প্রাচুর্যময় নয়, সুতরাং কুফর ও শিরকের কারণে শাস্তি দিয়ে তাদেরও যে কোনো মুহূর্তে শেষ করে দেয়া হতে পারে। (২১-২৬)
৪. নবীজীর মুখে কুরআন শুনে মুগ্ধ হয়েছিল এমন একটি জ্বিন দলের আলোচনা করা হয়েছে এ সূরায়। নিরবে মনোযোগ দিয়ে কুরআন শ্রবণের ফলে কুরআনের অলৌকিক মাহাত্ম্য এবং সত্যতা তাদের হৃদয় মনে প্রভাব বিস্তার করে। তারা ঈমান আনে এবং নিজেদের সম্প্রদায়ের কাছে ঈমানের দাওয়াত নিয়ে যায়। সর্বমোট ছয় বার জ্বিনেরা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে উপস্থিত হয়েছিল বলে কোন কোন মণীষী উল্লেখ করেছেন।
৫. সূরার শেষাংশে বলা হচ্ছে, যে সত্ত্বা সৃষ্টি করতে পারেন, সে সত্তা পুর্ণজীবন দান করারও ক্ষমতা রাখেন। সাথে সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্দেশ প্রদান করা হচ্ছে, “আপনি ধৈর্য ধারণ করুন, যেমন ধৈর্য ধারণ করেছে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাসূলগণ।”