স্বাদ-বিনাশকারী যেন চির-স্বাদবিনাশকারী না হয়ে যায়
সাইয়্যেদুনা আনাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন (অর্থ): আদম সন্তান মৃত্যুর চেয়ে এত গুরুতর কিছুরই সম্মুখীন হয়নি যখন থেকে আল্লাহ তাআলা তাকে সৃষ্টি করেছেন আর মৃত্যু সবচে সহজতর (ঐসবের মধ্যে) যা পরবর্তীতে আসবে। মুসনাদে আহমাদ
সাইয়্যেদুনা আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন (অর্থ): স্বাদ-বিনাশকারী মৃত্যুকে তোমরা বেশি করে স্মরণ করো। তিরমিযী
আমরা কেউ জানি না ঠিক কবে, কখন আমাদের জীবন ঘড়ি থেমে যাবে। অধিকাংশ দিনই মৃত্যুর আলোচনাবিহীন অতিবাহিত হয়ে যায়। কিন্তু এমন যেন না হয় যে অধিকাংশ দিন অতিবাহিত হয় মৃত্যুর স্মরণ ছাড়া!
আলহামদুলিল্লাহ একজন খাঁটি ঈমানদারের কোনো দিনই মৃত্যু-চিন্তা ব্যতীত অতিবাহিত হয় না। কারণ দিনে পাঁচ পাঁচবার সে নামায পড়ে থাকে। নামাযের বরকতে দিনে অন্তত একবার হলেও তার মৃত্যু-চিন্তা চলেই আসে, চলে আসে আখেরাতের প্রস্তুতির চিন্তা।
এটি এমন এক চিন্তা যার সম্পর্কে হাদীসই বলছে এটি “স্বাদ-বিনাশকারী”! জীবিত মানুষকে সতর্ক করার লক্ষে মৃত্যুকে সংজ্ঞায়িত করে বোঝানোর জন্য মনে হয় না এত সংক্ষেপে আর অন্য কোনো শব্দ ব্যবহার এতটা সার্থক হবে! তাইত হাদীসে রাসূলে মৃত্যুকে বলা হয়েছে স্বাদ-বিনাশকারী।
অর্থাৎ মৃত্যু হলো, পার্থিব স্বাদ-বিনাশকারী। তারপর যে অবস্থাগুলো আসছে, কবর, হাশর, মীযান, পুলসিরাত — এক এক করে — সেগুলো আরো গুরুতর।
যারা দুনিয়ার জীবনটি হেলায় হারাবে তাদের জন্য আর মুক্তি নেই! তাদের জন্য মৃত্যু পার্থিব স্বাদ-বিনাশকারী হওয়ার পর আরও গুরুতর বিষয় আসছে, আর থামছে না। কবরের আযাব, হাশরের দুর্ভোগ, জাহান্নামের বিভীষিকাময় শাস্তি … আল্লাহ আমাদেরকে সুরক্ষা করুন! আমীন। মৃত্যু নাফরমানদের জন্য কেবল পার্থিব স্বাদ-বিনাশকারী নয়, পরকালীন চিরস্থায়ী বিষাদ ও যন্ত্রণা আনায়নকারী! আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দিয়েছেন:
وَمَن يَعْصِ اللّهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُّهِينٌ
যে কেউ আল্লাহ ও রসূলের অবাধ্যতা করে এবং তার সীমা অতিক্রম করে তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সে সেখানে চিরকাল থাকবে। তার জন্যে রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। সূরা নিসা: ১৪
একজন ঈমানদারের জন্যও মৃত্যু পার্থিব স্বাদ-বিনাশকারী বটে, কিন্তু পরকালীন চির শান্তি, সুখ ও স্বাদ উন্মোচনকারী আলহামদুলিল্লাহ! এরশাদ হচ্ছে:
وَالَّذِينَ آمَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّالِحَاتِ سَنُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا لَّهُمْ فِيهَا أَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ وَنُدْخِلُهُمْ ظِـلاًّ ظَلِيلاً
আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, অবশ্য আমি প্রবিষ্ট করাব তাদেরকে জান্নাতে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহর সমূহ। সেখানে তারা থাকবে অনন্তকাল। সেখানে তাদের জন্য থাকবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্ত্রীগণ। তাদেরকে আমি প্রবিষ্ট করব ঘন ছায়া নীড়ে। সূরা নিসা: ৫৭