Dark Mode Light Mode

সঠিক পথের সন্ধান-২

জাগতিক কোনো লক্ষ্য অর্জনে অনেক ক্ষেত্রে যে পরিমাণ দোআর আশ্রয় নেয়া হয়, কত বড় আফসোসের কথা – হেদায়াতের পথ অনুসন্ধানে দোআ তেমনভাবে করা হয় না।

বর্তমানের এই ফেতনার সময়ে যদি কারো মধ্যে প্রশ্ন, বিশেষত: বিভ্রান্তি ও জটিলতার সৃষ্টি হয় তার উচিত হেদায়াতের পথ অন্বেষণে নিজের চিন্তা-চেতনা, গবেষণা-প্রচেষ্টা, নিজ ইচ্ছাকে প্রাথমিকভাবে পরিত্যাগ করে, সম্পূর্ণরূপে আল্লাহ তাআলার দিকে মনোযোগী হওয়া; আল্লাহ তাআলার কাছে সঠিক পথ চাওয়ার মাধ্যমে নিজেকে বিলীন করে দেয়া। এই আন্তরিক চাওয়া তথা দোআ-র ফলে ইনশাআল্লাহ সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও বিভ্রান্তি দূর হবে; নিরেট সত্য তার সামনে দিনের আলোর চেয়েও অধিক উদ্ভাসিত হবে। তারিখে বাগদাদ ও কানযুল উম্মালে উল্লেখিত সেই পবিত্র দোআ-টি এ ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য:

اللّهمَّ إِنَّ قُلُوْبَنَا وَنَوَا صِيَنَا وَ جَوَارِحَنَا ِبيَدِكَ، لَمْ تِمَلِّكْنَا مِنْهَا شَيئًا، فَاِذَا فَعَلْتَا ذاِلكَ ِبنَا َفكُنْ أنْتَا وَلِيُّنَا، وَاهْدِنَا إِلى سَوَاءِ اسَّبِيْلِ

অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের অন্তর, আমাদের হাত-পা, আমাদের আপাদমস্তক সারা শরীর তোমারই হাতে, তোমারই করতলগত – এর কোনোটির মালিকই আমরা নই; যখন অবস্থা এই, কাজেই এখন তোমার কাছে দোআ চাই যে, তুমিই আমাদের সহায় সাহায্যকারী হয়ে গিয়ে, আমাদের হাত-পা দ্বারা হেদায়াতের কাজ করিয়ে নাও এবং সৎবুদ্ধি দান কর। (আমীন)

আল্লাহ তাআলা স্বয়ং সূরা ফাতেহার (যে সূরাকে উম্মুল-কুরআনও বলা হয়) মাধ্যমে হেদায়াতের পথ চাওয়ার ও সেই পথ চলার দোআ শিখিয়ে দিয়েছেন। সব নামাযেই প্রত্যেক রাকআতে সূরা ফাতেহা পড়ার মাধ্যমে বান্দা সব বিষয়ে হেদায়েত তথা সঠিক পথে চলার তাওফীক চাচ্ছে – সেই দোআ ব্যাপক অর্থবোধক ও সব দোআ-র সার। চিন্তা-চেতনা, চেষ্টা-তদবীর, কাজ-কর্ম, সব বিষয়ে বান্দা আল্লাহ তাআলার পূর্ণ সাহায্যের আবেদন করছে। প্রশ্ন হল, বান্দা তারপরও পথ পায় না কেন? উত্তর হল: বান্দা পথই খুঁজে না! নিজের কাছে যে পথ ভালো মনে হয় সেই পথ অবলম্বন করে আর সাথে শুধু মুখে اهدنا الصراط المستفيم (আমাকে হেদায়াতের পথে চালাও) বলতে থাকে(!) — বান্দা চলবে নিজের মন মত পথ আর চাইবে সীরাতে মুস্তাকীম, তা তো আর হয় না।

সত্যিকার আত্মসমর্পণ না করে বুদ্ধি যেটা ভালো বলবে তার উপরই আস্থা স্থাপন বোকামি বৈ কিছু নয়। হালাল-হারামের মত স্পষ্ট বিষয়কে যখন মুমিন বান্দা উপেক্ষা করে তখন বান্দা হাজার বার সূরা ফাতেহা পড়েও যদি বঞ্চিত থাকে, অবাক হওয়ার আর কী আছে? যে কথাটি উল্লেখ হয়েছে পূর্বে, দোআকে উপেক্ষা করে, জ্ঞান-বুদ্ধি-গরিমাকে বিসর্জন না দিয়ে, বরং এগুলোর ভিত্তিতে নিজে নিজে গবেষণা করে যখন পথের সন্ধান করা হয়, তখন আসলে সঠিক পথ তো মিলেই না, বক্র চিন্তার অবলম্বনে বক্র পথ পাওয়ার আশঙ্কা বেশি – শয়তান তখন মানুষকে ভুল পথে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। “আমাকে হেদায়াতের পথে চালাও” অর্থ কী? আমার পথে আমি চলব, নাকি তোমার পথে তুমি (আল্লাহ তাআলা) আমাকে চালাবে?!

আজ উম্মাহর মাঝে অনেক জ্ঞান-পাপীদের যে ফেতনা, তার প্রকৃষ্ট কারণ ও উদাহরণ এটাই। তারা আল্লাহ তাআলার কাছে নত হওয়া, আন্তরিকভাবে দোআ চাওয়া ও মেনে নেয়ার বিষয়কে উপেক্ষা করে সঠিক পথ নিজেরাও পায়নি; অন্যদেরকেও “নিজের গবেষণালব্ধ” ভুল পথে পরিচালিত করার প্রয়াস পেয়েছে। বুদ্ধি প্রয়োগ ও গবেষণার ক্ষেত্রে তারা اهدنا الصراط المستفيم (আমাকে হেদায়াতের পথে চালাও) দোআকে উপেক্ষা করেছে। ফলশ্রুতিতে, তাদের কেউ সলফে সালেহীনগণ-কে দোষারোপ করার মত স্পর্ধা করেছে, কেউ বা সমসাময়িক উলামা-মাশায়েখগণের দোষচর্চায় লিপ্ত হয়েছে; দ্বীনের খুঁটিনাটি বিভিন্ন বিষয়ে তারা কথা বলেছে; মন্তব্য ছুঁড়েছে, কেউ বা আরও ভয়াবহ কোনো সীমালঙ্ঘনও করে বসেছে। আল্লাহ তাআলার সাহায্য চাওয়াকে উপেক্ষা করে এবং শুধু একা একা গবেষণা করে দ্বীন বোঝার এই হয়েছে ভয়াবহ ফল।

—————————————————-

* সঠিক পথ অবলম্বনের প্রাথমিক পর্যায়ে নিজ-গবেষণা ও মন-মস্তিষ্ক খাটানো অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, বরং দোআ অনেক সহজ ও ফলপ্রসূ, বরং জরুরি (কারণ যেখানে বিভ্রান্তি সেখানে বুদ্ধি খাটানোর চেয়ে শুধুই আল্লাহ তাআলার কাছে পথ চাওয়াই কি বিবেকের দাবি নয়!? নিজ চিন্তা-গবেষণার মাঝে শয়তান ও নফস-এর দখল খুবই আশঙ্কা। সঠিক পথ পেয়ে গেলে চিন্তা-গবেষণাও সঠিক পথে ধাবিত হবে, তখন দোআর সাথে যার যার সীমার মধ্যে চিন্তা-চেষ্টা-গবেষণাও ফলদায়ক হবে ইনশাআল্লাহ।

**সব গবেষণা মন্দ নয় আবার সবার গবেষণাও এখানে উদ্দেশ্য নয়। যারা প্রাথমিকভাবে দ্বীন শিক্ষা অর্জন করেনি, নিজে নিজে গবেষণা করে, অর্থাৎ কেবলমাত্র মস্তিষ্ক খাটিয়ে দ্বীন-ইসলামকে বোঝার সাধনায় লিপ্ত হয়ে দ্বীনি সিদ্ধান্তে উপনীত হয় তাদের “হেদায়েত-চ্যুত” গবেষণা এখানে উদ্দেশ্য।

আমাদের সকল আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন!

By pressing the Subscribe button, you confirm that you have read and are agreeing to our Privacy Policy and Terms of Use
Add a comment Add a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous Post

বিদায় রমযান: কিভাবে কাটাবো বাকিটা বছর

Next Post

সঠিক পথের সন্ধান-১