Dark Mode Light Mode

আসুন এ অবস্থাকে রহমতের মাধ্যম বানাই – ৩

জাগতিক বিপদাপদগুলো পরীক্ষারই অন্তর্ভুক্ত এবং এগুলোর মৌলিক কারণ আমাদেরই গুনাহ, কিন্তু দয়াময় আল্লাহ এটাও বলে দিয়েছেন যে, আমাদের জন্য এসব অবস্থা তাঁর আদেশের দিকে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ। দেখুন এ আয়াত কী বলছে:

অর্থ: মানুষ নিজ হাতে যা কামাই করে, তার ফলে স্থলে ও জলে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে, আল্লাহ তাদেরকে তাদের কতক কৃতকর্মের স্বাদ গ্রহণ করাবেন বলে, হয়ত (এর ফলে) তারা ফিরে আসবে। সূরা রূম – ৩০:৪১

আল্লাহ তাআলা বলছেন, হয়ত তারা ফিরে আসবে। অতএব, আবারও বলছি, আমাদের জন্য এই একটি কাজই করণীয়: আল্লাহ তাআলার আদেশের দিকে ফিরে যাওয়া।

একটি বিষয় চিন্তা করুন। বিপদাপদে, প্রতিকূল অবস্থায়, সঙ্কটে সবচেয়ে বেশি কাজে দেয় কী?

হ্যাঁ, ঈমান ও নেক আমল। ঈমান ও নেক কাজের চেয়ে উত্তম সঙ্গী এ সময় আর কী? মানুষ বিপদের জন্য টাকা-পয়সা, খাওয়া-খাদ্য যত কিছু সংগ্রহ করে রাখুক না কেন, কেবল ঈমান ও নেক কাজই আমাদের সব অবস্থার রক্ষাকবচ। প্রতিকূল অবস্থায় ঈমানদার বান্দা তা আরও স্পষ্টভাবে অবলোকন করে নিক, এটা যেন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একটি বিশেষ নিদর্শন। তাঁর প্রতিটি কাজ অশেষ হেকমতপূর্ণ।

প্রতিকূলতা দেখে কাফের কত হিসাব-নিকাশে লেগে যাবে। সবই বস্তু কেন্দ্রিক। পার্থিব আমদানি কেন্দ্রিক। সে নানান চিন্তায় মগ্ন হয়ে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হবে, পরিস্থিতি অনুকূল হলে এবার সে বস্তুজগতকে আরো উন্নত করে সাজাবে! কাফেরদের এ চিন্তার মতন কি মুমিনদের চিন্তা হবে?

কখনো নয়। তার কাছে তো পার্থিব জীবনের বাস্তবতার খবর আছে। দুনিয়ার হাল-হাকিকত, পরিবর্তন-পরবর্ধন তো তার ঈমান বিল গায়েবকে আরো মজবুত করে। বস্তু জগতের আস্থা থেকে তো তার আস্থা আরও বেশি আল্লাহমুখী হয়ে যায়। পার্থিব জীবনের নশ্বরতার বিশ্বাস তার অন্তরে আরও ভালোভাবে জেঁকে বসে। দুনিয়ার সঞ্চয়-আমদানিকে সে আরো হীন চোখে দেখে। সবকিছুর মালিকের দিকে তার অন্তর আরো বেশি ঝুঁকে পড়ে।

এইতো হল কাফের ও মুমিনের চিন্তা-চেতনার সুস্পষ্ট পার্থক্য। যা তাদের কাজের ওপরও পুরোপুরি প্রভাব ফেলে। তাদের গন্তব্য ভিন্ন, তাই তাদের পথ ভিন্ন, ভিন্ন তাদের পন্থাও।

আমাদের প্রত্যেককে এখন মুরাকাবা ও মুহাসাবা করে আল্লাহ তাআলার পথে অগ্রসর হতে হবে। এটা সব সময়ই উচিৎ, কিন্তু এখন নিজ ঈমান ও আমলকে পরীক্ষা করার ও তাজা করার সুবর্ণ সুযোগ! পরিশুদ্ধ করার সুবর্ণ সুযোগ।

পার্থিব মাল-দৌলত-সহায়-সম্পত্তির চাহিদাকে অস্বীকার করছি না আমরা। কিন্তু এগুলোর ভালোবাসা আর মায়াকে এত গুরুত্ব দেওয়া যাবে না যত গুরুত্ব দিতে হবে ইবাদত-বন্দেগীকে। যেসব জাতির আখেরাত নেই, তাদের মতন তো আর আমরা হতে পারি না?!

এ সুযোগে পরিশুদ্ধ হতে পারলে দ্বীন-দুনিয়ার সব অভাব আল্লাহ তাআলাই দূর করে দেবেন ইনশাআল্লাহ। তাঁর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখুন। তাঁর পথেই চলবেন, মনকে সুদৃঢ় করে নিন। এই পুরো জগত তাঁরই কব্জায়, তাঁরই অনুগত। অতএব, আমরা যা চাই বা যে পথেই চেষ্টা-তদবীর করি, সবই আল্লাহ তাআলার দিকে ফিরবে এবং সমস্ত ফলাফল তাঁর আদেশেই আসবে। সুপরিণতি মুত্তাকীদের জন্যই।

পরিশেষে, আমরা সূরা হুদ যে আয়াতটি দিয়ে সমাপ্ত হয়েছে, তার তরজমা দিচ্ছি। পড়ুন, আর চিন্তা করুন!

অর্থ: আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যত গুপ্ত রহস্য আছে, তার সবই আল্লাহর জ্ঞানে রয়েছে, এবং তাঁরই দিকে যাবতীয় বিষয় প্রত্যানীত হবে। সুতরাং (হে নবী!) তাঁর ইবাদত করুন এবং তাঁর উপর নির্ভর করুন। তোমরা যা কিছু কর, তোমার প্রতিপালক সে সম্পর্কে অনবহিত নন। সূরা হুদ – ১১:১২৩

আমাদের সকল আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন!

By pressing the Subscribe button, you confirm that you have read and are agreeing to our Privacy Policy and Terms of Use
Add a comment Add a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous Post

আসুন এ অবস্থাকে রহমতের মাধ্যম বানাই - ২

Next Post
সালাতুত তাসবীহ - একটি বিস্ময়কর আমল

সালাতুত তাসবীহ - একটি বিস্ময়কর আমল