আমরা সাধারণত মূল লক্ষের প্রতি দৃষ্টি না দিয়ে গৌণ বিষয়ের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখি। তখন আমাদের অস্থিরতা বাড়ে, চিন্তা দুশ্চিন্তার রূপ নেয়।
যেমন মনে করুন, আপনি কোথাও রওনা দিয়েছেন, যাচ্ছেন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে। আপনার হাতে সময় কম। রাস্তায় কোনো কারণে বিলম্ব হচ্ছে। হাতে সময় নিয়ে বের হয়েছেন ঠিক মতনই, কিন্তু রাস্তায় কোনো কারণে আটকে আছেন। আপনি এখন কিছুই করতে পারছেন না। কারণ, আপনার সাধ্যে যে কাজটি ছিল সেটা আপনি করেছেন। এখন কোনো উপায় নেই। রাস্তায় আটকা পড়েছেন। এ অবস্থায় কি আপনি অন্যায় ও অপ্রয়োজনীয় কিছু করবেন? সুস্থ বিবেকের দাবি এটাই যে, ধৈর্য নিয়ে বসে থাকতে হবে। না আপনি পাগলপাড়া হয়ে এগুতে পারেন, না আপনি হাল ছেড়ে দিয়ে পিছু হটতে পারেন। ধীর-স্থির হয়ে যেভাবে বসে আছেন এটাই করা যায় ও করতে হবে। যে অস্থির হবে সে কাউকে দোষারোপ করবে, কোনো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের পেছনে পড়বে। কিন্তু এসব করার মাধ্যমে স্বস্তি মিলবে না। এতে বরং তার অস্থিরতা বাড়তে পারে!
দেখুন, মানুষ যখন নিজেকে অনন্যোপায় মনে করে, তখন সে প্রায়ই এই কথা বলে ইতি টানে, এটা আমার ক্ষমতা ও সাধ্যের বাইরে, এখন আমার আর কিছুই করার নেই। শুধু এ কথাটির উপলব্ধি তাকে অনেক অপ্রয়োজনীয় চিন্তা থেকে দূরে রাখে। তখন একটা স্বস্তির শ্বাসও সে নেয় – যেখানে তার করার কিছুই নেই সেখানে আর কেন অনর্থক ভাবনা?!
আমরা মানুষ – আল্লাহ পাকের বান্দা। অনেক বিষয়ই এমনিভাবে আমাদের সাধ্যের বাইরে। শুধু এ বিশ্বাস আমাদেরকে সুমহান রবের কাছে মাথা নত করতে সাহায্য ও বাধ্য করে। সীমার মধ্যে চেষ্টা-তদবীর করার সাথে এটাই মানুষের করণীয়। আল্লাহ পাকের কাছে আত্মসমর্পণেই প্রকৃত সফলতা। প্রতিটি কাজে আল্লাহ তাআলার প্রতিই আমাদের দৃষ্টি রাখা উচিত। সব অবস্থা ও বিষয়কে তাঁর হুকুমের অধীন রাখাই আমাদের দায়িত্ব। তাঁর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখার মধ্যেই নিহিত রয়েছে অন্তরের শান্তি ও স্বস্তি।
ইব্রাহীম عَلَيْهِ ٱلسَّلَامُ এর ত্যাগ ও ভালোবাসা এ শিক্ষাতেই পূর্ণ। হজ্ব ও কুরবানী আমাদেরকে এ কথাটিই স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আমি আল্লাহর গোলাম। রবের গোলামি করা আমার জীবনের মূল কাজ, মূল লক্ষ। কবি বলেন,
আমাকে কেউ পাগল বলে, কেউ বলে বুযূর্গ – এগুলোতে (আমার) কোনো মনোযোগ নাই। আমি যাঁর গোলাম তাঁকে ডাকছি, তিনি সাড়া দিচ্ছেন; ভরসা এটাই। তাঁর ডাকে সাড়া দিতে আমি উদগ্রীব তাই। তিনি যা বলেন – সেটাই। আমার আর কিছু জানা নাই।