ঈমান ও আক্বীদা

মুমিনের নিয়ত, চেষ্টা ও ​চিন্তাধারা: মৌলিক কিছু বিষয়​

যখন কোনো বান্দা আল্লাহ পাকের ইবাদত শুধু মাত্র পার্থিব কোনো স্বার্থে করতে থাকে, তখন এমন হওয়ার খুব আশঙ্কা থাকে যে, ঐ পার্থিব স্বার্থ অর্জন না হলে সে ইবাদত ছেড়ে দিয়ে আল্লাহ পাকের অকৃতজ্ঞ হয়ে বসে।

ইবাদত আল্লাহ পাকের হক। আমরা যখন যে অবস্থায় থাকি, আমাদের জন্য জরুরি হল আল্লাহ পাকের আনুগত্য করা। জায়েয কোনো পার্থিব জিনিস তাঁর কাছে চাওয়াটা দূষণীয় নয়। কিন্তু সেটাকেই ইবাদতের উদ্দেশ্য বানানো বা শর্ত যুক্ত করা যে, আমার এ কাজ হলে বা এ জিনিস হাসিল হলে আমি আল্লাহর পথে চলব – এমন চিন্তা-চেতনা নিতান্তই হীন।

বান্দা তার চাওয়া-পাওয়াকে যদি আল্লাহ পাকের সোপর্দ না করতে পারে, তাহলে সে কেমন বান্দা? মূলত বান্দার সবকিছুতো আল্লাহ পাকের অধীনই। দুনিয়াতে পরীক্ষা হল, এটাকে বিশ্বাস করে আল্লাহ তাআলার প্রতি বান্দার আনুগত্য কতটুকু করা হচ্ছে – সেটা দেখা।

কাঙ্খিত বস্তু না পেলে মনের মধ্যে যদি একটু বা বেশিও কষ্ট লাগে, তবুও মুমিনের বৈশিষ্ট্য হল, আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টিকেই প্রাধান্য দেয়া, তাঁর দিকে ঝুঁকে যাওয়া। এটাই সবর। এঁর মাধ্যমে বান্দা মনে করে যে, আল্লাহ আমার জন্য “এই না দেয়ার” মাঝেই কোনো মঙ্গল রেখেছেন যেটা আমি এখন বুঝতে পারছি না। এবং এটাই সত্য। এ চিন্তা করার কারণে মুমিনের অন্তর প্রশান্তিতে ভরে যায়। কারণ মালিক যা তার জন্য মঙ্গল – সেটাই করেছেন। এ বিশ্বাস তার আরো পোক্ত হয়। ফলে আল্লাহ পাকের আরো নৈকট্য অর্জিত হয়। খুব শীঘ্রই এও দেখা যায় যে, পার্থিব উন্নতি এবং সফলতা তার পদচুম্বন করছে। পার্থিব উন্নতি এবং সফলতা অর্জনের যে সূত্র বিজাতিরা দেয় বা আমরা কখনো কখনো মনে করে বসে থাকি, সেটা আসলে ভুল। আল্লাহ পাককে মেনে চলার পথেই দ্বীন ও দুনিয়ার বাস্তব ও পরিপূর্ণ সার্থকতা নিহিত রয়েছে। আমাদের মন-মস্তিষ্ক প্রায়ই এটা বুঝে না। কারণ পার্থিব যুক্তিতর্কে কোনো বিষয়ের ফলাফল অন্যরকম বলেই মনে হয়। আর ঈমানের দাবি হয় সম্পূর্ণ বিপরীত। উদাহরণস্বরূপ দেখুন, আল্লাহ পাক ও তাঁর রাসূল ﷺ আমাদেরকে বলছেন, দান করলে কমে না, বরং দান করলে অর্থ-সম্পদে বরকত হয়। কিন্তু একজন অমুসলিম এটা কিভাবে গ্রহণ করবে? তার কাছেতো এটা বিশ্বাস করার মূল চাবিকাঠি ‘ঈমান’-ই অনুপস্থিত। তাই তার সিদ্ধান্ত হল, দানের মাধ্যমে অর্থ-সম্পদ কমে যায় – যেটা বাহ্যত দৃষ্টিগোচর হয় – ততটুকুতেই তার দৃষ্টি থাকে সীমাবদ্ধ।

মুসলমান হওয়ার জন্যই আমাদের চিন্তাধারা, সিদ্ধান্ত ও প্রচেষ্টার পন্থা আল্লাহ পাকের প্রদত্ত বিধান অনুযায়ী হতে হবে। যে কিনা বাদশাহের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে যে, আমি আপনার আনুগত্য করব, তার সাথে বাদশাহের আচার-আচরণ হয় এক নীতিমালার। যে কিনা বাদশাহের সাথে কোনো চুক্তিবদ্ধ হয়নি, তার সাথে বাদশাহের আচার-আচরণের নীতিমালা হয় ভিন্ন। দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষকে বাদশাহ কোনো অবকাশ দিয়ে থাকলে কি প্রথম শ্রেণির মানুষ বাদশাহের আনুগত্য এজন্য বন্ধ করে দেবে যে, আরে আমিও তো এমন বল্গাহীন চললে নগদ এইসব সুবিধা ভোগ করতে পারব(?!) প্রথম শ্রেণির মানুষ হল মুসলমান, যে কিনা আনুগত্যের মাধ্যমে আল্লাহ পাকের চির সন্তুষ্টির অন্বেষায়। আর দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ হল অমুসলমান, যে কিনা বর্তমান অবকাশকে প্রাধান্য দিয়েছে আল্লাহ পাকের চির সন্তুষ্টিকে জলাঞ্জলি দিয়ে।

Last Updated on February 14, 2023 @ 3:18 pm by IslamInLife

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: you are not allowed to select/copy content. If you want you can share it