দ্বীনের পথে ক্রমোন্নতির প্রচেষ্টা
বান্দা ঈমানে-আমলে অগ্রসর হওয়ার বিষয়ে সদা সর্বদা সচেষ্ট থাকবে। তার গতকালের চেয়ে আজ, আজকের চেয়ে আগামীকাল ও আগামীকালের চেয়ে পরশু দিনটি যেন আরও উন্নত হয়, আরও সমৃদ্ধ হয় – এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।মুসলমান হতে পেরেছি বলে ক্ষান্ত হয়ে পড়লে হবে না। যদি ঈমান ও ইসলামের উন্নতির জন্য প্রচেষ্টা থেকে যায়, তাহলে কেমন আল্লাহর বান্দা হলাম আমরা?!
পার্থিব অবস্থা ও আখেরাতের অবস্থার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য। এই বিষয়টি বিস্মৃত হলে চলবে না।
ইহ-লৌকিক জীবন সসীম; পারলৌকিক জীবন হল অসীম।
পার্থিব জীবনে সুখ-শান্তি, দুঃখ-কষ্ট মিলেমিশে আছে। এই জীবনে কেউ পূর্ণমাত্রায় শান্তিতে নেই, কেউ পূর্ণমাত্রায় কষ্টেও নেই। এখানে মানবজীবন বড় অদ্ভুত, বড় বৈচিত্র্যময়! কাল-বৈশাখীর মত জীবনে ঝড় আছে, হঠাৎ ঝড় থেমে পরিবেশ একদম শান্ত হয়ে যাচ্ছে। আবার বাতাস বইছে, মেঘ জমছে, বৃষ্টি হচ্ছে, আবার মেঘ কেটে গিয়ে বৃষ্টি থেমে রোদ উঠছে। এভাবে মানবজীবনে মরুর শুষ্কতা-রুক্ষতা আছে, আছে মেরুর প্রচন্ড শীত – তুষারপাত। বৈশাখের মত ঝড়ো হাওয়া আছে, এর বিপরীতে আছে বসন্তের মৃদু বাতাস ও স্নিগ্ধতা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এরকম পরিবর্তন আসতেই থাকে।
সুস্থতা-অসুস্থতা, দুঃখ-কষ্ট-ক্লেশ, সুখময় সময়, বিপদাপদ ঘূর্ণিবাত্যার মত আসে আর যায়। এই মানুষ স্বপ্ন দেখছে, কখনো তা বাস্তবায়ন হচ্ছে। এই কিছু পেতে যাচ্ছে – হঠাৎ সব হয়ত হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। মানুষের চিন্তা-চেতনার মধ্যে আজ এক অবস্থা, তো কাল আরেক। …এসবের মাঝে মানুষের ছুটোছুটিও চলছে অনবরত! শরীর তো শরীর, মন পর্যন্ত কখনো দুনিয়ার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে যাচ্ছে। কত রকম চিন্তা, চেষ্টা, স্বপ্ন, কল্পনা, আশা-আকাঙ্ক্ষা! অথচ সব বাস্তবায়িত হচ্ছে, এমন নয়। অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। মানুষ কত কিছু চায়, কিন্তু পায় কতটুকু? কত কিছু না চাইতেও আবার পেয়ে যায়! একটু চিন্তা করলে বুঝে আসে, আসলে খুব এবং খুবই কম জিনিস মানুষের নিয়ন্ত্রণে।
মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব কীসে – এটা না বুঝলে জীবনটি* এই ঘূর্ণিবাত্যার মধ্যে পড়ে একদিন শেষ হয়ে যাবে। মহামূল্যবান জীবন নামক সম্পদ একেবারে বিনষ্ট হয়ে খড়কুটার চেয়েও বেদামী হয়ে বিলীন হয়ে যাবে।
দেখুন আল্লাহর সত্যবাদী রাসূল ﷺ যথার্থই বলেছেন (হাদীসের মর্মার্থ), বুদ্ধিমান হল সে যে কিনা মৃত্যুর আগেই তার প্রস্তুতি নিতে থাকে। এই মাপকাঠিতে বর্তমানে দুনিয়াতে সবচেয়ে ধনী, শিক্ষিত, ক্ষমতাবান জাঁদরেলদের বেশিরভাগই বোকা সাব্যস্ত হবে। এবং সত্য এটাই! এ মাপকাঠিতে আমরা মুমিনরাও ক’জন বলতে পারব, আমি বোকা নই(?)! মৃত্যুর জন্য আমরা নিজে কতটুকু প্রস্তুত হচ্ছি? কবি বলেছেন:
সূত্র খুবই স্পষ্ট ও পরিষ্কার। আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল ﷺ-কে পরিপূর্ণরূপে বিশ্বাস করতে হবে। চিন্তা, কথা ও কাজে আখেরাতকে প্রাধান্য দিতে হবে। আখেরাতকে প্রাধান্য দিলে পার্থিব জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। মুমিন এটা খুব ভাল করে জানে যে, তকদীরে যা আছে সেটা কেউ রদ করতে পারবে না। যে ব্যক্তি যত যত্ন সহকারে আখেরাতের চিন্তা করে তার জন্য দুনিয়ার অপ্রয়োজনীয় বস্তু পরিত্যাগ করা তত সহজ, তার আমল তত সুন্দর, সে তত বেশি দ্বীনের পথে অগ্রগামী। তার অবস্থা আসলেই এমন যে, হাত-পা দুনিয়ার কাজে ব্যস্ত হলেও অন্তর আল্লাহর সাথে লাগা; দুনিয়ার কাজ তারই দ্বীন! আযান হলে সেটা বোঝা যায়, গুনাহর আহবান সামনে আসলে সেটা ফুটে উঠে।
———————————————————–
* পৃথিবীতে একবারই জন্ম, একবারই মৃত্যু। একটিই জীবন, একটিই সুযোগ।