আখলাক ও আত্মশুদ্ধি

সৃষ্টির প্রতি সদাচরণ

প্রিয় নবীজি ﷺ আমাদেরকে মানুষের প্রতি ভালো ব্যবহারের নসীহত করেছেন ও শিক্ষা দিয়েছেন। কেউ আমাদের প্রতি খারাপ আচরণ করলে পর্যন্ত তার প্রতি উত্তম আচরণ করতে বলা হয়েছে। ইসলামে সৃষ্টির প্রতি উত্তম আচরণের সুমহান শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ!

আজ সমাজে যত মনোমালিন্য, যত লাগালাগি, যত ঝগড়াঝাটি সবই ইসলামী শিক্ষা ও দীক্ষা থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে। বড় বড় কারণ যদি হিসাবে আনা নাও হয়, ছোটখাটো বিষয়াদি, যেমন: একটু ব্যক্তিগত স্বার্থে আঘাত লাগলে আমরা অন্যকে যে হেয় করি; মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর সম্পর্ক ছেদ করি; কথা বন্ধ রাখি; অন্যের বিরুদ্ধে সমালোচনা করতে থাকি – এগুলো উম্মাহর মধ্যে বিচ্ছেদ-বিচ্ছিন্নতা জন্ম দেয়। বিদ্বেষ, গীবত, মিথ্যা অপবাদের মত বড় বড় গুনাহ সংগঠিত করায়।

আমরা নিজেদের আখলাক পরিশুদ্ধ করা বলতে যদি কেবল নামাযের পাবন্দী করা, দাড়ি-টুপি, ইসলামি পোষাক পরিধান আর দান-সাদকা করা ও দ্বীনি বিভিন্ন খিদমত/কাজ আঞ্জাম দেওয়া এবং উলামাদের শ্রদ্ধা করা বুঝি তাহলে বড় ভুল হবে। দেখা দরকার: বাসা-বাড়িতে, কর্মস্থলে ও দৈনন্দিন চালচলনে সবার সঙ্গে আমাদের আচার-ব্যবহার কেমন? এই বিষয়ে প্রত্যেকে যে যার হিসাব নেওয়া অতীব জরুরি। বিশেষ করে আমার লক্ষ করতে হবে যে, আমার অধীনস্থরা আমার ব্যবহার ও আচরণে সন্তুষ্ট কি না? তাদের প্রতি আমি কোনো অন্যায় ও জুলুম করছি না তো!

যদি আমরা আল্লাহ তাআলার বান্দা তথা সৃষ্টির সাথে মন্দ আচরণ করি, তাদের উপর জুলুম করি, তো অনেক ইবাদত, দ্বীনি কাজ করেও আল্লাহর দরবারে শাস্তির উপযুক্ত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। দ্বীনি এই সুরত-শেঁকেল (বাহ্যিক অবয়ব) আর সব ইবাদত বেকার হওয়ার বড় হুমকি রয়েছে। আল্লাহ তাআলা আমাদের মাফ করুন, রক্ষা করুন। হাদীসে পাকে আছে, শুধু একটি বিড়ালকে বেঁধে রেখে তাকে না খাওয়ার কষ্ট দেওয়ার কারণে এক মহিলা জাহান্নামি সাব্যস্ত হয়। প্রত্যেকে দেখি, আমি এমন কোনো কাজ করছি না তো যার ফলে আল্লাহ তাআলার শাস্তির উপযোগী হয়ে পরছি আমি?!

স্বভাবগতভাবে মানুষের নিজের দোষ নিজের চোখে ধরা পড়ে নঢ়। যদিওবা পড়ে থাকে, খুব কম পড়ে থাকে। ইল্লা মাশাআল্লাহ কিছু নেক আল্লাহর বান্দার কথা ভিন্ন। আমাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষের অবস্থা হল, নিজের দোষ দেখিয়ে দিলেও স্বীকার করতে চাই না। অথচ কেয়ামতের দিন সব মানুষের সামনে আমাকে লাঞ্ছিত হতে হবে — আমরা এই চিন্তা করে দুনিয়াতেই সংশোধন হয়ে নিই না! সৃষ্টির প্রতি সদাচরণ নেক আখলাকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কুরআন হাদীসের আলোকে এ কথা স্পষ্ট যে, নেক আখলাকের গুণেই বহু মানুষ জান্নাতবাসী হবে। আর দুঃখের বিষয় হল, নফল ইবাদতকে প্রাধান্য দিতে গিয়েও আমরা আমাদের আচার-আচরণকে খারাপ করে বসি। যেখানে কিনা মানুষেরে সঙ্গে উত্তম আচরণের স্বার্থে ওয়াজিব আমলের মধ্যে ছাড় দেওয়ার কথা দ্বীন শিক্ষা দিচ্ছে, সেখানে আমরা মানুষের সঙ্গে আচার-আচরণকে চরম উপেক্ষার বিষয় মনে করে উড়িয়ে দিচ্ছি! দেখুন, রোগীর সেবার জন্য যদি বাসায় আর কেউ না থাকে, অথবা বিশেষ কারণে বাসার মানুষের যদি খুব ভয়-ভীতির সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে, এসব অবস্থায় জামআতে নামায তরক করে পুরুষকে বাসায় নামাযের সুযোগ দিয়েছে শরীয়ত, বরং জামআত তরক করে বাসায় সালাম/নামায আদায় এসব ক্ষেত্রে উত্তম।

————————————————————————————–

* তাই বলে অবশ্য শরীয়তের হুকুম নষ্টকারীর সাথে আপোষ, বা সুস্পষ্ট দ্বীন বিদ্বেষীদের সাথে মীমাংসা করতে বলা হয়নি।

Last Updated on November 20, 2023 @ 7:46 am by IslamInLife

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: you are not allowed to select/copy content. If you want you can share it