সহজ আমল

প্রস্তুতি নিয়ে নেক আমল-২

যখনই কোনো নেক আমলের সুযোগ আসে, যত শীঘ্রই ওই নেক আমলটি সমাধান করা হবে, তাতেই বরকত, তাতেই সাফল্য। যখনই টাল-বাহানা হবে, তখনই তা বিলম্বিত হবে এবং যত বেশি বিলম্বিত হবে, তত সেই কাজটি “আর কখনো না হওয়ার” আশঙ্কা বেড়ে যাবে।

টাল-বাহানা শুরু হওয়ার খুব বড় ধোঁকাটি আসে “ভালোো করে প্রস্তুতি নিয়ে নিই, তারপর করব” — এই জাতীয় কথা থেকে। তারপর যেটা হয়, ঐ “তারপর” আর আমাদের জীবনে আসে না। যে কোনো “কাযা” কাজ আদায় করতে “ভার” বেশি অনুভূত হয়। তাই জীবনটা রুটিন করে অতিবাহিত করা উচিত। অন্তত যে কাজ যত বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেটা আগে সারা উচিত।

প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করতে মন অধিক আরামবোধ করে সত্য। মন এই দাবী করে যে, একটু ফুরসত পেলে কাজটি শুরু করলে অনেক সুন্দরভাবে আঞ্জাম দেওয়া যাবে। কাজটি সুশৃঙ্খল হবে। কাজের মান ভালো হবে। ফলাফল উন্নত হবে। কথা সত্য। কিন্তু পাশাপাশি এও সত্য ও খুব চিন্তার বিষয় যে, নফস ও শয়তান নেক কাজে বিলম্ব করিয়ে “করতেই দিবে না” – এই আশঙ্কা রয়েছে। কারণ অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে, মনের পরিবর্তন হচ্ছে ক্রমাগত; সময়ও খুব দ্রুত অতিবাহিত হচ্ছে। ঐ হাদীস, যার সতর্কবাণী হল, সুস্থতাকে অসুস্থ হবার আগে, সচ্ছলতাকে দারিদ্র্যের আগে, অবসরকে ব্যস্ততার আগে আর জীবনকে মৃত্যুর আগে মূল্যায়ণ করতে হবে।

আরেকটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আমাদের আমলকে সুন্দর বা উন্নত করার যে নিয়ত ও ফিকির – তা যতই মজবুত হোক, শুরুটা হয় অনুন্নত, সাধারণ ও সাদামাটা ভাবেই। তারপর সেই আমলটি জারি রাখতে থাকলে, ধীরে ধীরে তার মান উন্নীত হয়। একবারে আমল-এর মান মগডালে উঠে না! কিন্তু আমাদের মন এই ধোঁকাটিই আমাদের দেয় – যেইদিন একদম “মচমচে” আমল করতে পারবে, সেইদিনই তো সার্থকতা। অতএব প্রস্তুতি চলতে থাকে জীবনভর, আমলের তৌফিক আর হয় না। আল্লাহ তাআলা আমাদের এমন ধোঁকা থেকে হেফাযত করুন! আমীন।

অভিজ্ঞতায় এটাই দেখা যায় যে, যারা তাসবীহ, তেলাওয়াত, দান-সাদকা অল্প অল্প করে হলেও শুরু করে দেয়, তাদের উন্নতি হতেই থাকে। একবারে অনেক তাসবীহ, অনেক বেশি তেলাওয়াত আর অনেক বড় দান-সাদকা সহজে কারো হয়ে উঠে না। এটা কদাচিৎ হতে পারে; সবসময় না। যা সব সময় করা হয়, তা স্থায়ীও হয়। (হাদীসে, আমল অল্প সম্পাদিত হলেও, সব সময় সম্পাদন করার প্রশংসা ও তাগিদ আছে) আর “অনেক বেশি করার নিয়ত” দিয়ে শুরু করলে প্রায়ই হয়ে উঠে না, তখন মন ভেঙ্গে যায়, হতাশা আসে, নিজের প্রতি, আমলের প্রতিও একটা বিতৃষনা আসে। এটা খুবই দুঃখজনক।

অসুস্থতা, ব্যস্ততা, দারিদ্রতা এগুলো আসুক, তা চাই না। মৃত্যু একদিন আসবেই। কত স্বপ্ন, কত আকাঙ্ক্ষা, কত ইচ্ছা আর নিয়ত নিয়ে মানুষ কবরস্থ হয়। তাই “কাল থেকে নামায পড়ব”, “সামনের বছর থেকে সব রোযা রাখব”, “এর পর আর এই গুনাহ করব না” – এইসব টাল বাহানা এখনি বাদ দিই! আজই অল্প অল্প হলেও নেক আমলে মনোযোগী হই। আল্লাহ! তুমি আমাদের জন্য সহজ কর। আমাদের তুমি তৌফিক দাও। কবুল কর।

Last Updated on June 16, 2022 @ 12:23 pm by IslamInLife

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: you are not allowed to select/copy content. If you want you can share it